সমবায় সমিতি গঠন প্রক্রিয়া : সমবায় সমিতি একটি আইনসৃষ্ট ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান। এটি একাধিক ব্যক্তির সম্মিলিত সহযোগিতায় ও প্রচেষ্টায় গঠিত এবং পরিচালিত হয়। বাংলাদেশে সমবায় সমিতিসমূহ বর্তমানে সমবায় সমিতি আইন ২০০১ ও সমবায় বিধিমালা ২০০৪ অনুযায়ী গঠিত ও পরিচালিত হয়ে থাকে । এরূপ প্রতিষ্ঠান গঠনের ক্ষেত্রে রেখাচিত্রে উল্লেখ নিম্নোক্ত পর্যায়সমূহ লক্ষণীয় “
১. উদ্যোগ গ্রহণ (Taking initiative)
প্রাথমিক সমবায় সমিতি গঠনের লক্ষ্যে সমশ্রেণি, এলাকা, মর্যাদা বা পেশার চুক্তি সম্পাদনে সক্ষম কমপক্ষে বিশ জন ব্যক্তি স্বেচ্ছায় একত্রিত হতে হয় । প্রথমে যারা এভাবে সমবেত হয় তাদের উদ্যোক্তা বলে । এ সকল ব্যক্তি নিজেদের মধ্য হতে কমপক্ষে ছয় ও সর্বোচ্চ বারো সদস্য বিশিষ্ট একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করে । এরূপ কমিটির মুখ্য পদগুলো হলো :
- একজন চেয়ারম্যান ।
- একজন ভাইস চেয়ারম্যান ।
- একজন সেক্রেটারি ও
- অবশিষ্ট সাধারণ সদস্য।
অবশ্য এক্ষেত্রে একজন কোষাধ্যক্ষও নিয়োগ করা হতে পারে । সেক্ষেত্রে সাধারণ সদস্য সংখ্যা একজন কমে যায় ।
এ কমিটির প্রধান কাজ হলো সমিতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি খসড়া উপবিধি (By-laws) তৈরি করা । এতে সমবায় সমিতির নাম, ঠিকানা, উদ্দেশ্য, মূলধনের পূর্ণ বিবরণ, উদ্যোক্তাদের নাম, ঠিকানা, পদবি এবং সমিতি পরিচালনা সংক্রান্ত যাবতীয় নিয়ম-নীতি লেখা থাকে।
সমিতিটি সসীম দায়সম্পন্ন হলে নামের শেষে সীমিত বা Ltd. শব্দের উল্লেখ থাকতে হয় । অবশ্য উদ্যোক্তাগণ ইচ্ছা করলে এরূপ উপবিধি তৈরি না করে সমবায় বিভাগ হতে ছাপানো উপবিধি এবং তা মান্য করার সিদ্ধান্তও গ্রহণ করতে পারে। এ পর্যায়ে প্রস্তাবিত সমবায়ের সীলমোহরও তৈরি করা হয় ।
২. নিবন্ধনের আবেদন (Application for registration) :
এ পর্যায়ে সমিতির কর্তাব্যক্তিগণ সংশ্লিষ্ট এলাকার সমবায় অফিস হতে প্রয়োজনীয় আবেদনপত্রের ফরম সংগ্রহ করে তা পূরণপূর্বক প্রয়োজনীয় দলিলপত্রাদি, ফিসহ নিবন্ধকের নিকট জমা দেয় । আবেদনপত্রের সাথে যে সকল দলিলপত্রাদি জমা দিতে হয় বা বিষয়ের উল্লেখ করতে হয় তা নিম্নরূপ :
■ সমিতির সদস্যদের নাম, ঠিকানা ও দস্তখত । অবশ্যই প্রাপ্তবয়স্ক কমপক্ষে বিশজন ব্যক্তির নাম ও স্বাক্ষর এক্ষেত্রে থাকতে হয় । স্বাক্ষরের সাথে তারিখের উল্লেখ থাকাও আবশ্যক;
■ সমিতির উপবিধির তিন কপি । এতেও উদ্যোক্তাদের স্বাক্ষর থাকা আবশ্যক;
■ সমবায় সমিতির সীলমোহরের নমুনা এবং
আবেদনপত্রটির আইনগত যথার্থতা সম্পর্কে সম্পাদক ও উদ্যোক্তাদের প্রদত্ত ঘোষণাপত্র ।
৩. নিবন্ধনপত্র সংগ্রহ (Collecting registration certificate) :
উপরোক্ত দলিলপত্রাদি ও ফি প্রাপ্ত হয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর নিবন্ধক সন্তুষ্ট হলে আবেদনপত্র প্রাপ্তির ৬০ দিনের মধ্যে তা মঞ্জুর করত নিবন্ধনপত্র ইস্যু করেন । অবশ্য আবেদন প্রাপ্তির পর প্রয়োজনীয় তথ্য ও কাগজপত্রে ঘাটতি থাকলে নিবন্ধক অনধিক ৩০ দিনের মধ্যে সেগুলো চেয়ে বা প্রয়োজনীয় তদন্ত করে আবেদনপত্রের যথার্থতা নিরূপণ করতে পারেন।
আবেদনপত্র গৃহীত হলে নিবন্ধক নির্ধারিত ফরমে একটি নিবন্ধনপত্র ইস্যু করেন এবং যা নিবন্ধনের ব্যাপারে চূড়ান্ত সনদ হিসেবে গৃহীত হয় । অতঃপর নিবন্ধক উপবিধির ৩ কপির সকল পৃষ্ঠায় তার স্বাক্ষর ও সীলযুক্ত করে ২ কপি আবেদনকারীদের ফেরত দেন এবং ১ কপি কার্যালয়ে সংরক্ষণ করেন । এর সাথে সমিতির সীলমোহরও নিবন্ধিত হয়েছে গণ্য হয় ।
৪. কার্যারম্ভ (Commencement) :
নিবন্ধনপত্র পাওয়ার পর সমিতির আইনগত অস্তিত্বের জন্মলাভ ঘটে। অতঃপর এর ব্যবস্থাপনা কমিটি ও উদ্যোক্তাগণ সমিতির নাম ও সীলমোহর ব্যবহার করে এর পক্ষে যেকোনো আইনানুগ কাজ করার অধিকারী হয় । এরপর সমিতি যথানিয়মে তার কাজ শুরু করে ।
আরো পড়ুন :
নিয়মিত এডুকেশন সম্পর্কিত তথ্য পেতে যুক্ত থাকুন আমাদের ফেইসবুক পেইজের সাথে ।