বাংলাদেশের ফল রচনা
সূচনা ঃ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমাদের এই বাংলাদেশ। বছরে ছয়টি ঋতুই পর্যায়ক্রমে প্রকৃতিকে আপন বৈশিষ্ট্যে সাজিয়ে থাকে, আবার সে সঙ্গে উপহারও দেয় রূপ-রস-গন্ধে ভরা সুস্বাদু বিভিন্ন ফলের ভাণ্ডার। বাংলদেশের ফলের মধ্যে নারকেল ও কলা সারা বছরই পাওয়া যায়, কিন্তু অন্যান্য ফলগুলো বিশেষ বিশেষ ঋতুতে জন্মে থাকে। নারকেল একটি মুখরোচক ফল। কচি নারকেলকে ডাব আর পাকা নারকেলকে ঝুনা বলা হয়। ডাবের পানি যেমন সুস্বাদু তেমনি উপকারী। কলা বাঙালিদের বড়ই প্রিয় ফল। সবরি, কবরি, সাগর, বিচি প্রভৃতি শ্রেণীর কলা এদেশে উৎপন্ন হয়ে থাকে।
গ্রীষ্মকালের ফল ঃ বাংলাদেশ ষড় ঋতুর দেশ। এই ষড় ঋতুর বর্ষ পরিক্রমার পথে প্রথমেই আসে গ্রীষ্মকাল। তখন সূর্যের উত্তাপ হয় প্রচণ্ড, মাঠ-ঘাট তৃণশূন্য, খাল-বিল জলশূন্য, আর বাতাস হয় উষ্ণ। এমন অবস্থায় বাংলাদেশের মানুষ অস্বস্তি বোধ করে, গরমে ছটফট করতে থাকে। গরমের জ্বালাকে ভুলিয়ে রাখার জন্য প্রকৃতি তখন এগিয়ে আসে ফলের উপহার নিয়ে। আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, বেল প্রভৃতি ফল প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় এই গ্রীষ্মকালে। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবসহ এসব ফল আস্বাদনের মাধ্যমে ঘরে ঘরে সৃষ্টি হয় এক আনন্দ ঘন পরিবেশ।
বর্ষাকালের ফল ঃ ঋতু পরিবর্তনের ধারায় গ্রীষ্মের পরই আসে বর্ষা। গ্রীষ্মকালের ফল আম, জাম, কাঁঠাল এগুলোও বর্ষার শুরুতে পাওয়া যায় কিছু পরিমাণে। আর সে সংগে যুক্ত হয় বর্ষার উপহার— আনাসর, আমড়া, পোয়ারা, বাতাবী লেবু ইত্যাদি। সব মিলে বর্ষাকালেও বাংলাদেশে ফল নিত্যন্ত কম থাকে না ।
শরৎ ও হেমন্তকালের ফল : বর্ষার পরই প্রকৃতিতে প্রকাশ পায় শান্ত-স্নিগ্ধ-মধুর শরৎ ও হেমন্ত ঋতু। এ ঋতু দুটির প্রধান ফল হচ্ছে তাল ও নারিকেল। নারিকেল যদিও সারা বছরই পাওয়া যায় তবুও এ সময়ে ঝুনা নারিকেল পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে। এজন্য তালের পিঠার ন্যায় নারিকেলের তৈরি রকমারী মুখরোচক খাবার তৈরি হয় এই শরৎ ও হেমন্ত ঋতুতেই। এছাড়া আমলকী হচ্ছে এ সময়কার বিশেষ উপকারী ফল। বিশেষ ধরনের ওষুধ তৈরির জন্য আমলকীর যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে।
শীতকালের ফল : শীতের দেশের ন্যায় না হলেও বাংলাদেশেও শীতকালে প্রকৃতি যেন ঝিমিয়ে পড়ে। তবে এ সময়ে শাকসবজি ও তরি-তরকারি উৎপন্ন হয় প্রচুর পরিমাণে। এই শীতকালে ফলের উৎপাদন কিন্তু নেহায়েত কম নয়। কুল, কামরাঙ্গা, কমলা, পেঁপে, ইক্ষু এ সময়ে পাওয়া যায়। আর এসঙ্গে আঙ্গুর, ডালিম, বেদানা, পেস্তা, বাদাম ফলের বাজারকে করে তোলে আকর্ষণীয়। পৌষ মাসের শীতকে উপেক্ষা করে দুরন্ত ছেলে-মেয়েরা ভোর হতে না হতেই ছুটে চলে কুল কুড়াবার জন্য। মায়ের বকুনি সত্ত্বেও তারা এ কাজে পায় প্রচুর আনন্দ। এটি গ্রাম-বাংলার একটি শাশ্বত চিত্র।
বসন্তকালের ফল : শীতের পরেই ঋতুরাজ বসন্তের আগমন। শীতে ম্রিয়মান প্রকৃতি বসন্তের যাদুময়ী স্পর্শে হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত । গাছে গাছে নব নব পল্লব, বনে বনে ফুলের সৌরভ, কোকিলের কুহুতান, মলয়ের মৃদুগান, চারিদিকে বসন্তের জয়ধ্বনি। তবে বসন্ত যতটা শোভাময়, ততটা কিন্তু ফলবন্ত নয়। গ্রীষ্মকালে যে ফলের প্রাচুর্য থাকে তার প্রস্তুতি পাঠ এই বসন্তকালে। তবে এ সময়কার ফলের মধ্যে ফুটি, তরমুজ, বেল, ডাব, কলা বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
উপসংহার ঃ বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থেই সুজলা সুফলা। এখানকার নদী-নালায় বিলে-ঝিলে যেমন রয়েছে প্রচুর জল, আবার বিভিন্ন ঋতুতে তেমনি এখানে পাওয়া যায় রকম রকম ফল। কিন্তু দুঃখের বিষয় ফল উৎপাদনের জন্য আমাদের তেমন যত্ন নেই। যত্ন করলে ফলের উৎপাদন বাড়বে এবং তা রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের ব্যবস্থা হবে। সুতরাং ফল উৎপাদনে যত্নবান হওয়া দরকার।
আরো পড়ুন :
➡️পেটেন্ট কি ? এবং পেটেন্টের ধারণা ।
➡️ট্রেড মার্ক কি /ট্রেডমার্ক কাকে বলে ?
➡️ট্রেডমার্ক নিবন্ধন পদ্ধতি / ট্রেডমার্ক করার নিয়ম
➡️কপিরাইট কি বা কপিরাইট কাকে বলে ?
নিয়মিত এডুকেশন সম্পর্কিত তথ্য পেতে যুক্ত থাকুন আমাদের ফেইসবুক পেইজের সাথে ।