ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উৎপাদক, কৃষিজীবী বা স্বল্প আয়ের বিভিন্ন পেশার ব্যক্তিগণ প্রয়োজনীয় সময়ে ঋণ সুবিধা লাভের জন্য কোনো সমবায় সমিতি স্থাপন করলে তাকে সমবায় ঋণদান সমিতি বলে। এরূপ সমিতি সদস্যদের ক্রয়কৃত শেয়ার ও জমাকৃত আমানত এবং প্রয়োজনে সমবায় ব্যাংক বা অন্যান্য ব্যাংক হতে তহবিল সংগ্রহ করে এবং তা থেকে প্রয়োজনমতো সমবায়ীদের ঋণ দেয়। এরূপ সমবায়ের উদ্দেশ্য হলো সদস্যদের সুদি মহাজন ও ঋণদাতাদের হাত থেকে রক্ষা করা ।,
সমবায় সমিতির উপবিধি / উপ-আইন By-laws of a Co-operative Society
যে দলিলে সমবায় সমিতির অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত নিয়ম-নীতি লেখা থাকে তাকে সমবায় সমিতির উপবিধি বলে । এর ওপর ভিত্তি করে সমবায় সমিতি গঠিত ও পরিচালিত হয় বিধায় একে সমবায় সমিতির গঠনতন্ত্রও বলা হয়। সমিতি নিবন্ধনকালে অন্যান্য দলিলের সাথে তিনকপি উপবিধি নিবন্ধকের কাছে জমা দিতে হয় ।
সমবায় সমিতি তার উপবিধিতে বর্ণিত নিয়ম-নীতির বাইরে কোন কাজ সম্পাদন করতে পারে না। তাই এরূপ দলিল প্রণয়নকালে প্রস্তাবিত সমিতির উদ্যোক্তাদের অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হয় । সমবায় একটি আইনসৃষ্ট প্রতিষ্ঠান বিধায় নিবন্ধনকালে সমিতির সাথে এর উপবিধিও নিবন্ধিত হয়েছে বলে ধরা হয় । তাই পরবর্তীতে এর যে কোন পরিবর্তন আইনগত আনুষ্ঠানিকতাপূর্ণ হয়ে থাকে ।
সমবায় সমিতির উপবিধি কেমন হবে তা প্রস্তাবিত সমিতির কার্যধারা ও প্রয়োজনের ওপর নির্ভর করে । অবশ্য উপবিধি এমনভাবে প্রণীত হওয়া উচিত যাতে তা দেশের প্রচলিত সমবায় আইনের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ না হয়।
সমবায় সমিতি বিধিমালা ২০০৪ এর ৮(১) ধারায় বলা হয়েছে প্রত্যেক সমবায় সমিতির উপ-আইনে নিম্নবর্ণিত বিষয়াদি অন্তর্ভুক্ত থাকবে ।
সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির গঠনতন্ত্র :
ক) সমিতির নাম ও ঠিকানা;
খ) সমিতির সদস্য নির্বাচনী এলাকা;
গ) সমিতির কর্ম এলাকা;
ঘ) সমিতি গঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য;
ঙ) সমিতির সদস্যপদের যোগ্যতা ও সদস্যভুক্তির শর্ত;
চ) সমিতির সদস্যগণের অধিকার ও দায়বদ্ধতা;
ছ) সমিতির মূলধন সৃষ্টির উপায় বা পদ্ধতি;
জ) সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটির দায়িত্ব ও ক্ষমতা এবং কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ পদ্ধতি;
ঝ) সমিতির সভা আহ্বান ও পরিচালনা এবং ভোটদান পদ্ধতি;
ঞ) সমিতি পরিচালনা ও ব্যবসায়ের সাধারণ নিয়মাবলি;
ট) মুনাফার বিলিবণ্টন;
ঠ) ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচন পদ্ধতি ও দায়িত্বভার হস্তান্তরের প্রক্রিয়া;
ড) সমিতির সদস্যপদ প্রত্যাহার, সদস্য বহিষ্কার ও অপসারণ এবং সদস্যগণের পাওনা পরিশোধের
পদ্ধতি;
ণ) সমিতির সাধারণ সভা আহ্বান পদ্ধতি এবং উক্ত সভার কর্মপরিধি ও ক্ষমতা;
দ) সমিতির সদস্যগণ কর্তৃক সমিতির খাতা-পত্র পরিদর্শন এবং এর প্রত্যায়িত অনুলিপি সরবরাহ;
ধ) সমিতির ব্যবসায়ের বাইরে তহবিল বিনিয়োগ বা লগ্নিকরণ ও তা হেফাজত প্ৰক্ৰিয়া;
ন) সমিতির হিসাব রক্ষণ পদ্ধতি;
প) সমিতির বিরোধ নিষ্পত্তির পদ্ধতি;
ফ) সমিতির সংরক্ষিত তহবিল সৃষ্টি ও তার ব্যবহার এবং লভ্যাংশ প্রদানের হার;
ব) সমিতির উপ-আইন প্রণয়ন ও সংশোধনের পদ্ধতি;
ভ) সমিতির নোটিশ প্রদান বা প্রেরণের পদ্ধতি;
ম) কোনো সদস্য সমিতির প্রাপ্য অর্থ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধে ব্যর্থ হলে জরিমানা আরোপের পদ্ধতি ;
ম) কোনো সদস্য সমিতির প্রাপ্য অর্থ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধে ব্যর্থ হলে জরিমানা আরোপের পদ্ধতি;
য) সমিতির অভ্যন্তরীণ তত্ত্বাবধান ও হিসাব নিরীক্ষা পদ্ধতি;
র) সমিতির সদস্যগণকে উপ-আইন এবং সমিতির হিসাবের উদ্বৃত্তপত্র (ব্যালান্স শীট) ও নিরীক্ষা প্রতিবেদন সরবরাহের পদ্ধতি এবং
ল) নিবন্ধক কর্তৃক নির্ধারিত অন্য যে কোন বিষয় ।
বিধিমালার ৮(২) ধারায় বলা হয়েছে যে প্রত্যেক সমবায় সমিতি তার প্রকৃতি অনুযায়ী সমবায় সমিতি আইন ও বিধিমালার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ অন্য যে কোনো বিষয়াদি উপবিধিতে উল্লেখ করতে পারবে । এর কোনো ধরনের পরিবর্তন বা সংশোধনীর ক্ষেত্রে শেয়ারহোল্ডারদের সাধারণ সভায় এর মোট সদস্যের কমপক্ষে ৫০% ভাগ এর উপস্থিতির এবং উপস্থিত সদস্যের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সম্মতিপূর্বক ভোটের প্রয়োজন পড়ে। সংশোধিত উপবিধি যথানিয়মে নিবন্ধকের নিকট জমা দিতে হয়। অতঃপর নিবন্ধক তা নিবন্ধন করে সনদ প্রদান করলেই সংশোধনের কাজ শেষ হয় ।
আরো পড়ুন :
➡️সমবায় সমিতি গঠন প্রক্রিয়া ।
➡️সমবায় সমিতির নিয়মাবলী বা আদর্শসমূহ
নিয়মিত এডুকেশন সম্পর্কিত তথ্য পেতে যুক্ত থাকুন আমাদের ফেইসবুক পেইজের সাথে ।