ধারণা ব্যাখ্যা কর এইচএসসি

ব্যবস্থাপনার ধারণা হলো একটি সংস্থা, প্রতিষ্ঠান বা সমাজের সমস্ত কাজকে পরিচালনা করার পদ্ধতি । ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য হলো সমস্ত কাজকে সমন্বিত ও সফলভাবে সম্পাদন করা এবং সমস্ত সমস্যা সমাধান করা। ব্যবস্থাপনার কাজগুলি হলো পরিকল্পনা , সংগঠন , কর্মীসংস্থান , নির্দেশনা , প্রেষণা , সমন্বয়, ও নিয়ন্ত্রন ।

ব্যবস্থাপনা শব্দটির ইংরেজি ‘ management ’ শব্দের প্রতিশব্দ ।  ইংরেজি “  management “ শব্দটির সমার্থক শব্দ “ To Handle “  অর্থাৎ চালনা বা পরিচালনা করা । ইংরেজি এই শব্দটি অনেকের মতে  ল্যাটিন বা ইতালিয় “  Maneggiare “ শব্দ থেকে এসেছে ।  যার অর্থ হলো “ To Trained up the Horses “  অর্থাৎ ঘোড়াকে প্রশিক্ষিত করে তোলা বা পরিচালনার উপযোগী করে তোলা । যা কালের বিবর্তনে মানুষকে প্রশিক্ষিত করে তার নিকট থেকে কাজ আদায়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হয়ে পড়েছে  ।

চলুন ব্যবস্থাপনার ধারণা সম্পর্কে সহজে বোঝার জন্য আপনাদের একটি উদাহরণ দেওয়া যাক

ব্যবস্থাপনার ধারণা এর একটি উদাহারণ

ব্যবস্থাপনা প্রকিয়া বা ধাপসমূহের চিত্র
ব্যবস্থাপনা প্রকিয়া বা ধাপসমূহের চিত্র

 

জনাব “ আরিফ সাহেব “ছোট্ট একটি ব্যবসা দিয়ে শুরু করে এখন অনেক বড় ব্যবসা গড়ে তুলেছেন ।  এখন অনেক মানুষ তার প্রতিষ্ঠানে কাজ করে ।  তিনি তার কারখানায় নানান ধরনের নতুন নতুন মেশিন বসিয়েছেন ।  প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রতিটা মানুষ যাতে সর্বোচ্চ দক্ষতার সাথে কাজ করতে পারে সে জন্য তিনি সদা সচেষ্ট থাকেন । 

তিনি কর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তাদের উৎসাহ ধরে রাখতে চেষ্টা করেন । প্রতিটা কাজ আগেই ঠিক করে সবাইকে বুঝিয়ে দেন ।  কাজের খোঁজ খবর রাখেন এবং কাজে ভুল হলে তা শুধরে দেন । 

এরপরও কাজে সমস্যা হলে তা সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করেন ।  তার এই চেষ্টা-প্রচেষ্টাই তাকে আজ সফলতা এনে দিয়েছে ।  তিনি একজন সফল ব্যবস্থাপক ।  এক্ষেত্রে লক্ষ্য অর্জনে গৃহীত আরিফ সাহেবের সকল কর্ম ” ব্যবস্থাপনা “ নামে পরিচিত ।

সহজে অর্থে যদি বলা হয় তাহলে , প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য এতে নিয়োজিত উপকরণাদির কার্যকর ব্যবহারের সকল প্রয়াস- প্রচেষ্টাকে ব্যবস্থাপনা বলে । 

 

একটি প্রতিষ্ঠানে দুই ধরনের উপকরণ থাকে যেমন মানবীয় ও বস্তুগত ।  মানবীয় উপকরণ বলতে মানুষ বা জনশক্তিকে বোঝানো হয় । অন্যদিকে বস্তুগত উপকরণ বলতে যন্ত্রপাতি, মালামাল, অর্থ, বাজার এবং পদ্ধতিতে বোঝানো হয়ে থাকে । এবং এদেরকে সংক্ষেপে 6’M  বলা হয় ।

6’ M এর পূর্ণরূপ হল : Men , Machine , Materials, Money, Market,ও Method ।

এই সকল উপকরণের সঠিক এবং কার্যকর ব্যবহার সম্ভব হলেই একটা প্রতিষ্ঠান তার কাঙ্ক্ষিত ফললাভ অর্জন করতে পারে । তাই এদের কার্যকর ব্যবহারের জন্য ব্যবস্থাপকগণ প্রতিষ্ঠান ধারাবাহিক ও সুশৃঙ্খল কর্মপ্রয়াস চালান ।  যাকে ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া নামে অভিহিত করা হয় ।

এরূপ পদ্ধতি বা প্রক্রিয়ার সাথে পরিকল্পনা , সংগঠন , কর্মীসংস্থান , নির্দেশনা , সমন্বয় ও নিয়ন্ত্রণ কার্য সম্পৃক্ত । তাই প্রকৃত অর্থে ,  উপকরণাদির কার্যকর ব্যবহার করে লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য পরিকল্পনা,  সংগঠন, কর্মীসংস্থান,  নির্দেশনা, প্রেষণা, সমন্বয় ও নিয়ন্ত্রণ কার্যকে ব্যবস্থাপনা বলা হয়ে থাকে । 

ব্যবস্থাপনার বিষয়ক একটা ধারণা চিত্র
ব্যবস্থাপনার বিষয়ক একটা ধারণা চিত্র

পরিকল্পনা : ব্যবস্থাপনার প্রথম এবং প্রধান কাজ হল পরিকল্পনা ।  এটি হলো ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন কাজের ভিত্তি ।  ভবিষ্যতে আমরা কি চাই , কখন এবং কিভাবে চাই ইত্যাদি বিষয়গুলো পূর্বে নির্ধারণ করাকেই পরিকল্পনা বলে ।

সংগঠন :  ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল সংগঠন । সংগঠিতকরনের সমার্থক শব্দ হলো  সুসঙ্ঘবদ্ধকরণ, গঠনকরণ, নির্মাণ, সংগঠন ইত্যাদি ।  অর্থাৎ বিভিন্ন উপাদানকে বা আলাদা আলাদা কোন কিছুকে যখন একত্রে সুসংবদ্ধ ও সম্পর্কযুক্ত করা হয় তখন তাকে সংগঠিতকরণ বা সংগঠন বলে ।

কর্মীসংস্থান : প্রতিষ্ঠানের জন্য দক্ষ জনবল গড়ে তোলার লক্ষ্যে কর্মী  সংগ্রহ, নির্বাচন,  নিয়োগ, প্রশিক্ষণ এবং উন্নয়নের কাজকে কর্মীসংস্থান বলে ।

নির্দেশনা : অধস্তনদের আদেশ দান, উপদেশ ও পরামর্শ প্রদান, তত্ত্বাবধান অনুসরণ কার্য ( Follow Up )কে  নির্দেশনা বলে । 

প্রেষণা : প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনে কর্মীদের উৎসাহিত ও স্বেচ্ছাপ্রণোদিত করার কাজকেই প্রেষণা বলে ।

নিয়ন্ত্রণ : পূর্ব নির্ধারিত আদর্শ মান এর সাথে প্রকৃত কার্যক্রম তুলনা করে নির্ণীত বিচ্যুতি সংশোধনের কার্য ব্যবস্থা বিশেষই হলো নিয়ন্ত্রণ । 

ব্যবস্থাপনার ধারণা সম্পর্কে আরও পরিষ্কার ধারণা পেতে উপরোক্ত প্রক্রিয়াগুলো বা ধাপগুলো ছাড়াও ব্যবস্থাপনার নীতি সমূহ সম্পর্কে জানা প্রয়োজন । 

ব্যবস্থাপনার নীতি বা মূলনীতিগুলোর মধ্যে আধুনিক ব্যবস্থাপনার জনক হেনরি ফেয়লের ১৪ টি মূলনীতি অত্যন্ত জনপ্রিয় । 

হেনরি ফেয়লের ব্যবস্থাপনার ১৪টি মূলনীতি হলো  :

  • কর্ম বিভাজন বা কার্য বিভাগের নীতি
  • কর্তৃত্ব ও দায়িত্বে সমতা রক্ষণের নীতি
  • কেন্দ্রীকরণ ও বিকেন্দ্রীকরণের নীতি
  • আদেশের ঐক্য নীতি
  • নির্দেশনার ঐক্য নীতি
  • সাধারণ স্বার্থে নিজস্ব স্বার্থত্যাগের নীতি
  • জোড়া-মই শিকলের নীতি
  • নিয়মানুবর্তিতার নীতি
  • শৃঙ্খলার নীতি
  • পারিশ্রমিকের নীতি
  • সাম্যের নীতি
  • চাকরির স্থায়িত্বের নীতি
  • উদ্যোগের নীতি
  • একতাই বল নীতি
  • নমনীয়তার নীতি
  • ভারসাম্যের নীতি
  • ব্যতিক্রমের নীতি

 

ব্যবস্থাপনার জনক নাম 
আধুনিক ব্যবস্থাপনার জনক  =হেনরি ফেয়ল
বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার জনক =এফ .ডব্লিউ.টেলর

ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া, ব্যবস্থাপনার নীতি, ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য, ব্যবস্থাপনার কার্যাবলী সকল কিছুকে নিয়েই ব্যবস্থাপনার ধারণা আলোচনা করে । আশাকরি ব্যবস্থাপনার ধারণা সম্পর্কে সুস্পষ্ট একটি আইডিয়া পেয়েছেন । নিয়মিত ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আর্টিকেল পড়তে এবং আপডেট পেতে ফলো করুন আমাদের ফেসবুকে

ব্যবস্থাপনার ধারণা pdf

ব্যবস্থাপনার ধারণা সম্পর্কে আরো বিস্তারিত ধারণা পেতে বা পড়তে ব্যবস্থাপনা পিডিএফ ফাইলটি ডাউনলোড করতে পারেন ।

আরো পড়ুন : 

➡️বৈদেশিক বাণিজ্য কি বা কাকে বলে ?

➡️বাণিজ্য ঘাটতি কি ? বাণিজ্য ঘাটতি বলতে কী বোঝায় ?

➡️ ব্যবসা কি বা ব্যবসা কাকে বলে ? বিস্তারিত পড়ুন ।

By MD Imran hossan

২০১৯ সাল থেকে যুক্ত আছি এই টেকনোলজির দুনিয়ার সাথে । যদিও আমার পড়াশোনা ব্যবসা ও বাণিজ্য নিয়ে । ওয়েবসাইট ডেভেলপ করে দেওয়ার পাশাপাশি বর্তমানে লিখালিখি ও ব্লগিং সেক্টর এর সাথে যুক্ত আছি । নিজের জ্ঞান কে অন্যদের সাথে ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠা করেছি Goafta.com ওয়েবসাইট । স্বপ্ন দেখছি একটি বিশ্বস্ত ব্যবসায়িক ব্লগ গড়ে তোলার । এবং নিজে যতটুকু জানি তা সবার কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার , তাতে যদি কারো শস্য পরিমাণও উপকার হয় তাতেই আমার প্রশান্তি |

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *