শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক রচনা [JSC,SSC,HSC]

শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক রচনা

ভূমিকা : এ. কে. ফজলুল হক ছিলেন অবিভক্ত বাংলার প্রাণপ্রিয় নেতা এবং মুসলিম জাগরণের অগ্রদূত। অর্ধশতাব্দীরও অধিককাল তিনি বাঙালি জাতির সেবা করে গেছেন। তিনি ছিলেন এদেশের শোষিত, বঞ্চিত এবং নির্যাতিত মানুষের বন্ধু।

 বাংলার মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণের জন্যে তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। ফজলুল হকের বহুমুখী প্রতিভা, নিৰ্ভীকতা, একনিষ্ঠতা ও স্বদেশপ্রেমের জন্যে দেশবাসী তাঁকে ‘শেরে বাংলা’ খেতাবে ভূষিত করেন ।

 

জন্মঃ এ. কে. ফজলুল হকের জন্ম হয়েছিল ১৮৭৩ সালের ২৬ অক্টোবর বরিশাল জেলার রাজাপুর থানার সাটুরিয়া গ্রামে তাঁর মামার বাড়িতে। তাঁর পৈত্রিক নিবাস ছিল বরিশাল জেলার বানারিপাড়া থানার চাখার গ্রামে।

 

বংশ পরিচয়ঃ ফজলুল হকের পিতার নাম কাজী মুহম্মদ ওয়াজেদ আলী এবং মাতার নাম বেগম সৈয়দুন্নেছা। পিতা কাজী মুহম্মদ ওয়াজেদ আলী ছিলেন বরিশাল কোর্টের একজন প্রসিদ্ধ আইনজীবী এবং মাতা সৈয়দুন্নেছা ছিলেন খুবই বুদ্ধিমতী এবং সর্বগুণসম্পন্না নারী।

শিক্ষাজীবন : শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক আগাগোড়াই কৃতি ছাত্র ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি খুব মেধাবী, প্রতিভাশালী এবং অসাধারণ শ্রুতিধর ছিলো। এ সম্পর্কে অনেক কাহিনী এখনও প্রবাদবাক্যের মত প্রচারিত আছে।

লেখাপড়ার প্রতি ছিল তাঁর গভীর অনুরাগ। ১৮৮৬ সালে তিনি মধ্য ইংরেজি পরীক্ষায় বৃত্তি পান। ১৮৮৯ সালে তিনি বরিশাল জেলা স্কুল থেকে বৃত্তি লাভ করে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর ১৮৯১ সালে তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে এফ. এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। 

অতঃপর উক্ত কলেজ থেকেই ১৮৯৩ সালে পদার্থবিদ্যা, রসায়নশাস্ত্র ও গণিতশাস্ত্র— এই তিনটি বিষয়ে তিনি প্রথম শ্রেণীর অনার্স সহ বি. এ. পাস করেন। পরে তিনি ইংরেজি সাহিত্যে এম. এ. ক্লাসে ভর্তি হন। 

কিন্তু ১৮৯৫ সালে এম. এ. পরীক্ষার মাত্র ছয় মাস পূর্বে এক বন্ধুর সাথে জেদ করে অংকে এম. এ. পরীক্ষা দেন এবং কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে সবার বিস্ময়ের উদ্রেক করেন। ১৮৯৭ সালে তিনি বি. এল. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর বরিশাল কোর্টে ওকালতি করার সময় তিনি 

 

কিছুকাল স্থানীয় রামচন্দ্র কলেজে গণিতশাস্ত্রের অধ্যাপনার কাজে ব্রতী ছিলেন। ১৯০০ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গের খ্যাতনামা আইনজীবী স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের সহকারীরূপে কলকাতা হাইকোর্টে আইন ব্যবসা শুরু করেন।

 

কর্মজীবনঃ ১৯০৬ সালে এ. কে. ফজলুল হক আইন ব্যবসা ছেড়ে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের চাকরি গ্রহণ করেন। ১৯১১ সালে চাকরি ছেড়ে আবার আইন ব্যবসা শুরু করেন। ১৯১২ সালে তিনি সক্রিয়ভাবে মুসলিম লীগে যোগদান করেন এবং ঢাকা বিভাগ থেকে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপনা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯২০ সাল পর্যন্ত তিনি এই পরিষদের সদস্য ছিলেন। ১৯২৫ সালে তিনি অবিভক্ত বাংলার গভর্নরের মন্ত্রিসভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯২৭ সালে ফজলুল হক ‘কৃষক-প্রজা পার্টি’ নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। ১৯৩৪ সালে তিনি অবিভক্ত বাংলার শিক্ষামন্ত্রী হন।

 

 ১৯৩৬ সালে কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। ১৯৩৭ সালে তিনি বঙ্গ প্রদেশের প্রথম নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ তারিখে তিনি লাহোর সম্মেলনে ঐতিহাসিক ‘লাহোর প্রস্তাব’ উত্থাপন করেন। ১৯৫৪ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের নির্বাচনে তাঁর যুক্তফ্রন্ট বিপুল ভোটাধিক্যে জয়লাভ করে এবং তিনি প্রধানমন্ত্রী হন।

যুক্তফ্রন্ট সরকার ভেঙে গেলে ১৯৫৫ সালে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় যোগদান করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর নিযুক্ত হন। ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত এই পদে বহাল ছিলেন। ১৯৫৫ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ডক্টর অব ল’ এবং ১৯৫৯ সালে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে ‘হেলাল-এ পাকিস্তান’ খেতাব পেয়েছিলেন।

 

অবদান : শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক এ দেশের অবহেলিত, নির্যাতিত মানুষদের জন্যে যা করে গেছেন তার তুলনা ইতিহাসে বিরল। বাঙালি মুসলমানদের শিক্ষা বিস্তারের জন্যে তিনি জীবনের অধিকাংশ সময় ব্যয় করেন। 

তাঁর প্রচেষ্টাতেই কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজ, লেডী ব্রাবোর্ণ কলেজ, বরিশালে চাখার কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ফজলুল হক হল, ইডেন কলেজ স্থাপিত হয়। এ ছাড়াও এদেশের বিভিন্ন স্থানে বহু কলেজ স্থাপিত হয়।

 তিনি কৃষক-প্রজা আন্দোলন প্রবর্তন করেন এবং ‘বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন’ ও ‘ঋণ সালিশী বোর্ড’ গঠন করেন। এ আইন দেশের ঋণের দায়ে জর্জরিত দরিদ্র কৃষককুলকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেছিল। প্রকৃতপক্ষে তিনি ছিলেন বাংলার জনদরদী নেতা।

মৃত্যু : বাংলার এই প্রাণপ্রিয় নেতা ১৯৬২ সালের ২৭ এপ্রিল, শুক্রবার, বেলা ১০টা ৪০ মিনিটে প্রায় ৮৯ বছর বয়সে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ইহলোক ত্যাগ করেন। তাঁকে ঢাকা হাইকোর্টের কাছে সমাধিস্থ করা হয়।

উপসংহার : বাংলার জনদরদী নেতা শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক আজ আর আমাদের মধ্যে বেঁচে নেই। কিন্তু তাঁর মূল্যবান স্মৃতি বাংলার মানুষের মনের আকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্রের ন্যায় জেগে আছে। এদেশের মানুষ তাঁর অবদানের কথা কোনদিন ভুলবে না।তিনি চিরদিন অমর হয়ে থাকবেন প্রতিটি বাঙালির মনে।

আরো পড়ুন :

➡️পেটেন্ট কি ? এবং পেটেন্টের ধারণা ।

➡️ট্রেড মার্ক কি /ট্রেডমার্ক কাকে বলে ?

➡️বাংলাদেশের ফল রচনা

➡️বীমা কি – বীমা কাকে বলে এবং বীমা কত প্রকার ও কি কি ?

➡️বাংলাদেশের ফুল রচনা

নিয়মিত এডুকেশন সম্পর্কিত তথ্য পেতে যুক্ত থাকুন আমাদের ফেইসবুক পেইজের সাথে ।

 

By Saifur Rahman Arif

আমি মোহাম্মাদ সাইফুর রহমান আরিফ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র । ব্যবস্থাপনার একজন ছাত্র হলেও বর্তমানে কিছুদিন যাবৎ আমি অনলাইনে লিখালিখি কাজের সাথে যুক্ত রয়েছি । এবং Goafta.com সাইটটির একজন আর্টিকেল রাইটার হিসাবে কাজ করছি ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *