যৌথ মূলধনী কোম্পানির বৈশিষ্ট্য

যৌথ মূলধনী কোম্পানির বৈশিষ্ট্য 

বর্তমান বৃহদায়তন ব্যবসায় জগতে যৌথ মূলধনী কোম্পানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় ব্যবসায় সংগঠন। আইনের সাথে ওতপ্রোত সম্পর্ক থাকায় ও অন্যান্য দিক বিচারে এর এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যা একে স্বতন্ত্র রূপ প্রদান করেছে । এর যৌথ মূলধনী কোম্পানির বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নে আলোচিত হলো:

 

১. আইনসৃষ্ট প্রতিষ্ঠান (Law created concern): এটা একটা আইনসৃষ্ট ব্যবসায় সংগঠন। আই প্রতিষ্ঠান বলতে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা পালন করে প্রতিষ্ঠান গঠনকে বুঝায়। দেশের প্রচলিত কোম্পানি আইনের আওতায় অথবা সরকারের বিশেষ অধ্যাদেশবলে এ ব্যবসায় গঠিত হয়। যে কারণে এরূপ ব্যবসায়ের গঠন পদ্ধতি বেশ আনুষ্ঠানিকতাপূর্ণ ও জটিল ।

২. কৃত্রিম ব্যক্তিসত্তা (Artificial personality) : কৃত্রিম ব্যক্তিসত্তা বলতে ব্যক্তি না হয়েও কোনো কিছুর ব্যক্তির ন্যার মর্যাদা ও অধিকার লাভকে বুঝায়। কোম্পানি সংগঠন ব্যক্তি না হলেও এটি আইন অনুযায়ী কৃত্রিম স্বাধীন ব্যক্তিসত্তার মর্যাদা ভোগ করে। ফলে এরূপ প্রতিষ্ঠান নিজ নামে অন্যের সাথে চুক্তি করতে, লেনদেন করতে এবং প্রয়োজনে মোকদ্দমা দায়ের করতে পারে। অন্যরাও একইভাবে কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারে।

৩. চিরন্তন অস্তিত্ত্ব (Perpetual succession) : চিরন্তন অস্তিত্ব বলতে সহজে বিলুপ্ত হয় না এমন অস্তিত্বকে বুঝায়। কোম্পানি সংগঠন অন্যান্য ব্যবসায়ের ন্যায় সহজে বিলুপ্ত হয় না বিধায় আইন অনুযায়ী এ ব্যবসায় চিরন্তন অস্তিত্বের মর্যাদা ভোগ করে । পৃথক ও স্বাধীন সত্তার কারণে শেয়ারহোল্ডারদের মৃত্যু, দেউলিয়াত্ব, শেয়ার হস্তান্তর ইত্যাদি এ ব্যবসায়ের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে না। আইনগত আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমেই এরূপ ব্যবসায়ের বিলোপ ঘটে ।

৪.সদস্য সংখ্যা (Number of shareholders) : আইন অনুযায়ী এর সদস্য সংখ্যা নির্ধারিত । প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে কমপক্ষে দুইজন এবং সর্বোচ্চ পঞ্চাশজন এবং পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে কমপক্ষে সাতজন এবং সর্বোচ্চ শেয়ার সংখ্যা দ্বারা সীমাবদ্ধ পরিমাণ সদস্য থাকতে পারে। উল্লেখ্য প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিতে একাধিক ব্যক্তি মিলে শেয়ার গ্রহণ করলে আইনানুযায়ী তা একজন সদস্য হিসেবে বিবেচিত হয়। সেক্ষেত্রে শেয়ারহোল্ডারদের পক্ষে প্রথম ব্যক্তি অধিকার প্রয়োগ ও দায় বহনে বাধ্য থাকে ।

৫. সাধারণ সীলমোহর (Common seal) : কোম্পানি কৃত্রিম ব্যক্তি হওয়ার কারণে সকল কাজেই তাকে প্রতিনিধির ওপর নির্ভর করতে হয়। প্রতিনিধির বৈধতা কোম্পানির সাধারণ সীলমোহর দ্বারা নির্ধারিত হয়ে থাকে। কোম্পানির সকল কাগজপত্রে এরূপ সীলের ব্যবহার আবশ্যক। এজন্য কোম্পানির সাধারণ সীলমোহর কিভাবে সংরক্ষিত ও ব্যবহৃত হবে সে বিষয়ে কোম্পানির পরিমেল নিয়মাবলিতে প্রয়োজনীয় বিধানের উল্লেখ করা হয়ে থাকে।

৬. শেয়ার মূলধন (Share capital) : আইনগতভাবেই কোম্পানির মূলধনকে কতকগুলো সমান অঙ্কের ক্ষুদ্র এককে ভাগ করা হয় । এরূপ প্রত্যেকটি একককে শেয়ার বলে। এগুলো বিক্রয় করে কোম্পানি নিজস্ব মূলধন সংগ্রহ করে । শেয়ারে বিভাজিত থাকার কারণেই এর মূলধনকে শেয়ার মূলধন বলা হয় । সাবালক যোগ্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান শেয়ার কিনে এর সদস্যপদ অর্জন করতে পারে ।

৭. শেয়ারের হস্তান্তরযোগ্যতা (Transferability of share) :  কোম্পানি আইনের ৩০ ধারা অনুযায়ী শেয়ার অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে গণ্য এবং যা কোম্পানির সংঘবিধির বিধান অনুযায়ী হস্তান্তরযোগ্য। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির শেয়ার অবাধে হস্তান্তরযোগ্য হলেও প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির শেয়ার অবাধে হস্তান্তরযোগ্য নয় । পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত হলে এর সদস্যরা এই বাজারে সহজেই শেয়ার হস্তান্তরের সুযোগ পায় ।

৮. সীমাবদ্ধ দায় (Limited liability) : অসীম দায়সম্পন্ন কোম্পানি ছাড়া সকল কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের দায় স্মারকলিপির বর্ণনা অনুযায়ী শেয়ার বা নিশ্চয়তা মূল্য দ্বারা সীমাবদ্ধ থাকে। যার অধিক দায় বহনে তাদেরকে বাধ্য করা যায় না। অবশ্য আমাদের দেশে অসীম দায়সম্পন্ন ও নিশ্চয়তা মূল্য দ্বারা দায় সীমাবদ্ধ কোম্পানি নেই । অর্থাৎ যদি কেউ শেয়ার মূল্য যারা দায় সীমাবদ্ধ কোম্পানির ১০০ টাকা মূল্যমানের ১০টা শেয়ার ক্রয় করে তবে তার দায় ১,০০০ টাকা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ । যদি এই মূল্যমানের কোনো অংশ বকেয়া থাকে তবে প্রয়োজনে ঐ পরিমাণ অর্থ পরিশোধে তাকে বাধ্য করা যায় । এ কারণেই এরূপ কোম্পানির নামের সাথে সীমাবদ্ধ বা Lad. শব্দের উল্লেখ করার প্রয়োজন পড়ে ।

৯. বিধিবদ্ধ দায়িত্ব (Statutory responsibility) : কোম্পানি আইন অনুযায়ী এরূপ ব্যবসায়কে বেশ কিছু বিধিবদ্ধ দায়িত্ব পালন করতে হয়; যেমন- খাতাপত্র সংরক্ষণ, হিসাব তৈরি, হিসাব নিরীক্ষণ, সভা আহবান, পরিচালক পর্ষদ পুনর্গঠন ইত্যাদি। এরূপ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে কোম্পানি নিবন্ধক (RJSC) আইনানুযায়ী জরিমানা আরোপ এমনকি এর নিবন্ধন বাতিল করতে পারে। অবশ্য প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিকে কিছু কিছু । বিধিবদ্ধ দায়িত্ব হতে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

1

১০. বৃহদায়তন প্রতিষ্ঠান (Large scale organization) : সদস্য সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে এ ব্যবসায়ে অংশীদারি ব্যবসায়ে সদস্যদের অসীম দায় ও সদস্য সংখ্যার স্বল্পতার কারণে প্রতিষ্ঠানকে খুব বড় করে গঠন ও তুলনামূলকভাবে অধিক মূলধন সংগ্রহ করা যায়। একমালিকানা ব্যবসায়ে একক মালিকের সামর্থ্যের সীমাবদ্ধতা,পরিচালনা করা যায় না। কিন্তু কোম্পানি সংগঠনে সদস্য সংখ্যার আধিক্য, প্রতিষ্ঠানের পৃথক সত্তা ও চিরন্তন অস্তিত্ব এবং সদস্যদের সীমিত দায়ের কারণে সহজেই বৃহদায়তন প্রকৃতিতে গড়ে উঠতে পারে । আর এ কারণেই সারা বিশ্বে এ ধরনের ব্যবসায় বৃহদায়তন প্রকৃতির ব্যবসায় সংগঠন ।

১১. স্বতন্ত্রধর্মী ব্যবস্থাপনা (Independent nature management) : কোম্পানি সংগঠনের ব্যবস্থাপনা মালিকানা থেকে ভিন্নতর। পরিচালকরা এর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় কর্তৃত্বশালী হলেও দৈনন্দিন ব্যবস্থাপনা কার্য বেতনভুক্ত তৃতীয় পক্ষের উপর ন্যস্ত থাকে। দৈনন্দিন ব্যবস্থাপনার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অর্থাৎ এমডি/ সিইও বেতনভুক কর্মচারী হিসেবে পরিচালনা পর্ষদের দেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সর্বোতভাবে দায়ী হয়। অন্যদিকে পরিচালনা পর্ষদ তাদের কাজের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের নিকট দায়ী হয়ে থাকে ।

 

আরো পড়ুন,,,,,,

➡️হোল্ডিং কোম্পানি কাকে বলে ?

➡️ মানব সম্পদ উন্নয়নে ব্যবস্থাপনা কিভাবে ভূমিকা রাখে?

➡️ যেীথ মূলধনী ব্যবসা কাকে বলে ?

 

নিয়মিত পড়াশুনার সম্পর্কিত আপডেট পেতে ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেইজ ।

By MD Imran hossan

২০১৯ সাল থেকে যুক্ত আছি এই টেকনোলজির দুনিয়ার সাথে । যদিও আমার পড়াশোনা ব্যবসা ও বাণিজ্য নিয়ে । ওয়েবসাইট ডেভেলপ করে দেওয়ার পাশাপাশি বর্তমানে লিখালিখি ও ব্লগিং সেক্টর এর সাথে যুক্ত আছি । নিজের জ্ঞান কে অন্যদের সাথে ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠা করেছি Goafta.com ওয়েবসাইট । স্বপ্ন দেখছি একটি বিশ্বস্ত ব্যবসায়িক ব্লগ গড়ে তোলার । এবং নিজে যতটুকু জানি তা সবার কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার , তাতে যদি কারো শস্য পরিমাণও উপকার হয় তাতেই আমার প্রশান্তি |

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *