আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা আশা করি আপনারা সবাই ভাল আছেন। আজ আপনাদের সাথে ফাস্টফুড ব্যবসা করা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো ।
আপনি যদি কোন নতুন ব্যবসা শুরু করার চিন্তা-ভাবনা করে থাকেন তাহলে আপনাকে অভিনন্দন। বর্তমানে আমাদের বাংলাদেশ শিক্ষিত ও অশিক্ষিত বেকার যুবক যুবতীদের অভাব নেই।
এর প্রধান কারণ হলো আমাদের বাংলাদেশের পর্যাপ্ত পরিমাণ কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই। তাই আপনারা যদি আপনাদের বেকার জীবন থেকে ফিরে আসতে নতুন যে কোন ব্যবসা শুরু করতে চান। তাহলে আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য।
আমরা আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটিতে আপনাদের সাথে বর্তমান সময়ের নতুন এবং অত্যন্ত লাভজনক চাহিদা সম্পন্ন একটি ব্যবসা ফাস্ট ফুডের ব্যবসা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব ।
বন্ধুরা ফাস্ট ফুডের ব্যবসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার অনুরোধ রইল। তাহলে চলুন বন্ধুরা এক নজরে দেখে নেয়া যাক লাভজনক ফাস্ট ফুড এর ব্যবসাটি করতে কি কি প্রয়োজন এবং কিভাবে শুরু করা যায় ।
?রেস্টুরেন্টের জন্য আদর্শ স্থান নির্বাচন করুন
যেকোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এমন জায়গায় প্রতিষ্ঠা করা উচিত যেসব জায়গায় মানুষের আনাগোনা বা লোকসমাগম আছে । কারণ যেখানে মানুষজনের আনাগোনা বেশি সেসব জায়গায় যেকোনো ব্যবসার বেচা বিক্রি ও বেশি।
তাই আপনার ফাস্টফুডের ব্যবসার প্রতিষ্ঠানের অবস্থান যদি কাস্টমারদের পছন্দসই না হয় তাহলে আপনার ফাস্ট ফুড ব্যবসা টিকিয়ে রাখা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
তাই আপনাকে এমন স্থান নির্বাচন করতে হবে যেখানে আপনার কাস্টমারদের সংখ্যা অনেক বেশি হবে ও প্রতিযোগীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম থাকবে।
যেমন: ধরুন আপনি যদি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য ফাস্টফুড খাবার তৈরি করতে চান তাহলে আপনাকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের আশেপাশে রেস্টুরেন্ট প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
?ফাস্টফুড দোকানের সুন্দর নাম নির্বাচন করুন
যে কোন ব্যবসা প্রতিষ্টান শুরু করার পূর্বে অবশ্যই সুন্দর মানানসই এবং ইউনিক নাম দিতে হবে। মানুষজন সহজে আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম উচ্চারণ করতে পারে এমন নাম আপনাকে নির্বাচন করতে হবে।
তবে আপনার নিজের পছন্দমত ও ইউনিক একটি নাম দিলে ভালো হয়।
এখানে আপনাদের সুবিধার্থে বেশকিছু ফাস্টফুড দোকানের সুন্দর সুন্দর নাম দেওয়া হলো আপনারা চাইলে এখান থেকে যেকোনো একটি সুন্দর নাম নির্বাচন করতে পারেন।
- ফুট প্যারাডাইস হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট
- প্লেজার ফুড
- গ্রীন ফুড জোন
- বেস্ট প্লেট ফুড কর্ণার
- পিওর ফুড কর্ণার
- অ্যামেজিং ফুড কর্ণার
- ক্লাস ফুড ভেলি
- ফুড কর্ণার
- সাদিয়া ফুড কর্ণার
- মিম ফুড হাউস
- স্পাইসি ফুড জোন ইত্যাদি
আরো অনেক সুন্দর সুন্দর নাম রয়েছে আপনি চাইলে এখান থেকে আপনার পছন্দসই একটি নাম নির্বাচন করতে পারেন।
?ফাস্টফুড ব্যবসার ডেকোরেশন ও অন্যান্য সরঞ্জাম
আপনার নির্বাচিত ফাস্টফুড ব্যবসার দোকানটিকে অবশ্যই আকর্ষণীয় ভাবে সাজাতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার দোকানে বিভিন্ন ধরনের লাইটিং করে আলোকসজ্জা করা যেতে পারে।
এছাড়া কাস্টমারদের খাবার পরিবেশন এর জন্য কিছু সুন্দর সুন্দর চেয়ার টেবিল স্থাপন করতে হবে।
পাশাপাশি আপনার ফাস্টফুড ব্যবসার দোকানে বেশকিছু নজরকাড়া ডিজাইনের নকশা ও থিম দেওয়ালে দেওয়ালে সাজাতে হবে।
আরো পড়ুন ,,,
খাবার তৈরীর জন্য ও খাবার সংরক্ষণ করে রাখার জন্য দোকানে মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ব্রেড টোস্টার ও অন্যান্য রান্না করার সরঞ্জাম গুলো ক্রয় করতে হবে।
?প্রয়োজনীয় লাইসেন্স ও অনুমতি সংগ্রহ করুন
এই ফাস্টফুড ব্যবসাটি শুরু করতে আপনাকে প্রয়োজনীয় বেশ কিছু কাগজপত্র ও সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হবে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও লাইসেন্সগুলো নিম্নরুপ:
১/ ট্রেড লাইসেন্স
২/ ভ্যাট সার্টিফিকেট
৩/ ফায়ার লাইসেন্স
৪ / হেলথ সার্টিফিকেট
ফাস্টফুড ব্যবসার ক্ষেত্রে অবশ্যই এই লাইসেন্সগুলো ও সার্টিফিকেটগুলো প্রয়োজন হবে।
আপনি এই লাইসেন্সগুলো জেলা পরিষদ, পৌরসভা পরিষদ, অথবা সিটি কর্পোরেশন থেকে নির্দিষ্ট একটি ফি দিয়ে নিতে পারবেন।
?কাস্টমারদের চাহিদার দিকে নজর রাখুন
আপনার কাস্টমাররা কোন ধরনের খাবারের প্রতি বেশি আগ্রহ প্রকাশ করছে সে ব্যাপারে যথেষ্ট জানার চেষ্টা করুন।
কারণ কাস্টমারদের চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে যদি আপনি ব্যাবসা করতে পারেন তাহলে আপনার ব্যবসার বেচা-বিক্রিও বেশ ভালো হবে।
তাই কাস্টমারদের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের মানসম্মত রুচিশীল খাবার তৈরি করার চেষ্টা করুন।
?ফাস্টফুড ব্যবসার খাবারের মেনু
ফাস্টফুড খাবারের মেনুর মধ্যে প্রতিদিন নিত্যনতুন খাবার যোগ করুন। আপনি আপনার ফাস্টফুডের দোকানে যত বেশি নিত্যনতুন মানসম্মত ও রুচিশীল খাবার যোগ করতে পারবেন ।
ততবেশি কাস্টমাররা আপনার দোকানে ভিড় জমাবে। তাই কাস্টমারদের আকৃষ্ট করার জন্য ফাস্টফুড খাবারের মেন্যুতে বিভিন্ন ধরনের নিত্য নতুন রুচিশীল মানসম্মত খাবার যোগ করুন।
?মানসম্মত ও পরিচ্ছন্ন খাবার নিশ্চিত করুন
আপনি নিজেকে একজন কাস্টমার হিসেবে চিন্তা করলে ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যায়। নিম্নমানের অপরিচ্ছন্ন খাবার পরিবেশন করলে কাস্টমাররা কখনো গ্রহণ করবে না।
যা আপনি নিজেও কখনো গ্রহণ করতেন না।
তাই পরিষ্কার পরিচ্ছন্নভাবে মানসম্মত খাবার তৈরি করতে পারলে কাস্টমাররা আপনার খাবারগুলোকে সাদরে গ্রহণ করবে।
কাস্টমারদের আপনি যত বেশি কোয়ালিটিফুল খাবার পরিবেশন করতে পারবেন ঠিক ততো বেশি দিন দিন আপনার দোকানে কাস্টমারদের সংখ্যা বাড়তে থাকবে।
একটি ফাস্টফুড ব্যবসার দোকানের জন্যে মানসম্মত রুচিশীল ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন খাবার পরিবেশন করা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
আরো পড়ুন,,
তাহলে দোকানের নাম ও সুনাম ছড়িয়ে পড়ে সবদিকে এবং পরিশেষে আপনার ফাস্টফুড দোকানে বেচা বিক্রি ও ভালো হবে।
?দক্ষ কর্মী নিয়োগ দিতে হবে
খাবার তৈরি, সরবরাহ ও অন্যান্য কাজগুলো পরিচালনার জন্য আপনাকে কর্মী নিয়োগ দিতে হবে। এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই সৎ ও দক্ষতা সম্পন্ন কর্মীদের বাছাই করে নিয়োগ দিতে হবে ।
কারণ ফাস্টফুড ও রেস্টুরেন্ট ব্যবসার জন্য অবশ্যই অবশ্যই সৎ ও দক্ষতা সম্পন্ন কর্মীদের প্রয়োজন।
?অনলাইনে ফাস্টফুড ব্যবসা ২০২২
বর্তমান যুগ তথ্য প্রযুক্তির যুগ । তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে আমরা ঘরে বসে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কাজকর্ম থেকে শুরু করে ব্যবসা বাণিজ্য সবকিছু প্রযুক্তির সাহায্যে ঘরে বসেই সম্পাদন করতে পারি।
প্রযুক্তির প্রসারের কারণে ঘরে বসে আমরা ডাক্তার দেখানো থেকে শুরু করে পড়াশোনা, শপিং করা , প্রয়োজনীয় যেকোনো জিনিস অনলাইনের মাধ্যমে কেনাকাটা করতে পারি।
বর্তমানে সব ব্যবসায় প্রায় অনলাইনে ভালো সাড়া ফেলেছে তাই আপনি চাইলে আপনার ফাস্টফুড ব্যবসাটি অনলাইনের মাধ্যমে পরিচালনা করে আরও বড় পরিসরে করতে পারেন।
আপনি একটি দোকান দিলে সে দোকানের কাস্টমার আসবে নির্দিষ্ট কিছু এরিয়ার মানুষজন। তবে আপনি যদি আপনার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানটি অনলাইনের মাধ্যমে পরিচালনা করতে চান।
আরো পড়ুন,,
তাহলে আপনার কাস্টমার হবে সমগ্র দেশজুড়ে অর্থ্যাৎ কাস্টমারের কোন সীমাবদ্ধতা থাকবে না।
আপনি যত বেশি মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে আপনার ব্যবসায় পরিচিতি বাড়াবেন এবং ভালো সার্ভিস দিয়ে গ্রাহকদের সন্তুষ্ট করতে পারবেন ততবেশি বিক্রি করতে পারবেন।
অনলাইনে ফাস্টফুড খাবারের ব্যবসা করতে হলে আপনার একটি ওয়েবসাইট বা ফেসবুক পেইজের প্রয়োজন হবে ।
একটি ওয়েবসাইট থাকলে সেখানে আপনি আপনার খাবারের মেনুগুলোর সাথে তার দামও সাজিয়ে রাখতে পারবেন । এবং কাস্টমার অনলাইনে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সরাসরি অর্ডারও করতে পারবে ।
আপনার ফাস্টফুডের জন্য ওয়েবসাইট তৈরী করে নিতে আমাদের দক্ষ টিমের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন ।
?মার্কেটিং এর জন্য সময় ও অর্থ বরাদ্দ রাখুন
ফাস্টফুড ব্যবসায় সফলতা অর্জন করতে হলে দক্ষ মার্কেটিং এর গুরুত্ব অনেক বেশি। আপনার গ্রাহকদের আকর্ষণ বা মনোযোগ ধরে রাখার জন্য সাপ্তাহিক ডিসকাউন্ট অফার রাখতে পারেন।
বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে বিশেষ ডিসকাউন্টের ব্যবস্থা রাখতে পারেন। এবং সরকারি ছুটির দিনে ফ্যামিলি প্যাকেজ এর ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে।
বিভিন্ন পত্র পত্রিকাতে, রেডিও ,টেলিভিশন, ফেসবুক, ইউটিউব ব্যবহার করে মার্কেটিং করা যেতে পারে এক্ষেত্রে আপনার বেশ কিছু টাকা খরচ হতে পারে।
যে কোন ব্যবসার ক্ষেত্রে জনপ্রিয়তা ও পরিচিতি খুব গুরুত্বপূর্ণ । যে ব্যবসার যত পরিচিতি সে ব্যবসায় তত বেশি বেচাবিক্রি করা সম্ভব।
?রেস্টুরেন্টের পরিবেশ সুন্দর করুন
আপনার রেস্টুরেন্টের ওয়েটারসহ সবধরনের কর্মীরা যেন কাস্টমারদের সাথে ভালো আচরণ করে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। এতে করে গ্রাহকরা শুধু স্বাচ্ছন্দ্যবোধ হবেন না তারা অন্যদের কাছে আপনার রেস্টুরেন্ট সম্পর্কে ভালো কথা বলবেন।
রেস্টুরেন্টে হিবিজিবি কোন জিনিস না রেখে সুন্দর করে চেয়ার-টেবিল গুছিয়ে রাখা, বিভিন্ন কালারিং লাইটিং করা, ফুলের টপ ও ছোট ছোট ফুলের গাছ লাগানো যেতে পারে রেস্টুরেন্টের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য।
গ্রাহকেরা যদি আপনার রেস্টুরেন্টে এসে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে তাহলে তারা তাদের বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়স্বজনদের আপনার রেস্টুরেন্টের কথা বলবে।
সুন্দর করে গুছিয়ে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা করতে পারলেই আপনি অল্প দিনের মধ্যে সফলতা অর্জন করতে পারবেন।
পরিশেষে – Conclusions
বন্ধুরা আমরা আজকে আপনাদের সাথে অত্যন্ত লাভজনক ও চাহিদা সম্পন্ন একটি নতুন ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।
আপনারা যারা নতুন ব্যবসা করার জন্য মনস্থির করেছেন তারা চাইলে এই ফাস্টফুড ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন ।
সময়ের সাথে সাথে ফাস্টফুড ব্যবসার জনপ্রিয়তা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা আমাদের এই আর্টিকেলে ফাস্টফুড ব্যবসা সম্পর্কে খুঁটিনাটি আলোচনা করেছি ।
আশা করি আমাদের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনারা উপকৃত হবেন। ধন্যবাদ।