বাংলাদেশের ফুল রচনা
সূচনা ঃ ফুল হচ্ছে প্রকৃতির সুন্দরতম উপহার। আর সুন্দরের সাথে আনন্দের রয়েছে নিবিড় সম্বন্ধ। তাই তো দেখা যায় ফুলের সৌন্দর্য দেখলেই হৃদয় পবিত্র আনন্দে ভরে ওঠে। এজন্য ফুলের আদর রয়েছে সবদেশে—সর্বকালে। বাংলাদেশ তো প্রকৃতির আদরের দুলালী। এর প্রকৃতি ঋতুতে ঋতুতে নানা বর্ণ গন্ধময় ফুলহারে সাজিয়ে অপরূপ করে তোলে।
গ্রীষ্মকালের ফুল ঃ বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ দু’মাস গ্রীষ্মকাল। এ সময়ে প্রকৃতি শুষ্ক ভয়াল রূপ ধারণ করে। বাতাস হয় উষ্ণ, খাল-বিল জল শূন্য হয়, সূর্যের উত্তাপ হয় প্রচণ্ড। সব মিলে গ্রীষ্মের উত্তাপে মানুষসহ পশু-পাখিরাও এ সময়ে কষ্ট ভোগ করে থাকে।
তরু-লতাও গ্রীষ্মের দাবদাহে প্রায় দগ্ধ হয়ে যায়। তবে মাঝে মধ্যে যে বারিধারা নেমে আসে তারই ফলে মৃতকল্প প্রকৃতিতে যেন নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়ে থাকে। তাই গ্রীষ্মকালেও কোন ফুলের সমারোহ চোখে পড়ে। চাঁপা, বেলী, বকুল, করবী এগুলো গ্রীষ্মকালের ফুল। এসব ফুলের সৌন্দর্য ও সুবাস বড়ই আনন্দদায়ক।
বর্ষাকালের ফুল : বাংলাদেশ ঋতু বৈচিত্র্যের দেশ। ঋতুতে ঋতুতে হয় এদেশের প্রাকৃতিক দৃশ্যের পরিবর্তন। তাই তো গ্রীষ্মের শেষে বর্ষা এলেই শুরু হয় বৃষ্টিপাতের পালা। কখনও ঝরঝর ধারে ঝরে বাদলের ধারা।
দিনের পর দিন নদী-নালা, খাল-বিল, মাঠ-ঘাট পানিতে করে থৈ থৈ। ঘরের বাইরে যাওয়া কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। এ সময় জানালার ধারে বসলে কদম ফুলের গন্ধ কেয়া, মনকে দেয় আনন্দ ; আবার মাঠের দিকে তাকালে দেখা যায় শাপলা ফুলের শুভ্র হাসি। এছাড়া বাগানে কেতকী, কামিনী, কুন্দ, জুঁই প্রভৃতি ফুলের শোভা মনকে করে পবিত্র ও আনন্দিত ।
শরৎ ও হেমন্তকালের ফুল : বর্ষাকে অনুসরণ করে প্রকৃতিতে আগমন ঘটে শরৎ ও হেমন্ত ঋতুর। এ সময় বর্ষার বৃষ্টিপাত যায় কমে আকাশের মেঘগুলো হয়ে যায় সাদা, মাঠ ভরে ওঠে শস্যে।
শরৎকালে দিগন্ত বিস্তৃত মাঠে সবুজ ধান গাছের কচি পাতা নয়ন মনে বুলিয়ে দেয় শান্তির পরশ। আবার হেমন্তে সবুজকে ভেদ করে সারা মাঠে সোনালী ধানের শীষ ওঠে জেগে। আস্তে আস্তে ধান পেকে সোনার ফসল হয়ে যায়।
দেখে মনে হয় প্রকৃতি সোনার চাদর বিছিয়ে দিয়েছে মাঠের বুকে। আর সে সঙ্গে স্থলপদ্ম আর জলপদ্মের সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা, শেফালী, কামিনী ফুলের সৌন্দর্য ও সুবাস মনকে দেয় আনন্দ আর নয়নকে দেয় তৃপ্তি। নদী তীরে একটানা কাশ ফুলের অমল ধবল শোভা মনকে দেয় উদাস করে।
শীতকালে ফুল : শরৎ-হেমন্ত শেষে প্রকৃতিতে জাগে শীতের শিহরণ। এ সময়ে প্রকৃতির সজীবতা ও প্রাণচাঞ্চল্য যেন অনেক পরিমাণে ক্ষীণ হয়ে আসে। কিছু কিছু গাছ পাতা ঝরিয়ে রিক্ত শাখা-প্রশাখা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তবে এটাই সব দৃশ্য নয়।
এ সময়ে বাগানে ফুল ফোটে থাকে প্রচুর পরিমাণে। এই শীত ঋতুতে অতসি, গাঁদা, দোপাটি, কুন্দ, সূর্যমুখী, গোলাপ, রজনীগন্ধা, চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া প্রভৃতি ফুল পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রস্ফুটিত হয়ে প্রকৃতিকে নিবেদন করে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
ফুলের এ সমারোহ দেখে শীতকে বলা হয় ফুলের ঋতু। বর্তমানে কোন কোন দেশ রজনীগন্ধা রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে।
বসন্ত ঋতুর ফুল : বসন্তকে বল হয় ঋতুরাজ। শুধু কথার কথা নয়, সাজ-সজ্জার মধ্যেই তার রাজকীয় ভাব পরিস্ফুট। তার যাদুময়ী স্পর্শে শীতের প্রকৃতি হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত। তখন দেখা যায় গাছে গাছে নব নব কিশলয়, বিচিত্র ফুল, ফুলে ফুলে ভ্রমরের গুঞ্জন, আর মলয় সমীরণের মৃদু হিল্লোল।
পত্র-পুষ্পের প্রাচুর্যের মধ্যেই বসন্তের সম্পদ নিহিত। এ সময়কার শিমুল, অশোক, কৃষ্ণচূড়া, পলাশ প্রভৃতি রক্তিম ফুলগুলো চোখের দৃষ্টি কেড়ে নেয় এবং প্রাণে দেয় আনন্দের পরশ।
এছাড়া আম্রমুকুলের সুবাস আর কোকিলের প্রাণ মাতানো কুহুতান তো বসন্ত ঋতুর অপূর্ব অবদান ।
উপসংহার : বাংলাদেশকে বলা যায় ফুলের দেশ। সারা বছর ধরে এখানে পাওয়া যায় নানা রং ও গন্ধের ফুল। ফুলের সৌন্দর্য ও সুবাস অন্তরকে করে পবিত্র আর মনকে করে প্রফুল্ল। এজন্যই আজকাল ফুল উৎপাদনে যত্ন নেওয়া হচ্ছে। রাজধানী শহর ঢাকায় প্রতি বছর পুষ্প প্রদর্শনীর ব্যবস্থা হয়ে থাকে।
এতে ভাল উৎপাদনকারীকে পুরস্কৃত করে ফুল চাষে উৎসাহ দেবার ব্যবস্থা রয়েছে। দেশের অন্যত্রও পুষ্প প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করে ফুল চাষে সৌখিন দেশবাসীকে উৎসাহিত করা যেতে পারে। ফুলের প্রতি আকর্ষণ যতই বাড়বে ততই দেহ-মন পবিত্র ও সুন্দর হবে ।
আরো পড়ুন :
➡️ট্রেডমার্ক নিবন্ধন পদ্ধতি / ট্রেডমার্ক করার নিয়ম
➡️কপিরাইট কি বা কপিরাইট কাকে বলে ?
নিয়মিত এডুকেশন সম্পর্কিত তথ্য পেতে যুক্ত থাকুন আমাদের ফেইসবুক পেইজের সাথে ।