বীমা কি - বীমা কাকে বলে এবং বীমা কত প্রকার ও কি কি

কোনো না কোনো কারণে ব্যবসায় ক্ষতির সম্ভাবনাকে ব্যবসায় ঝুঁকি বলে। ঝুঁকি ছাড়া কোনো ব্যবসায় হয় না। প্রাকৃতিক ও অপ্রাকৃতিক কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ঝুঁকির সম্মুখীন হয়। প্রাকৃতিক কারণগুলোর মধ্যে ঝড়, বন্যা, সাইক্লোন, অতিবৃষ্টিপাত অন্যতম। এছাড়া চুরি-ডাকাতি, অপহরণ, অগ্নি, নৌ, রেল ও মটর দুর্ঘটনার কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এসব ঝুঁকি পরিহার বা কমানোর ক্ষেত্রে বিমাকরণ একটি উত্তম উপায়। বিমা একটি ব্যবসায়ও বটে।

 

বীমা কি – বীমা কাকে বলে ?

যে চুক্তির মাধ্যমে কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি কর্তৃক নির্দিষ্ট প্রিমিয়ামের বিনিময়ে কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা বিষয় সম্পত্তি সম্পর্কিত কোনো ঘটনাজনিত ক্ষতির বা ঘটনার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করা হয় তাকে বিমাচুক্তি বা বিমা বলে। উক্ত ক্ষতিপূরণের জন্য বা নির্দিষ্ট অর্থ প্রদানের জন্য যে পক্ষ স্বীকৃত হয় তাকে বিমাকারি এবং যার ক্ষতিপূরণের জন্য বা যাকে অর্থ প্রদানের জন্য উক্ত চুক্তি সম্পাদিত হয় তাকে বিমাগ্রহীতা বলে। 

চুক্তি অনুযায়ী বিমাগ্রহীতা এককালীন বা নিয়মিত কিস্তিতে যে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বিমাকারীকে প্রদান করে তাকে প্রিমিয়াম বলা হয়। বিমাচুক্তি যে দলিল দ্বারা সম্পাদিত হয় তাকে বিমাপত্র বলা হয়। বিমাপত্রে বিমার যাবতীয় শর্ত লিখিত থাকে। বিমাকে ক্ষতিপূরণের চুক্তি বলা হয়। তবে জীবন বিমার ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়।

 

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও বিমা ব্যবস্থা চালু আছে। ১৯৩৮ সালে উপমহাদেশে প্রবর্তিত সালে নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে যা বিমা আইন ২০১০ নামে পরিচিত। বিমা আইন এতদিন বাংলাদেশে চালু ছিল। উক্ত আইনের পরিবর্তন, পরিমার্জন ও সংশোধন করে ২০১০ সালে ।

ব্যবসায়ে বিমার প্রয়োজনীয়তা (Necessity of Insurance in Business)

একজন ব্যবসায়ীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে ঝুঁকি নিরূপণ। পণ্য উৎপাদন ও বিক্রয়ে বহুবিধ ঝুঁকি বিদ্যমান। যেমন কোনো জিনিসের ভৌতিক ক্ষতি, চুরি, কর্মচারীদের পীড়া, আকস্মিক দুর্ঘটনা, আগুন, জাহাজ ডুবি ইত্যাদি ঘটনার কারণে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান যে কোনো মুহূর্তে ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। 

বিমাকারি প্রতিষ্ঠান বিমাকৃত ব্যক্তি বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিতে উল্লিখিত প্রদত্ত প্রিমিয়ামের বিনিময়ে এই জাতীয় ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ দিয়ে থাকে। ব্যবসার জন্য তাই বিমা অত্যন্ত সহায়ক। 

বিমাকারী প্রতিষ্ঠান না থাকলে ঝুঁকির আশঙ্কায় অনেক ব্যবসায়ীকেই প্রাথমিক পর্যায়েই তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হতো। তাই ব্যবসায়ের ঝুঁকিগত প্রতিবন্ধকতা ও বিরাজমান অনিশ্চয়তা দুর করে ব্যবসায়কে নিরবচ্ছিন্নভাবে পরিচালনার জন্য বিমার প্রয়োজনীয়তা খুব বেশি।

বীমা কত প্রকার ও কি কি (What are the types of insurance?)

বর্তমানে বিভিন্ন প্রকার বিমার প্রচলন হয়েছে। এর মধ্যে চার প্রকার বিমা সর্বাধিক প্রচলিত। 

১. জীবন বিমা, 

২. নৌ বিমা, 

৩. অগ্নি বিমা এবং 

৪. দুর্ঘটনা বিমা।

 

বর্তমানকালে মানুষ ক্রমশই বিমার সুবিধা উপলব্ধি করায় উপরোক্ত চার প্রকার বিমা ছাড়াও আরো কয়েক শ্রেণির বিমার প্রচলন হয়েছে, যেমন চৌর্য বিমা, বিশ্বস্ততা বিমা, দাঙ্গা বিমা, দায় বিমা, মোটর গাড়ি বিমা, শস্য বিমা ইত্যাদি। নিচে কয়েকটি বিমার উপর আলোকপাত করা হলো-

জীবন বিমা (Life Insurance)

বিমা ব্যবসায়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে জীবন বিমা। যে বিমা চুক্তির মাধ্যমে বিমাকারী বিমা কিস্তির বিনিময়ে বিমা গ্রহণকারী ব্যক্তিকে বা তার নির্বাচিত ব্যক্তি বা উত্তরাধিকারীকে একটি বিশেষ সময়ের পরে মৃত্যুতে বিমাকৃত অর্থ প্রদান করে থাকে সেই বিমা চুক্তিকেই জীবন বিমা বলে।) এ বিমার বা বিমাগ্রহীতার বিষয়বস্তু হচ্ছে মানুষের জীবন। যেহেতু মানুষের জীবনের ক্ষতিপূরণের নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না,তাই জীবন বিমাকে ক্ষতিপূরণের চুক্তি বলা হয় না।

 

অগ্নি বিমা (Fire Insurance)

যে বিমা চুক্তির মাধ্যমে বিমা গ্রহীতা ব্যক্তিকে অগ্নিজনিত ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হয় তাকে অগ্নি বিমা বলে। সাধারণত ঘরবাড়ি, পণ্য,কারখানা, গুদাম, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি আগুনে পুড়ে যাওয়া থেকে সুরক্ষার জন্য এইধরনের অগ্নি বিমা করা হয়।

 

নৌ বিমা (Marine Insurance)

(যে বিমায় নদী ও সামুদ্রিক যাত্রা থেকে সৃষ্ট ঝুঁকির জন্য ক্ষতিপূরণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় তাকে নৌ বিমা বলা হয়।)সারা পৃথিবীর ব্যবসায়-বাণিজ্যের অধিকাংশ পণ্যই নৌপথে পরিবাহিত হয়। তাই নৌপথে বিরাজমান ঝড়-ঝঞ্ঝা, ঢেউ, সুনামি, দস্যুতা, যুদ্ধ-বিগ্রহসহ সকল প্রকার ঝুঁকি এড়াতে নৌ বিমা করা হয় ।

 

দুর্ঘটনা বিমা (Accident Insurance):

ব্যক্তির জীবন বা সম্পত্তি বিনাশের ঝুঁকি দুর্ঘটনা বিমার আওতাভুক্ত। এ জাতীয় বিমার শর্তানুসারে নির্দিষ্ট প্রিমিয়ামের পরিবর্তে আশঙ্কিত দুৰ্ঘটনাজনিত ক্ষতি সংঘটিত হলে বিমাকারী বিমাগ্রহীতাকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করে।

 

উপরোক্ত ব্যবসা সংক্রান্ত আইনগত কার্যক্রম ছাড়া আরও বেশ কিছু আইন রয়েছে যা একজন ব্যবসায় উদ্যোক্তার জানা থাকলে ব্যবসা পরিচালনা সহজতর হয়। বিশেষ করে শ্রমিক নিয়োগসংক্রান্ত আইন, কারখানা আইন, ব্যবসায় ঝুঁকি মোকাবেলা আইন এবং ব্যাংকিং আইন সম্পর্কে জ্ঞান ব্যবসা পরিচালনার জন্য অনুকূল।

 

আরো পড়ুন :

➡️পেটেন্ট কি ? এবং পেটেন্টের ধারণা ।

➡️ট্রেড মার্ক কি /ট্রেডমার্ক কাকে বলে ?

➡️ট্রেডমার্ক নিবন্ধন পদ্ধতি / ট্রেডমার্ক করার নিয়ম

➡️কপিরাইট কি বা কপিরাইট কাকে বলে ? 

নিয়মিত এডুকেশন সম্পর্কিত তথ্য পেতে যুক্ত থাকুন আমাদের ফেইসবুক পেইজের সাথে ।

By MD Imran hossan

২০১৯ সাল থেকে যুক্ত আছি এই টেকনোলজির দুনিয়ার সাথে । যদিও আমার পড়াশোনা ব্যবসা ও বাণিজ্য নিয়ে । ওয়েবসাইট ডেভেলপ করে দেওয়ার পাশাপাশি বর্তমানে লিখালিখি ও ব্লগিং সেক্টর এর সাথে যুক্ত আছি । নিজের জ্ঞান কে অন্যদের সাথে ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠা করেছি Goafta.com ওয়েবসাইট । স্বপ্ন দেখছি একটি বিশ্বস্ত ব্যবসায়িক ব্লগ গড়ে তোলার । এবং নিজে যতটুকু জানি তা সবার কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার , তাতে যদি কারো শস্য পরিমাণও উপকার হয় তাতেই আমার প্রশান্তি |

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *