সমবায় সমিতির নিয়মাবলী বা আদর্শসমূহ

নীতি বা আদর্শ হলো সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত কাজের নির্দেশনা যা মেনে চললে কাজ সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা যায় বা কার্যক্ষেত্রে সাফল্য লাভ সহজ হয়। সমবায় একটি ভিন্ন ধরনের ব্যবসায় সংগঠন। কারণ সমাজের স্বল্পবিত্তসম্পন্ন মানুষ নানান সীমাবদ্ধতা নিয়ে পারস্পরিক অর্থনৈতিক কল্যাণের লক্ষ্যে এরূপ ব্যবসায় গঠন ও পরিচালনা করে । এ ধরনের ব্যবসায় সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে গিয়ে এর পরিচালক ও সদস্যদের বেশ কিছু মূলনীতি বা আদর্শ মেনে চলতে হয় । এরূপ নীতি বা আদর্শের বিচ্যুতি ঘটলে সমবায় সাফল্য লাভ করতে পারে না ।

এরূপ সমবায় সমিতির নিয়মাবলী বা আদর্শসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো :

১. একতা (Unity) : সকলে মিলে একভাবে, একমনে ও একত্রে চলার দৃঢ় অভিব্যক্তি, প্রবণতা ও অবস্থাকে একতা বলে । ঐক্যবদ্ধভাবে এই চলার ফলে যে শক্তির সৃষ্টি হয় তাই ‘একতাই বল’ (Unity is strength) নামে অভিহিত । এই প্রধান মূলনীতির ওপর সমবায় প্রতিষ্ঠিত । প্রত্যেক সমবায়ীকে বুঝতে হয় যে ঐক্যই তাদের শক্তি । তাই এটি বিনষ্ট হয় এমন কোনো কাজ থেকে সদস্যদের বিরত থাকা আবশ্যক ।

২. সাম্য (Equality) : সমবায় সমিতি সাম্যের আদর্শে অনুপ্রাণিত। সাম্য বলতে সংঘবদ্ধ সকলের পারস্পরিক অধিকারে সমতা প্রতিষ্ঠাকে বুঝায় । সমবায়ের সদস্যরা সামাজিক, অর্থনৈতিক বা পারিবারিকভাবে যে যেমনই হোক না কেন সবাই এখানে সমান মর্যাদার অধিকারী । সমবায়ে যার যে পরিমাণ মূলধনই থাক না কেন সবাই এক ভোটের অধিকারী । সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও পরিচালনার ক্ষেত্রেও এভাবেই সমবায়ের সদস্যদের মধ্যে সাম্য ধরে রাখার চেষ্টা করা হয় ।

৩. সহযোগিতা (Co-operation) : সহযোগিতা বলতে একে অন্যকে সহায়তা করে এগিয়ে নেয়ার বা এগিয়ে যাওয়ার আন্তরিক প্রচেষ্টাকে বুঝায় । সমবায়ের আরেকটি মূলমন্ত্র হলো ‘দশে মিলে করি কাজ’ । অর্থাৎ এক্ষেত্রে প্রত্যেক সদস্যের সহযোগিতার মনোভাব ও পরস্পর সহানুভূতিশীল থাকা অপরিহার্য। সমবায়ে হিংসা-বিদ্বেষ যাতে কোনোভাবেই দেখা দিতে না পারে তার প্রতি সব সময়ই সতর্ক নজর রাখা উচিত। এভাবে সহযোগিতামূলক মনোভাব ও কাজ সদস্যদের মধ্যে একতা বজায় রাখতে সহায়তা করে ।

৪. সততা (Honesty) : সততা বলতে ন্যায়পরায়নতা প্রদর্শন এবং সাধুতা বা ধার্মিকতা বজায় রেখে চলাকে বুঝায় । সমবায় সংগঠনে এর প্রত্যেক সদস্যের বিশেষত পরিচালকদের মধ্যে সততার গুণ থাকা এর সংহতি ও সাফল্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । এরূপ প্রতিষ্ঠানে পরিচালকদের মধ্যে সততার অভাব দেখা দিলে সদস্যদের মনে সন্দেহ-অবিশ্বাস বৃদ্ধি পায় । ফলে সদস্যরা আগ্রহ হারায় । যেখানে কোনোভাবেই ব্যবসায় এগুতে পারে না ।

৫. আস্থা ও বিশ্বাস (Trust and confidence) : দলবদ্ধ প্রচেষ্টায় দলীয় সদস্যগণ পরস্পরের প্রতি নিঃসন্দেহ ও নির্ভরশীল হওয়াকেই পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস বলে । সমবায়ে সফলতা লাভ করতে হলে এর সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা-বিশ্বাস থাকা অপরিহার্য । এরূপ বিশ্বাস যত দৃঢ় হয় সমবায়ের প্রতি সদস্যদের আগ্রহ, উদ্দীপনাও তত বাড়ে । তাই যাতে কোনোভাবেই কারও কাজ, কথা বা আচরণের দ্বারা এই আস্থা ও বিশ্বাস বিনষ্ট না হয় সেদিকে এর পরিচালকদের সতর্ক দৃষ্টি রাখা উচিত ।

৬. গণতন্ত্র (Democracy) : সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের মতামত অনুযায়ী প্রতিনিধি নির্বাচন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যবস্থাকেই গণতন্ত্র বলে । সমবায় সমিতিকে সব সময়ই গণতান্ত্রিক রীতি-নীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হয় । এর ব্যবস্থাপনা পর্ষদের (Managing committee) নির্বাচনে সকল সদস্য স্বেচ্ছায় তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারে । সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও গণতান্ত্রিক নীতিমালা অনুসরণ করা হয় ।

৭. সঞ্চিতি সংরক্ষণ (Preservation of reserve) : সমবায়ের বিধান অনুযায়ী অর্জিত মুনাফার একটা নির্দিষ্ট অংশ বাধ্যতামূলক সংরক্ষণকে সঞ্চিতি সংরক্ষণ এবং এরূপ নীতিকে সঞ্চিতি সংরক্ষণের নীতি বলে । ২০০১ সালের সমবায় আইনের বিধান অনুযায়ী অর্জিত মুনাফার ১৫% সংরক্ষিত (Reserve) তহবিলে এবং ৩% উন্নয়ন (Development) তহবিলে সংরক্ষণ করতে হয়। সংরক্ষিত তহবিলের অর্থ কিভাবে ব্যয়িত বা বিনিয়োগ হবে সে বিষয়ে সমবায় উপবিধির বিধান প্রযোজ্য । উন্নয়ন তহবিলের অর্থ সমবায়ীদের প্রশিক্ষণ, উদ্বুদ্ধকরণ ইত্যাদি কাজে ব্যয়যোগ্য ।

৮. নিরপেক্ষতা (Impartiality) : কোনো ধরনের পক্ষপাতিত্ব না করার নীতিকেই নিরপেক্ষতার নীতি বলে । সমবায়ের অগ্রগতির জন্য একে সব সময়ই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা আবশ্যক । ধর্ম, বর্ণ, গোত্র বা দলের প্রভাব ব্যক্তিবিশেষের মধ্যে অত্যন্ত সক্রিয় থাকলে অনেক সময় তা হীন মানসিকতার জন্ম দেয় । তাই সমবায়কে এর ঊর্ধ্বে উঠে সবার জন্য কল্যাণ ও ভালোবাসা-এ নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে হয় ।

সমবায় সমিতির নীতিমালা pdf

ডাউনলোড সমবায় সমিতির নীতিমালা ।

 

পরিশেষে বলা যায়, সমবায়ে সফলতা অর্জন করতে হলে উক্ত মূলনীতি বা আদর্শসমূহ যথাযথভাবে অনুসরণ করা উচিত । যে সমবায় উক্ত আদর্শসমূহ যত বেশি অনুসরণ করতে পারে কার্যক্ষেত্রে তার পক্ষেই তত সফলতা অর্জন সম্ভব হয় ।

 

আরো পড়ুন :

➡️সমবায় সমিতির প্রকারভেদ ।

➡️সমবায় সমিতির বৈশিষ্ট্য ।

➡️সমবায় সমিতি কি ?

➡️সমবায় সমিতি গঠন প্রক্রিয়া ।

নিয়মিত এডুকেশন সম্পর্কিত তথ্য পেতে যুক্ত থাকুন আমাদের ফেইসবুক পেইজের সাথে ।

By MD Imran hossan

২০১৯ সাল থেকে যুক্ত আছি এই টেকনোলজির দুনিয়ার সাথে । যদিও আমার পড়াশোনা ব্যবসা ও বাণিজ্য নিয়ে । ওয়েবসাইট ডেভেলপ করে দেওয়ার পাশাপাশি বর্তমানে লিখালিখি ও ব্লগিং সেক্টর এর সাথে যুক্ত আছি । নিজের জ্ঞান কে অন্যদের সাথে ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠা করেছি Goafta.com ওয়েবসাইট । স্বপ্ন দেখছি একটি বিশ্বস্ত ব্যবসায়িক ব্লগ গড়ে তোলার । এবং নিজে যতটুকু জানি তা সবার কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার , তাতে যদি কারো শস্য পরিমাণও উপকার হয় তাতেই আমার প্রশান্তি |

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *