সূচনা : ছায়া ঢাকা, পাখি ডাকা আমাদের এই বাংলাদেশ। এদেশ একদিকে যেমন বন-জঙ্গল, গাছ-পালায় ভরা তেমনি পাখির কলরবে মুখর। প্রত্যুষে পাখির ডাকে যেমন এদেশের মানুষের ঘুম ভাঙে, তেমনি সন্ধ্যায় পাখির কলরব স্তব্ধ হবার আগেই মানুষ ঘরে ফিরে আসে। এদেশের বিলে-ঝিলে, ঝোপে-ঝাড়ে, গাছের ডালে নানা জাতের অসংখ্য পাখি বাস করে।
এদের মধ্যে কাক, চড়ই, শালিক, দোয়েল, কবুতর, ‘মাছরাঙা, বক, চিল, বাজ, টিয়ে প্রভৃতি পাখিকে প্রায় সর্বত্র দেখা যায়। পরিচয় : প্রত্যুষে যে পাখির একটানা সুরে আমাদের ঘুম ভেঙে যায় সেটি দোয়েল। কালো আর সাদা রঙের ছোট পাখিটি আমাদের ঘরের পাশের ঝোপেই দেখতে পাওয়া যায়। বুলবুলি আরেকটি ছোট্ট গানের পাখি।
সেটিও আমাদের ঘরের আশে পাশে থাকে। অতি প্রত্যুষে যে পাখির অবিশ্রান্ত ডাকাডাকি আমাদের সচকিত করে তোলে তা কাক। কথায় বলে কাকডাকা ভোর। এটি আমাদের খুব পরিচিত পাখি। এই পাখিটি দেখতে কুচকুচে কালো রঙের। এর স্বভাব খুব চঞ্চল। হাতের কাছে যে খাদ্যসামগ্রী পাবে তাই ছোঁ মেরে নিয়ে যাওয়াতে এই পাখি অত্যন্ত দক্ষ।
এই স্বভাবের জন্য অনেকে পাখিটিকে পছন্দ করে না। কিন্তু এটি পচা-নোগ্রা জিনিস খেয়ে আমাদের চারপাশের পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখছে। বাংলাদেশের সর্বত্র এ পাখি অত্যন্ত বেশি সংখ্যায় দেখা যায় ।
দেখতে কাকের মত কালো হলেও যে পাখির মধুর সুরে আমাদের মন ক্ষণিকের জন্য উতলা হয়ে ওঠে তার নাম কোকিল। বসন্তকালে কোকিলের কুহু কুহু সুরে চারদিক মুখরিত হয়ে ওঠে। কোকিলের এই মধুর রবের জন্য আমরা তাকে ভালবাসি। বসন্ত শেষ হয়ে গেলে পাখিটি লোকালয় ছেড়ে বনের দিকে চলে যায়। বসন্তকালে আর একটি পাখির গান শোনা যায়, সেটি বউ কথা কও। অন্য ঋতুতে তার তেমন কোন সাড়া পাওয়া যায় না।
গৃহপালিত পাখির মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হচ্ছে কবুতর বা পায়রা। এটি আমাদের ঘরের পাখি। ধূসর রংয়ের জালানি কবুতরগুলো সাধারণত ঘরের চালের আনাচে কানাচে, দালানের কার্নিশে বাসা বাঁধে। সাদা কবুতরগুলোর জন্য খোপ বেঁধে দিতে হয়। পায়রাগুলো খুব শিক্ষিত হয়ে থাকে। এগুলো নানা রকম খেলা দেখাতে পারে।
এছাড়া কবুতরগুলো যখন গলা ফুলিয়ে বাক-বাকুম করতে থাকে তখন খুব সুন্দর দেখায়। ঘুঘু আর কবুতর দেখতে প্রায় এক রকমের তবে গায়ের রং আলাদা। ঘুঘু গাছের উঁচু ডালে বাসা বাঁধে। শালিক, ময়না, শ্যামা প্রভৃতি পাখিকে প্রায় সর্বত্র দেখা যায়। শালিক জমির পোকা মাকড় খেতে ভালবাসে।
অনেকে বাড়িতে ময়না পুষে থাকে। পোষা পাখির মধ্যে টিয়া আর একটি পাখি। এগুলো দেখতে হালকা সবুজ রংয়ের। গলায় কণ্ঠী উঠলে এগুলোকে সুন্দর দেখায়। টুনটুনি দেখতে খুবই সুন্দর একটি পাখি। সব ঋতুতে এ পাখি দেখা যায়। দিনের বেলায় সে সর্বক্ষণ ব্যস্ত থাকে গান শোনানোর জন্য ।
চড়ই পাখি প্রায় সব বাড়িতেই দেখা যায়। ঘরের ছাদে, টিনের চালের কোণায় নানা খড়কুটো জড়ো করে এরা বাসা বাঁধে। এরা কখনো এক জায়গায় স্থির থাকতে পারে না। সারাক্ষণ কিচির-মিচির করা এদের স্বভাব।
বাবুই পাখি দেখতে অনেকটা চড় ই পাখির মতো ; কিন্তু এদের স্বভাব বুনো। খেজুরের পাতা চিরে এরা তাল বা খেজুর গাছে এমন সুন্দর বাসা তৈরি করে যে দেখলে অবাক হতে হয়। এদের শিল্পনৈপুণ্য একজন পেশাদার শিল্পীকেও হার মানায় ।
আমাদের দেশে খালে-বিলে অসংখ্য পাখি দেখা যায়। এদের মধ্যে বক, সারস, পানকৌড়ি, ডাহুক, বালিহাঁস বিশেষ উল্লেখযোগ্য। বক ও সারস দেখতে দুধের মত সাদা। এরা খুব অধ্যবসায়ী। পানকৌড়ি পানিতে ডুব দিতে ভালবাসে। ডাহুক, কোড়া প্রভৃতি পাখি একটানা ডাকতে পারে। বালিহাঁস শীত প্রধান দেশের পাখি। কিন্তু শীতের মৌসুমে এদেরকে বাংলাদেশের বিল, হাওড়েও প্রচুর দেখতে পাওয়া যায়। শীতকালে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে নাম না জানা অসংখ্য পাখি বাংলাদেশের বিল-হাওড়ে এসে নামে। শীত শেষ হলেই আবার তারা চলে যায়। এদেরকে শীতের অতিথি পাখি বলা হয়।
গাঙচিল আর গাঙশালিককে নদীর ধারে দেখতে পাওয়া যায়। গাংচিল নদীর ওপর উড়ে উড়ে শিকার ধরতে ভালবাসে। এদের দেখতেও খুব সুন্দর দেখায়। এছাড়া শঙ্খচিল, মাছরাঙ্গা পাখিকে নদীর ধারে, পুকুর পাড়ে, খালে-বিলে সর্বত্র দেখা যায়। এরা খুব সুন্দরভাবে মাছ শিকার করতে পারে।
বাজ, শকুন, পেঁচা, হুতুম, বাদুর প্রভৃতি পাখি দেখতে বিভৎস। বাজ পাখি গাছের উঁচু ডালে ঠাঁয় বসে থাকে। সুযোগ পেলে এরা পুকুরের মাছ, হাঁস-মুরগির বাচ্চা ইত্যাদি ছোঁ মেরে নিয়ে যায়। শকুন সাধারণত লোকালয়ে বাস করে না। কিন্তু কোথাও মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখলে এরা ঠিক এসে হাজির হয়। পেঁচা, হুতুম, বাদুর অন্ধকারের পাখি। এরা দিনের আলো সহ্য করতে পারে না। রাত্রির অন্ধকারে এরা বের হয়। এদের ডাকও অত্যন্ত কর্কশ।
কালিম, কাঠ-ঠোকরা প্রভৃতি বাংলাদেশে আরো অসংখ্য পাখি দেখতে পাওয়া যায়। তবে এগুলো তত পরিচিত নয়।
উপসংহার ঃ পাখি বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অংশবিশেষ। বাংলাদেশের যেখানেই যাই না কেন সেখানেই কোন না কোন পাখি দেখতে পাব। কিন্তু শিকারীদের অত্যাচারে বর্তমানে বাংলাদেশে পাখির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এমন কি অনেক পাখির বংশ পর্যন্ত লোপ পেতে বসেছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য সরকারের উচিত আইন প্রণয়ন করে পাখি শিকারের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করা। তবে পাখি সংরক্ষণের জন্য সরকারী প্রচেষ্টার চেয়ে বেসরকারি উদ্যোগ অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
আরো পড়ুন :
নিয়মিত এডুকেশন সম্পর্কিত তথ্য পেতে যুক্ত থাকুন আমাদের ফেইসবুক পেইজের সাথে ।