ব্যবস্থাপনার ধারণা হলো একটি সংস্থা, প্রতিষ্ঠান বা সমাজের সমস্ত কাজকে পরিচালনা করার পদ্ধতি । ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য হলো সমস্ত কাজকে সমন্বিত ও সফলভাবে সম্পাদন করা এবং সমস্ত সমস্যা সমাধান করা। ব্যবস্থাপনার কাজগুলি হলো পরিকল্পনা , সংগঠন , কর্মীসংস্থান , নির্দেশনা , প্রেষণা , সমন্বয়, ও নিয়ন্ত্রন ।
ব্যবস্থাপনা শব্দটির ইংরেজি ‘ management ’ শব্দের প্রতিশব্দ । ইংরেজি “ management “ শব্দটির সমার্থক শব্দ “ To Handle “ অর্থাৎ চালনা বা পরিচালনা করা । ইংরেজি এই শব্দটি অনেকের মতে ল্যাটিন বা ইতালিয় “ Maneggiare “ শব্দ থেকে এসেছে । যার অর্থ হলো “ To Trained up the Horses “ অর্থাৎ ঘোড়াকে প্রশিক্ষিত করে তোলা বা পরিচালনার উপযোগী করে তোলা । যা কালের বিবর্তনে মানুষকে প্রশিক্ষিত করে তার নিকট থেকে কাজ আদায়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হয়ে পড়েছে ।
চলুন ব্যবস্থাপনার ধারণা সম্পর্কে সহজে বোঝার জন্য আপনাদের একটি উদাহরণ দেওয়া যাক ।
ব্যবস্থাপনার ধারণা এর একটি উদাহারণ
![ব্যবস্থাপনার ধারণা ব্যাখ্যা কর [ এইচএসসি - ২০২৩ ] 2 ব্যবস্থাপনা প্রকিয়া বা ধাপসমূহের চিত্র](https://goafta.com/wp-content/uploads/2023/01/ব্যবস্থাপনা-প্রকিয়া-বা-ধাপসমূহের-চিত্র.jpg)
জনাব “ আরিফ সাহেব “ছোট্ট একটি ব্যবসা দিয়ে শুরু করে এখন অনেক বড় ব্যবসা গড়ে তুলেছেন । এখন অনেক মানুষ তার প্রতিষ্ঠানে কাজ করে । তিনি তার কারখানায় নানান ধরনের নতুন নতুন মেশিন বসিয়েছেন । প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রতিটা মানুষ যাতে সর্বোচ্চ দক্ষতার সাথে কাজ করতে পারে সে জন্য তিনি সদা সচেষ্ট থাকেন ।
তিনি কর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তাদের উৎসাহ ধরে রাখতে চেষ্টা করেন । প্রতিটা কাজ আগেই ঠিক করে সবাইকে বুঝিয়ে দেন । কাজের খোঁজ খবর রাখেন এবং কাজে ভুল হলে তা শুধরে দেন ।
এরপরও কাজে সমস্যা হলে তা সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করেন । তার এই চেষ্টা-প্রচেষ্টাই তাকে আজ সফলতা এনে দিয়েছে । তিনি একজন সফল ব্যবস্থাপক । এক্ষেত্রে লক্ষ্য অর্জনে গৃহীত আরিফ সাহেবের সকল কর্ম ” ব্যবস্থাপনা “ নামে পরিচিত ।
সহজে অর্থে যদি বলা হয় তাহলে , প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য এতে নিয়োজিত উপকরণাদির কার্যকর ব্যবহারের সকল প্রয়াস- প্রচেষ্টাকে ব্যবস্থাপনা বলে ।
একটি প্রতিষ্ঠানে দুই ধরনের উপকরণ থাকে যেমন মানবীয় ও বস্তুগত । মানবীয় উপকরণ বলতে মানুষ বা জনশক্তিকে বোঝানো হয় । অন্যদিকে বস্তুগত উপকরণ বলতে যন্ত্রপাতি, মালামাল, অর্থ, বাজার এবং পদ্ধতিতে বোঝানো হয়ে থাকে । এবং এদেরকে সংক্ষেপে 6’M বলা হয় ।
6’ M এর পূর্ণরূপ হল : Men , Machine , Materials, Money, Market,ও Method ।
এই সকল উপকরণের সঠিক এবং কার্যকর ব্যবহার সম্ভব হলেই একটা প্রতিষ্ঠান তার কাঙ্ক্ষিত ফললাভ অর্জন করতে পারে । তাই এদের কার্যকর ব্যবহারের জন্য ব্যবস্থাপকগণ প্রতিষ্ঠান ধারাবাহিক ও সুশৃঙ্খল কর্মপ্রয়াস চালান । যাকে ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া নামে অভিহিত করা হয় ।
এরূপ পদ্ধতি বা প্রক্রিয়ার সাথে পরিকল্পনা , সংগঠন , কর্মীসংস্থান , নির্দেশনা , সমন্বয় ও নিয়ন্ত্রণ কার্য সম্পৃক্ত । তাই প্রকৃত অর্থে , উপকরণাদির কার্যকর ব্যবহার করে লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য পরিকল্পনা, সংগঠন, কর্মীসংস্থান, নির্দেশনা, প্রেষণা, সমন্বয় ও নিয়ন্ত্রণ কার্যকে ব্যবস্থাপনা বলা হয়ে থাকে ।
![ব্যবস্থাপনার ধারণা ব্যাখ্যা কর [ এইচএসসি - ২০২৩ ] 3 ব্যবস্থাপনার বিষয়ক একটা ধারণা চিত্র](https://goafta.com/wp-content/uploads/2023/01/ব্যবস্থাপনার-বিষয়ক-একটা-ধারণা-চিত্র-300x105.jpg)
পরিকল্পনা : ব্যবস্থাপনার প্রথম এবং প্রধান কাজ হল পরিকল্পনা । এটি হলো ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন কাজের ভিত্তি । ভবিষ্যতে আমরা কি চাই , কখন এবং কিভাবে চাই ইত্যাদি বিষয়গুলো পূর্বে নির্ধারণ করাকেই পরিকল্পনা বলে ।
সংগঠন : ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল সংগঠন । সংগঠিতকরনের সমার্থক শব্দ হলো সুসঙ্ঘবদ্ধকরণ, গঠনকরণ, নির্মাণ, সংগঠন ইত্যাদি । অর্থাৎ বিভিন্ন উপাদানকে বা আলাদা আলাদা কোন কিছুকে যখন একত্রে সুসংবদ্ধ ও সম্পর্কযুক্ত করা হয় তখন তাকে সংগঠিতকরণ বা সংগঠন বলে ।
কর্মীসংস্থান : প্রতিষ্ঠানের জন্য দক্ষ জনবল গড়ে তোলার লক্ষ্যে কর্মী সংগ্রহ, নির্বাচন, নিয়োগ, প্রশিক্ষণ এবং উন্নয়নের কাজকে কর্মীসংস্থান বলে ।
নির্দেশনা : অধস্তনদের আদেশ দান, উপদেশ ও পরামর্শ প্রদান, তত্ত্বাবধান অনুসরণ কার্য ( Follow Up )কে নির্দেশনা বলে ।
প্রেষণা : প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনে কর্মীদের উৎসাহিত ও স্বেচ্ছাপ্রণোদিত করার কাজকেই প্রেষণা বলে ।
নিয়ন্ত্রণ : পূর্ব নির্ধারিত আদর্শ মান এর সাথে প্রকৃত কার্যক্রম তুলনা করে নির্ণীত বিচ্যুতি সংশোধনের কার্য ব্যবস্থা বিশেষই হলো নিয়ন্ত্রণ ।
ব্যবস্থাপনার ধারণা সম্পর্কে আরও পরিষ্কার ধারণা পেতে উপরোক্ত প্রক্রিয়াগুলো বা ধাপগুলো ছাড়াও ব্যবস্থাপনার নীতি সমূহ সম্পর্কে জানা প্রয়োজন ।
ব্যবস্থাপনার নীতি বা মূলনীতিগুলোর মধ্যে আধুনিক ব্যবস্থাপনার জনক হেনরি ফেয়লের ১৪ টি মূলনীতি অত্যন্ত জনপ্রিয় ।
হেনরি ফেয়লের ব্যবস্থাপনার ১৪টি মূলনীতি হলো :
- কর্ম বিভাজন বা কার্য বিভাগের নীতি
- কর্তৃত্ব ও দায়িত্বে সমতা রক্ষণের নীতি
- কেন্দ্রীকরণ ও বিকেন্দ্রীকরণের নীতি
- আদেশের ঐক্য নীতি
- নির্দেশনার ঐক্য নীতি
- সাধারণ স্বার্থে নিজস্ব স্বার্থত্যাগের নীতি
- জোড়া-মই শিকলের নীতি
- নিয়মানুবর্তিতার নীতি
- শৃঙ্খলার নীতি
- পারিশ্রমিকের নীতি
- সাম্যের নীতি
- চাকরির স্থায়িত্বের নীতি
- উদ্যোগের নীতি
- একতাই বল নীতি
- নমনীয়তার নীতি
- ভারসাম্যের নীতি
- ব্যতিক্রমের নীতি
ব্যবস্থাপনার জনক | নাম |
---|---|
আধুনিক ব্যবস্থাপনার জনক = | হেনরি ফেয়ল |
বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার জনক = | এফ .ডব্লিউ.টেলর |
ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া, ব্যবস্থাপনার নীতি, ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য, ব্যবস্থাপনার কার্যাবলী সকল কিছুকে নিয়েই ব্যবস্থাপনার ধারণা আলোচনা করে । আশাকরি ব্যবস্থাপনার ধারণা সম্পর্কে সুস্পষ্ট একটি আইডিয়া পেয়েছেন । নিয়মিত ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আর্টিকেল পড়তে এবং আপডেট পেতে ফলো করুন আমাদের ফেসবুকে ।
ব্যবস্থাপনার ধারণা pdf
ব্যবস্থাপনার ধারণা সম্পর্কে আরো বিস্তারিত ধারণা পেতে বা পড়তে ব্যবস্থাপনা পিডিএফ ফাইলটি ডাউনলোড করতে পারেন ।
আরো পড়ুন :
➡️বৈদেশিক বাণিজ্য কি বা কাকে বলে ?
➡️বাণিজ্য ঘাটতি কি ? বাণিজ্য ঘাটতি বলতে কী বোঝায় ?
➡️ ব্যবসা কি বা ব্যবসা কাকে বলে ? বিস্তারিত পড়ুন ।