সমবায় স্বল্পবিত্তসম্পন্ন মানুষের সংগঠন । এরূপ বিত্তসম্পন্ন মানুষ নানান ধরনের উপজীবিকা নিয়ে সমাজে কর্মরত রয়েছে । তাদের প্রয়োজন, অভাব-অভিযোগও এক ধরনের নয় । এরূপ বিভিন্নমুখী প্রয়োজন ও চাহিদা পূরণে সমাজে বিভিন্ন ধরনের সমবায় সমিতি গড়ে উঠেছে। নিম্নে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ হতে সমবায়ের শ্রেণিবিভাগ রেখাচিত্রের সাহায্যে দেখানো হলো :
চিত্র : সমবায় সমিতির প্রকারভেদ
সমবায় সমিতির প্রকারভেদ
উপরের রেখাচিত্রে উল্লেখ সমবায় সমিতিসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো :
সদস্যদের প্রকৃতি বিচারে :
১. উৎপাদক সমবায় সমিতি (Producers’ co-operative society) : কতিপয় উৎপাদক নিজেদের আর্থ- সামাজিক উন্নয়নে উৎপাদন ও বিক্রয় কার্যকে অধিকতর ফলপ্রসু ও কার্যকরভাবে পরিচালনার উদ্দেশ্য কোনো সমবায় সমিতি গড়ে তুললে তাকে উৎপাদক সমবায় সমিতি বলে । কমবিত্তসম্পন্ন এ সকল উৎপাদক পণ্য উৎপাদন ও বিক্রয়ে নানান অসুবিধায় ভোগে। মহাজন, মধ্যস্থ ব্যবসায়ী ইত্যাদি ব্যক্তিবর্গের দৌরাত্ম্যে এরা দিশেহারা থাকে ।
এ সকল অসুবিধা থেকে পরিত্রাণের উপায় হিসেবে ক্ষুদ্র উৎপাদকগণ এ ধরনের সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠা করে। কৃষক, মৎসজীবী, মৎসচাষী, মৃৎশিল্পী, দুগ্ধ উৎপাদনকারী, প্লাস্টিক সামগ্রী উৎপাদক এভাবে অসংখ্য উৎপাদক সমবায় সমিতি আমরা দেখতে পায় । উল্লেখ্য এ ধরনের সমিতি উদ্দেশ্য বিচারে সাধারণত বহুমুখী সমবায় সমিতি হয়ে থাকে ।
২. বিক্রেতা সমবায় সমিতি (Sellers’ co-operative society) : একই এলাকার বা মার্কেটের বিক্রেতারা নিজেদের অর্থ-সামাজিক উন্নয়নের উদ্দেশ্যে সংঘবদ্ধ হয়ে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সম্মিলিত ভূমিকা পালনের লক্ষ্যে যে সমবায় সমিতি গড়ে তোলে তাকে বিক্রেতা সমবায় সমিতি বলে । একই এলাকা বাজার বা মার্কেটে বিক্রয় কার্য চালাতে যেয়ে ব্যবসায়ীদের অনেক সময়ই বিভিন্ন ধরনের প্রতিকূল অবস্থা মোকাবেলা করতে হয় ।
তাই সাধারণ সুবিধা প্রাপ্তির জন্য নিজেদের সম্মিলিত ভূমিকা পালনের প্রয়োজনে এ ধরনের সমবায় সমিতি গড়ে তোলা হয়। এ ছাড়া সমিতিতে সঞ্চয় জমা করে মূলধন গঠনপূর্বক তা নিজেদের মধ্যে বা বাইরে ঋণ দিয়ে বা বিনিয়োগ করে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারে ।
হকার্স সমবায় সমিতি, বণিক সমবায় সমিতি, পুস্তক বিক্রেতা সমবায় সমিতি-এভাবে তরকারি বিক্রেতা, মাছ বিক্রেতা, স্বর্ণ বিক্রেতা ইত্যাদি নানান ধরনের বিক্রেতারা নিজেরা মিলে এরূপ সমবায় সমিতি গড়ে তোলে ।
৩. মালিক সমবায় সমিতি (Owners’ co-operative society) : মালিক শ্রেণির মানুষ নিজেদের আর্থ- সামাজিক উন্নয়নের জন্য নিজেদের সংঘবদ্ধতা সৃষ্টির পাশাপাশি মালিকানা সংশ্লিষ্ট স্বার্থরক্ষায় সমবায়সমিতি গড়ে তুললে তাকে মালিক সমবায় সমিতি বলে। অনেকক্ষেত্রেই লক্ষণীয় যে, সাধারণ স্বার্থরক্ষায় তাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তোলার কোনো বিকল্প থাকে না। ফ্ল্যাটে বা মহল্লায় পানির সমস্যা সমাধান, নিরাপত্তা, পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদির জন্য সম্মিলিত প্রয়াসের প্রয়োজন হয়।
একটা মার্কেটের মালিকদের বা বিশেষ ধরনের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকদের নিজেদের স্বার্থেই সাধারণ সুবিধা অর্জন বা বিভিন্ন পক্ষের সাথে দর কষাকষির জন্য সংঘবদ্ধতার প্রয়োজন পড়ে। সেজন্য সমশ্রেণির মালিকরা নিজেদের উন্নয়নের জন্যই মিলে সমবায় সমিতি গড়ে তোলে। ফ্ল্যাট মালিক, বাড়ি মালিক, দোকান মালিক, প্রেস মালিক, পরিবহণ মালিক, ক্ষুদ্র শিল্প মালিক ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট সমবায় সমিতি এর উদাহরণ ।
৪. পেশাজীবী সমবায় সমিতি (Professionals cooperative society) : একই পেশার মানুষ নিজেদের
আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠা করলে তাকে পেশাজীবী সমবায় সমিতি বলে । বাংলাদেশে প্রতিটা উকিলবারে এ্যাডভোকেটদের সমিতি রয়েছে। একইভাবে প্রকৌশলী, ডিপ্লোমা প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, হিসাব নিরীক্ষক, চিকিৎসক ইত্যাদি পেশাজীবীদের সমিতিসমূহ লক্ষণীয় ।
যা সমিতির সদস্যদের সংঘবদ্ধ করে তাদের পেশাগত স্বার্থ সংরক্ষণে যেমনি কাজ করে তেমনি এর মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেও তারা বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারে ।
৫. শ্রমজীবী মানুষদের সমবায় সমিতি (Co-operative society for labourer) : বিভিন্ন ধরনের শ্রমজীবী মানুষ তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য ও নিজেদের শ্রমস্বার্থ রক্ষায় এক্যবদ্ধ হয়ে যে সমবায় সমিতি গড়ে তোলে তাকে শ্রমজীবী মানুষদের সমবায় সমিতি বলে । আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের শ্রমজীবী মানুষ নানামুখী চাপে থাকে ।
তারা সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যেমনি এই চাপে থেকে নিষ্কৃতি পেতে পারে তেমনি নিজেদের মধ্যে সম্প্রীতির সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা ছাড়াও নিজেরা সঞ্চয় জমা করে ও তা ব্যবসায়িক কাজে লাগিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারে ।
শ্রমজীবী সমবায় সমিতি, ঘাট শ্রমিক সমিতি, নির্মাণ শ্রমিক সমিতি- এভাবে কর্মচারী, শ্রমিক, টেম্পু চালক, ভ্যান চালক, রিক্সা চালক ইত্যাদি শ্রেণির মানুষদের এ ধরনের সমবায় সমিতি গড়ে তুলতে দেখা যায় ।
৬. ভোক্তা সমবায় সমিতি (Consumers’ co-operative society) : ভোক্তাগণ ক্রয় সুবিধা প্রাপ্তির লক্ষ্যে নিজেদের প্রচেষ্টা ও সহযোগিতায় কোনো সমবায় সমিতি গঠনপূর্বক সমবায় বিপণি স্থাপন ও পরিচালনা করলে তাকে ভোক্তা সমবায় সমিতি বলে ।
এতে একদিকে যেমনি ন্যায্যমূল্যে উন্নতমানের সামগ্রী সংগ্রহ করা যায় অন্যদিকে এ বিপণি হতে অর্জিত মুনাফাও তারা ভোগ করতে পারে। এ ধরনের সমিতিতে সদস্য ক্রেতাদের বার্ষিক ক্রয়কৃত পণ্যের মূল্য অনুসারে মুনাফা বণ্টিত হয় ।
এরূপ বিপণি হতে সমবায়ী ছাড়া অন্যরাও সামগ্রী ক্রয় করতে পারে। শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠানের গেটে, বড় প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠানে, বড় হাউজিং কমপ্লেক্সের গেটে এর মালিকদের উদ্যোগে এ ধরনের সমবায় বিপণি গড়ে তোলা হতে পারে ।
৭. বিশেষ শ্রেণির মানুষদের সমবায় সমিতি (Co-operative society for special class of persons): পেশাজীবী, কর্মজীবী, উৎপাদকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের বাইরেও সমাজের বিশেষ শ্রেণির অনেক মানুষ নিজেদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠা করতে পারে । একেই বিশেষ শ্রেণির মানুষদের সমবায় সমিতি বলে । এই ধরনের মানুষগুলো নানান ধরনের কাজে নিয়োজিত থেকে জীবন নির্বাহ করলেও সমস্বার্থে নিজেদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য এ ধরনের সমবায় সমিতিগঠন ও পরিচালনা করে থাকে ।
এর মাধ্যমে তারা তাদের সীমিত সামর্থ্য থেকে সঞ্চয় জমা করে মূলধন গঠন করে । যা বিনিয়োগের মাধ্যমে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হয় । নিজেদের প্রয়োজনে তারা এখান থেকে ঋণ নিয়েও উপকৃত হতে পারে। আমাদের সমাজে ভূমিহীন সমবায় সমিতি, বিত্তহীন সমবায় সমিতি, মহিলা সমবায় সমিতি এভাবে যুব, মুক্তিযোদ্ধা ইত্যাদি ব্যক্তিদের সমবায় সমিতি এর
উদাহরণ ।
খ) উদ্দেশ্যগত দিক বিচারে (Regarding judgement of the nature of objectives) :
১. ক্রয় সমবায় সমিতি (Purchasing co-operative society) : শিল্পে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল বা উপকরণাদি একই সাথে সংগ্রহের মাধ্যমে ক্রয় সুবিধা অর্জনের লক্ষ্যে একই ধরনের কমবিত্তসম্পন্ন উৎপাদকগণ সমবায় সমিতি স্থাপন করলে তাকে ক্রয় সমবায় সমিতি বলে। উৎপাদক সমবায় সমিতিতে যেভাবে উৎপাদন, বণ্টনসহ সকল সুবিধা লাভের উদ্দেশ্যে সমবায় স্থাপন করা হয় এখানে ততো ব্যাপক উদ্দেশ্য থাকে না । এরূপ সমবায়ের ফলে উৎপাদক ক্রেতাদের পক্ষে সল্প মূল্যে ভালোমানের উপকরণাদি সহজ শর্তে ক্রয় সম্ভব হয় ।
২. বিক্রয়/বিপণন সমবায় সমিতি (Marketing co-operative society) : কোনো এলাকায় একই ধরনের ক্ষুদ্র উৎপাদনকারীগণ বিক্রয়ের ক্ষেত্রে অধিক সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যে সমবায় সমিতি স্থাপন করলে তাকে বিক্রয় বা বিপণন সমবায় সমিতি বলে । এর ফলে মধ্যস্থ ব্যবসায়ীদের ওপর হতে যেমনি নির্ভরতা কমানো যায় তেমনিভাবে সুবিধাজনক মূল্যে পণ্য বিক্রয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয় ।
এর ফলে বাজার সম্পর্কে সমবায়ীরা প্রত্যক্ষ ধারণা লাভ করতে পারে ও প্রয়োজনে নিজেরা দোকান খুলে পণ্যসামগ্রী বিক্রয় করতে পারে । এর ফলে নিজদের মধ্যকার প্রতিযোগিতা হ্রাস পায় এবং মুনাফার পরিমাণ বৃদ্ধি পায় । উৎপাদক সমবায় বিপণি এর উদাহরণ ।
৩. ঋণদান সমবায় সমিতি (Co-operative credit society) : ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উৎপাদক, কৃষিজীবী বা স্বল্প আয়ের বিভিন্ন পেশার ব্যক্তিগণ প্রয়োজনীয় সময়ে ঋণ সুবিধা লাভের জন্য কোনো সমবায় সমিতি স্থাপন করলে তাকে সমবায় ঋণদান সমিতি বলে। এরূপ সমিতি সদস্যদের ক্রয়কৃত শেয়ার ও জমাকৃত আমানত এবং প্রয়োজনে সমবায় ব্যাংক বা অন্যান্য ব্যাংক হতে তহবিল সংগ্রহ করে এবং তা থেকে প্রয়োজনমতো সমবায়ীদের ঋণ দেয় । এরূপ সমবায়ের উদ্দেশ্য হলো সদস্যদের সুদি মহাজন ও ঋণদাতাদের হাত থেকে রক্ষা করা।
৪. উন্নয়ন সমবায় সমিতি (Development co-operative society) : সদস্যদের কোনো একটি বৈষয়িক উন্নয়ন লাভের উদ্দেশ্যে সমবায় সমিতি গঠন করা হলে তাকে উন্নয়ন সমবায় সমিতি বলে । একটা মার্কেটের দোকান ব্যবসায়ীরা একত্রে টাকা সঞ্চয় বা জমা করে তা বিনিয়োগ করার মাধ্যমে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে একটি সমবায় সমিতি গঠন করতে পারে ।
এভাবে কিছু লোক সমিতিবদ্ধ হয়ে নিজেরা জমি কিনে ফ্ল্যাট তৈরির জন্য সমিতি গড়তে পারেন। এভাবে একটা এলাকার কৃষকরা সেচ সুবিধা গড়ে তুলে অধিক ফসল ফলানোর জন্য সমিতি গড়তে পারেন- যার সবই উন্নয়ন সমবায় সমিতির উদাহরণ ।
এরূপ সমবায় একাধিক উদ্দেশ্য নিয়ে গঠন করা হলে তা বহুউদ্দেশক সমবায় সমিতি হয়ে থাকে ।
৫. গৃহনির্মাণ সমবায় সমিতি (Co-operative housing society) : সমিতির সদস্যদের আবাসিক সমস্যা সমাধানকল্পে যে সমবায় সমিতি গঠন করা হয় তাই গৃহনির্মাণ সমবায় সমিতি। বর্তমান যুগে নগরকেন্দ্রিক মানুষের যে চরম আবাসিক সংকট অনুভূত করা যায় তা দূর করার জন্যই এ ধরনের সমবায় সমিতি তৈরী করা হয়ে থাকে।
এক্ষেত্রে সমবায়ীদের জমাকৃত অর্থ দ্বারা সমিতির নামে জমি ক্রয় করা হয় এবং তাতে বাড়ি তৈরি করে নির্দিষ্ট মূল্যে ও কিস্তিতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অর্থ পরিশোধের শর্তে তা সদস্যদের মধ্যে বণ্টন করা হয় । অর্থ পরিশোধ হলে সদস্যগণ বাড়ির বা ফ্লাটের মালিক হন ।
৬. সমবায় আবাসিক এলাকা (Co-operative housing estate ) : সদস্যরা মিলে সমবায়ের ভিত্তিতে আবাসিক এলাকা গড়ে তুললে তাকে সমবায় আবাসিক এলাকা বলে । এক্ষেত্রে সদস্যদের নিকট হতে সঞ্চয় জমার মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করা হয় এবং জমি ক্রয় করে তার যথাযথ উন্নয়ন ও রাস্তাঘাটসহ বাকি জমি প্লট করে তা সদস্যদের মধ্যে বণ্টন করা হয়। সম্ভব হলে এরূপ সমিতি সদস্যদের বাড়ি তৈরির জন্য ঋণ মঞ্জুর করে । সাধারণত প্লট পাওয়ার পর সদস্যরা নিজ দায়িত্বে অর্থ সংগ্রহ করে এতে বাড়ি তৈরি করে ।
৭. সমবায় ব্যাংক (Co-operative bank) : অনেকগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সমবায় ঋণদান সমিতি একত্রিত হয়ে নিজেদের আর্থিক প্রয়োজন মিটানোর জন্য কোনো ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললে তাকে সমবায় ব্যাংক বলে।
৮. বহুমুখী সমবায় সমিতি (Multi-purpose co-operative society) : একাধিক উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য কোনো সমবায় সমিতি গঠিত হলে তাকে বহুমুখী সমবায় সমিতি বলে । অন্যান্য সমিতিসমূহের ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য সীমিত হলেও এক্ষেত্রে অনেক ধরনের উদ্দেশ্যার্জনের চেষ্টা করা হয় । কোনো সমবায় সমিতি উৎপাদন, ক্রয়-বিক্রয়, ঋণদান ইত্যাদি বিভিন্নমুখী উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য গঠিত হতে পারে । একে বহু উদ্দেশক সমবায় সমিতিও বলা হয়। আমাদের দেশে অধিকাংশ সমবায় সমিতিই বহুমুখী সমবায় সমিতি হিসেবে গঠিত ও পরিচালিত হতে দেখা যায় ।
সাংগঠনিক স্তর বিচারে (Regarding judgement of organizational stage) :
১. প্রাথমিক সমবায় সমিতি (Primary co-operative society) : সমবায়ে যোগদানকারী ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে প্রাথমিক বা নিচের স্তরে যে সমবায় সমিতি গঠিত হয় তাকে প্রাথমিক সমবায় সমিতি বলে । এরূপ. সমিতি সমবায়ের সদস্যদের মধ্য হতে নির্বাচিত নির্বাহী কমিটি দ্বারা পরিচালিত হয় । সাধারণভাবে সমবায় বলতে প্রাথমিক সমবায় সমিতিকে বুঝায় । গ্রামীণ সমবায় সমিতিসমূহ এর উদাহরণ ।
২. কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি (Central co-operative society) : কয়েকটি প্রাথমিক সমবায় সমিতির সমন্বয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি বলে। এতে কোনো ব্যক্তি সদস্য হতে পারে না । প্রাথমিক সমবায় সমিতির নির্বাহী কমিটির সদস্যদের মধ্য হতে নির্বাচিত কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে এরূপ সমিতি পরিচালিত হয় । ন্যূনতম ১০টি প্রাথমিক সমবায় মিলে এরূপ সমবায় গঠন করা হয়ে থাকে । গ্রামীণ কৃষক সমবায় সমিতিসমূহ মিলে ইউনিয়ন বা থানা পর্যায়ে কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি গঠিত হয় ।
৩. মিশ্র সমবায় সমিতি (Mixed co-operative society) : এরূপ সমবায় সমিতিতে ব্যক্তি সদস্যের
পাশাপাশি প্রাথমিক সমবায় সমিতিসমূহও সদস্য হয় । সমবায়ের জন্য ন্যূনতম ২০ জন সদস্যের মধ্যে এতে কমপক্ষে ১২ জন প্রাথমিক সমবায় সমিতি সদস্য থাকতে হয় । ব্যক্তি ও সমিতি সদস্য হতে নির্বাচিত ব্যক্তিদের ওপর এর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ন্যস্ত থাকে ।
৪. জাতীয় সমবায় সমিতি (National co-operative society) : এরূপ সমিতি দেশের সর্বোচ্চ স্তরের সমবায় প্রতিষ্ঠান, যা দেশের অভ্যন্তরে কার্যরত বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতির সমন্বয়ে গঠিত হয়। এতে কোনো ব্যক্তি সদস্য থাকতে পারে না । কমপক্ষে ১০টি কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি মিলে জাতীয় সমবায় সমিতি গঠিত হয়। কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি হতে নির্বাচিত প্রতিনিধি সমন্বয়ে এরূপ সমিতির • নির্বাহী কমিটি গঠন ও তা পরিচালনা করা হয় । বাংলাদেশ কৃষক সমবায় সমিতি এর উদাহরণ ।
পরিশেষে বলা যায়, বিভিন্ন ধরনের ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন পূরণের জন্য বিভিন্ন ধরনের সমবায় সমিতি কাজ করছে। কম বিত্তসম্পন্ন মানুষের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন ও টিকে থাকার জন্য ভবিষ্যতে আরও নতুন নতুন সমবায় সমিতি গড়ে উঠবে তা নির্দিদ্বায় বলা যায় ।
আরো পড়ুন ,,,
➡️সমবায় সমিতি কি বা কাকে বলে ?
➡️যেীথ মূলধনী ব্যবসা কাকে বলে ?
নিয়মিত এডুকেশন সম্পর্কিত তথ্য পেতে যুক্ত থাকুন আমাদের ফেইসবুক পেইজের সাথে ।