বঙ্গবন্ধুর জীবনী বাংলা রচনা

বঙ্গবন্ধুর জীবনী বাংলা রচনা

ভূমিকা:

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাঙালি জাতির জনক, সংগ্রামী নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহসান এদেশের কোটি মানুষের কাছে একটি প্রিয় নাম ৷

বঙ্গবন্ধুর জন্ম :

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান ও মায়ের নাম সায়রা খাতুন।

বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাজীবন:

শেখ মুজিবুর রহমানের শিক্ষাজীবন শুরু হয় গ্রামের সীমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তারপর তিনি গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল থেকে ১৯৪১ সালে মেট্রিক, ১৯৪৪ সালে কলকাতার ইসলামিয়া কলেজ থেকে আই. এ. ও ১৯৪৬ সালে একই কলেজ থেকে বি. এ. পাশ করেন।

বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি জীবন:

ইসলামিয়া কলেঝে অধ্যয়নকালে প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সান্নিধ্যে আসেন তিনি। তিনি তাঁর স্নেহ, আনুকূল্য ও দিকনির্দেশনায় সক্রিয় রাজনীতিতে ক্রমান্বয়ে এগুতে থাকেন। ছাত্রজীবনে তিনি ‘নিখিলবঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগ’. ‘নিখিল ভারত ছাত্র ফেডারেশন’ প্রভৃতি সংগঠনের সঙ্গে কাজ করেন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আগে তিনি গোপালগঞ্জ মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক হন। এসময় তিনি পাকিস্তান আন্দোলনে অংশ নেন। কিন্তু পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার কিছুকাল পরেই তাঁর মোহভঙ্গ হয় ।

১৯৪৭ সালে সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর তেকেই পূবৃবঙ্গের মানুষের ওপর পাকিস্তানি শাসকদের শাষণ ও শাসন চলতে থাকে। পূর্ববাংলাকে মুক্ত করাই তকন তাঁর রাজনৈতিক জীবনের প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়।

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়ার সময় থেকেই পাকিস্তানি শাসকদের শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম আরম্ভ করেন। ফলে ১৯৪৯ সালের ১১ই মার্চ পাকিস্তান সরকার তাঁকে গ্রেফতার করে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করে।

বঙ্গবন্ধুর ভাষা আন্দোলন :

১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে শুরু হয় তীব্র পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলন। বঙ্গবন্ধুকে এসময় কারারুদ্ধ করা হয়।

 

৫৪ সালের নির্বাচন :

১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। নির্বাচনে বিজয়ী যুক্তফ্রন্ট যে মন্ত্রিসভা গঠিত করে, বঙ্গবন্ধু ঐ মন্ত্রিসভার অন্যতম সদস্য হন। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান দেশে সামরিক শাসন প্রবর্তন করেন। আইয়ুব খান ক্ষমতা হাতে নিয়ে বিনা কারণে বঙ্গবন্ধুকে কয়েক বছর কারারুদ্ধ করে রাখেন। ১৯৬৬ সালে জননেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক ৬ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

৬ দফা আন্দোলন ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা :

৬দফা আন্দোলনের জন্য তাঁকে আবারও কারারুদ্ধ করা হয় এবং তাঁকে আবারও কারারুদ্ধ করা হয় এবং তাঁর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আগরতলা ঘড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে। ১৯৬৯ সনের প্রবর গণআন্দোলনের মুখে ২২শে ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু কারাগার থেকে মুক্ত লাভ করেন। সারাদেশ প্রবল আন্দোলনের মুখে আইয়ুব খান ইয়াহিয়া খানের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করে রাজনীতে থেকে প্রস্থান করেন।

অসহযোগ আন্দোলনও মুক্তযুদ্ধ :

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুলভাবে জয়ী হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের বেআইনি ও ষড়যন্ত্রমূলক কার্যকলাপের প্রতিবাদে ১৯৭১ সালের ২রা মার্চ বঙ্গবন্ধু দেশব্যাপী অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়ে ইয়াহিয়া সরকারকে অচল করে দেন ।

বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চ-এর ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্যমে বাঙালি জাতিকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামের আহ্বান জানান ও স্বাধনিতার ডাক দেন তিনি বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এ সংগ্রাম যখন চরম রূপ ধারণ করে তখন বর্বর ইয়াহিয়া সরকার নিরস্ত্র বাঙালি জাতিকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে সশস্ত্র আক্রমণ শুরু করেন। পাকিস্তানি সৈন্যরা বাংলার বুকে এক নারকীয় হত্যাযজ্ঞ শুরু করের। । পাকিস্তানি সৈন্যরা বাংলার বুকে এক নারকীয় হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। ঐ রাতে বঙ্গবন্ধু বন্দি হন।

তাঁকে পাকিস্তানের কারাগারে আটক করে রাখা হয়। এরপর এদেশে আরম্ভ হয় দুর্বার প্রতিরোধ সংগ্রাম, গ্রামেগঞ্জে গঠিত হয় মুক্তবাহিনী, শুরু হয় মুক্তযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয় এদেশের আপামর জনগণ, কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র-শিক্ষক ও সকল পেশাজীবী। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ চলে। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর মুক্তবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ কমান্ডের নিকট পাক্সিআনি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেমেল অভ্যুদয় ঘটে

মুক্ত ও স্বাধীন দেশে প্রত্যাবর্তন :

১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি ব্রিটিশ রাজকীয় জেট বিমানযোগে বঙ্গবন্ধু স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে আগমন করেন। বঙ্গবন্ধু স্বধীন বাংলাদেশে প্রথমে প্রধানমন্ত্রী ও পরে রাষ্ট্রপতি হন।

বাংলাভাষা ও বঙ্গবন্ধু :

১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধুই সর্রথম জাতিসংঘে বাংলা ভাষায় বক্তৃতা প্রদান করে বিশ্বসভায় বাংলা ভাষার আসন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তির পর বাংরা ভাষাভাষীদের জন্য এটি ছিল একটি গৌরবজনক ঘটনা ।

বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু :

১৯৭৫ সালে ১৫ই আগস্ট ভোররাতে তিনি কতিপয় ষড়যন্ত্রকারী সামরিক অফিসারের হাতে সপরিবারে নৃশংসভাবে নিহত হন। এ হত্যাকাণ্ড ছিল বর্বরোচিত। বঙ্গবন্ধুকে টুঙ্গিপাড়ার তাঁর গ্রামের বাড়িতে সমাধিস্থ করা হয়।

উপসংহার :

বাংলাদেশের সকল শ্রেণীল মানুষের প্রাণপ্রিয় নেতা ও বন্ধু চিলেন শেখ মুজিব। তাই তাঁকে উপাধি দেওয়া হয় ‘বঙ্গবন্ধু’। বঙ্গবন্ধু চিরকাল অমর হয়ে থাববেরন কোটি কোটি বাঙালির প্রাণে, পৃথিবীর সমুদয় বাংলা ভাষাভাষীদের স্মৃতিতে।

আরো পড়ুন……….

➡️বাংলাদেশের ফল রচনা

➡️বাংলাদেশের ফুল রচনা

➡️ একে ফজলুল হক রচনা ।

নিয়মিত এডুকেশন সম্পর্কিত তথ্য পেতে যুক্ত থাকুন আমাদের ফেইসবুক পেইজের সাথে ।

By Saifur Rahman Arif

আমি মোহাম্মাদ সাইফুর রহমান আরিফ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র । ব্যবস্থাপনার একজন ছাত্র হলেও বর্তমানে কিছুদিন যাবৎ আমি অনলাইনে লিখালিখি কাজের সাথে যুক্ত রয়েছি । এবং Goafta.com সাইটটির একজন আর্টিকেল রাইটার হিসাবে কাজ করছি ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *