ট্রেড মার্ক কি ট্রেডমার্ক কাকে বলে

ট্রেডমার্কের ধারণা – Concept of Trademark

আরিয়ান টিভিতে একটা নতুন বিজ্ঞাপন দেখছে। সে প্রথম দিকে বুঝে উঠতে পারেনি এটা কিসের বিজ্ঞাপন । পরে বুঝলো বিজ্ঞাপনটি একটা মোবাইল ফোন কোম্পানির। কারণ তিনটা পাখা সম্বলিত একাধিক ছবি ভেসে আসলো । আর এতেই তার বুঝতে বাকি থাকলো না এটা গ্রামীণ ফোনের বিজ্ঞাপন। 

শুভ্র খেলতে ভালোবাসে । তার গায়ের গেঞ্জি, পায়ের কেস, মাথার টুপি-সর্বত্রই হকি খেলার ব্যাটের ন্যায় চিহ্ন। এটা নাইকি নামক নামকরা খেলার সামগ্রী প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের লোগো বা প্রতীক। এই চিহ্নগুলোর সবই কোনো কোম্পানির পণ্যের মালিকানা নির্দেশ করে। যা ট্রেডমার্ক নামে গণ্য ।

 

ট্রেড মার্ক কি /ট্রেডমার্ক কাকে বলে ?

ট্রেডমার্ক হলো পণ্য বা ব্যবসায়ের এমন কোনো স্বতন্ত্রসূচক বৈশিষ্ট্য, চিহ্ন বা প্রতীক যা সকলের নিকট ব্যবসায় বা পণ্যকে সহজে পরিচিত করে তোলে এবং এর মালিকের তা ব্যবহারের একচ্ছত্র অধিকার নির্দেশ করে । মার্ক বলতে সাধারণত কোনো নিশানা, ছাপ বা চিহ্নকে বুঝায়। 

বাংলাদেশে প্রচলিত ২০০৯ সালের ট্রেডমার্ক আইনে মার্ক বলতে কোনো ডিভাইস (Device),  শিরোনাম (Heading), ব্রান্ড (Brand),লেবেল (Label), নাম,টিকেট, স্বাক্ষর, শব্দ, প্রতীক, সংখ্যা, সংখ্যাযুক্ত উপাদান, রং এর সমন্বয় বা এগুলোর যে কোনোরূপ সমন্বয়কে বুঝায়। Bata, Laux-এগুলো নাম। মোবাইল ফোন অপারেটর বাংলা লিংকের ট্রেডমার্কে কয়েকটি রংয়ের সমন্বয় ঘটেছে ।

ট্রেডমার্কের মূল বিষয় হলো অন্য পণ্য বা প্রতিষ্ঠান থেকে এর স্বাতন্ত্র্যতা বা ভিন্নতা । এই ভিন্নতা যদি দৃশ্যমান না হয় বা অন্যের পণ্য সম্পর্কে ভুল ধারণার সৃষ্টি করে অথবা এর উৎপত্তিস্থল বা অন্য কোনো বিষয় জনগণকে বিভ্রান্ত করে তবে তা ট্রেডমার্ক হিসেবে গণ্য হতে পারে না। 

 

কেউ যদি ‘ঘড়ি’ নাম দিয়ে ঘড়ি উৎপাদন ও বিক্রয় করে তবে ঐ ‘ঘড়ি’ নাম স্বাতন্ত্র্যসূচক নয়। কারণ অনেকেই ঘড়ি উৎপাদন করছে। আমরা যেভাবে তরি-তরকারি, ফলমূল ইত্যাদি দেখে কিনি ঘড়িতো সেভাবে দেখে কেনা যায় না । 

ঘড়ির কোন ব্রান্ড বা ট্রেডমার্ক কোন ধরনের মান মেনে চলে ক্রেতা তা জানার চেষ্টা করে। CASIO, ROLEX, TITAN – এভাবে ব্রান্ড নামে সে কেনে। একইভাবে কোনো পণ্যের নামের প্রতীক যদি FRANCE দেয়া হয় তবে সেটা ফ্রান্সের তৈরি মনে করে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতে পারে। তবে সাবানের বা ঘড়ির ব্রান্ড নাম যমুনা হলে সমস্যা নেই ।

ট্রেডমার্ক নিবন্ধন না করেও তা ব্যবহার করা যায়। ব্যবহারের পরেও এক পর্যায়ে তা নিবন্ধন করা চলে। তবে সমস্যা হলো অনিবন্ধিত ট্রেডমার্ক লঙ্ঘিত হলে আইনত তার প্রতিকার দাবি করা যায় না এবং কেউ একবার ঐ নাম নিবন্ধিত করলে তার প্রতিকার লাভ দুষ্কর হয়ে পড়ে। 

তাই ট্রেডমার্ক নিবন্ধন করাই উত্তম । এর নিবন্ধনও যথেষ্ট সহজ। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান অফিস যেখানে অবস্থিত সেখানকার ট্রেডমার্ক নিবন্ধকের অফিসে প্রয়োজনীয় ফি সহ আবেদন করে এরূপ নিবন্ধন করা যায়। 

তবে এক্ষেত্রে ঐ নামে বা প্রতীকে পূর্বে কোনো নিবন্ধন নেয়া রয়েছে কি না তা আগেই নিবন্ধক অফিস থেকে জেনে নিতে হয় (ট্রেডমার্ক নিবন্ধনের মেয়াদসীমা আইন অনুযায়ী ৭ (সাত) বছর) তবে এরপর থেকে যথানিয়মে ফি দিয়ে তা নবায়ন করা যায়। এক্ষেত্রে নিবন্ধক একই সময়ে ফি নিয়ে ১০ (দশ) বছর পর্যন্ত ট্রেডমার্ক নবায়ন করতে পারেন।) যা পরবর্তীতেও চালু থাকে ।

(মধ্যযুগের শুরুতে সর্বপ্রথম রোমান রাজাগণ তাদের ব্যবহার্য তরবারির স্বকীয়তা রক্ষায় ট্রেডমার্কের ধারণার প্রয়োগ শুরু করেন বলে ইতিহাস থেকে জানা যায় ) ফলে তাদেরকেই ট্রেডমার্কের প্রথম ব্যবহারকারী মনে করা হয়ে থাকে। 

 

অবশ্য ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে এ ধারণার প্রয়োগ ঘটে শিল্প বিপ্লবকালে। (১৮৫৭ সালে সর্বপ্রথম ফ্রান্সে এ লক্ষ্যে আইন পাস হয় । যুক্তরাজ্যে আইন পাস হয় ১৮৬২ সালে। সর্বপ্রথম বৃটিশ আইনের অধীনে লোগো হিসেবে নিবন্ধন পায় Bass Brewery)

 

আরো পড়ুন :

➡️পেটেন্ট কি ? এবং পেটেন্টের ধারণা ।

➡️সমবায় সমিতির বৈশিষ্ট্য ।

➡️সমবায় সমিতি কি ?

➡️সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির গঠনতন্ত্র

নিয়মিত এডুকেশন সম্পর্কিত তথ্য পেতে যুক্ত থাকুন আমাদের ফেইসবুক পেইজের সাথে ।

By MD Imran hossan

২০১৯ সাল থেকে যুক্ত আছি এই টেকনোলজির দুনিয়ার সাথে । যদিও আমার পড়াশোনা ব্যবসা ও বাণিজ্য নিয়ে । ওয়েবসাইট ডেভেলপ করে দেওয়ার পাশাপাশি বর্তমানে লিখালিখি ও ব্লগিং সেক্টর এর সাথে যুক্ত আছি । নিজের জ্ঞান কে অন্যদের সাথে ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠা করেছি Goafta.com ওয়েবসাইট । স্বপ্ন দেখছি একটি বিশ্বস্ত ব্যবসায়িক ব্লগ গড়ে তোলার । এবং নিজে যতটুকু জানি তা সবার কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার , তাতে যদি কারো শস্য পরিমাণও উপকার হয় তাতেই আমার প্রশান্তি |

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *