ট্রেডমার্ক হলো পণ্য বা ব্যবসায়ের এমন কোনো স্বতন্ত্রসূচক বৈশিষ্ট্য, চিহ্ন, প্রতীক বা মার্ক যা সকলের নিকট ব্যবসায় বা পণ্যকে সহজে পরিচিত করে তোলে এবং এর মালিকের তা ব্যবহারের একচ্ছত্র অধিকার নির্দেশ করে । ব্রান্ড, শিরোনাম, লেবেল, নাম, শব্দ, অক্ষর, সংখ্যা, রং এর সমন্বয় ইত্যাদি মার্ক এর অন্তর্ভুক্ত । কোনো মার্ক পরিচিত করে তোলা গেলে তা ব্যবসায়ের একটা অদৃশ্য সম্পদ হিসেবে গণ্য হয় । এরূপ সম্পদের ওপর মালিকের অধিকার নিশ্চিত করতে ট্রেডমার্ক আইনে তার নিবন্ধন অপরিহার্য গণ্য করা হয়েছে ।
বাংলাদেশে ট্রেডমার্ক আইন ২০০৯ এ এর ট্রেডমার্ক নিবন্ধন পদ্ধতি বিষয়ে যে বিধান দেয়া হয়েছে তা নিম্নের রেখাচিত্রে উল্লেখ করা হলো ।
ট্রেডমার্ক নিবন্ধন পদ্ধতি :
১. নিবন্ধনের আবেদন: কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান তাদের প্রস্তাবিত ট্রেডমার্ক নিবন্ধন করতে চাইলে তা কিভাবে করা যাবে সে বিষয়ে ট্রেডমার্ক আইনের ১৫ ধারায় নিম্নরূপ বর্ণনা প্রদান করা হয়েছে:
ক) ট্রেডমার্কের স্বত্বাধিকারী প্রস্তাবিত ট্রেডমার্ক নিবন্ধনের জন্য লিখিতভাবে নিবন্ধনের নিকট আবেদনকরবেন।
খ) কোনো স্বত্ত্বাধিকারী তার একাধিক পণ্য বা সেবার জন্য ট্রেডমার্ক নিবন্ধন নিতে চাইলে পৃথক পৃথকভাবেআবেদন করবেন ।
গ) আবেদনকারীর প্রতিষ্ঠান যেই এলাকায় অবস্থিত সেই এলাকায় অবস্থিত ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রি অফিসেএরূপ আবেদন করতে হবে ।
ঘ) যদি কোন আবেদনকারী বা আবেদনকারীগণ বাংলাদেশে ব্যবসায় না করে তবে আবেদনকারী বা প্রথম আবেদনকারীর যোগাযোগ ঠিকানা যেই এলাকায় অবস্থিত সেই এলাকার ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রি অফিসে আবেদন করতে হবে ।
২. আবেদনপত্র প্রত্যাখ্যান: কোনো ট্রেডমার্ক নিবন্ধনের আবেদন জমাগ্রহণের পর নিবন্ধক যদি, এ মর্মে নিশ্চিত হন যে-
ক) আবেদনটি ভুলবশত গৃহীত হয়েছে বা
খ) আবেদন যথার্থ নয় (৮ ধারার বিধানটি লঙ্ঘিত হয়েছে) বা ভিন্নভাবে আবেদনটি করা উচিত ছিল, তবে আবেদনটি সরাসরি বা শুনানি সাপেক্ষে প্রত্যাখ্যান করতে পারবেন । [১৬ ধারা]
৩. আবেদন গ্রহণের বিজ্ঞপ্তি জারি: ট্রেডমার্ক নিবন্ধনের লক্ষ্যে নিবন্ধক কোনো আবেদন গ্রহণ করলে সেক্ষেত্রে উক্ত ট্রেডমার্কের বিষয়ে কারও কোনো আপত্তি আছে কি না সে বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করবেন । সেক্ষেত্রে ১৭ ধারার বিধান অনুযায়ী নিম্নোক্ত বিধানাবলি প্রযোজ্য হয়:
কোনো আবেদন শর্তবিহিন বা শর্তযুক্তভাবে গৃহীত হলে নিবন্ধক সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় উল্লেখপূর্বক নির্ধারিত পদ্ধতিতে বিজ্ঞপ্তি জারি করবেন। উল্লেখ্য নিবন্ধক যদি মনে করেন যে, আইনের ৬(২) ধারার বিধান লঙ্ঘন (স্বাতন্ত্র্যসূচক মনে হয় না) এর সম্ভাবনা রয়েছে তবে আবেদন গ্রহণের পূর্বেও বিজ্ঞপ্তি জারি করতে পারবেন। বিজ্ঞপ্তি জারির পরও যদি কোনো ভুল শুদ্ধ করা হয় তবে সংশোধনী সমেত পুনঃবিজ্ঞপ্তি জারি করা যাবে ।
৪. নিবন্ধনের বিরোধিতা: বিজ্ঞপ্তি জারির উদ্দেশ্য হলো কোনো পক্ষ কর্তৃক আবেদনকৃত ট্রেডমার্ক নিবন্ধনের বিষয়ে আপত্তি বা বিরোধিতা আসে কি না তা যাচাই করা।
ট্রেডমার্ক আইনের ১৮ ধারায় নিবন্ধনের বিরোধিতা বিষয়ে নিম্নরূপ বিধান প্রদত্ত হয়েছে:
ক) বিজ্ঞপ্তি জারির তারিখের ২ (দুই) মাসের মধ্যে বিরোধ উত্থাপনকারী পক্ষ নির্ধারিত ফি দিয়ে নির্ধারিত প্রদ্ধতিতে বিরোধের নোটিশ প্রদান করতে পারবেন ।
খ) উপরের বিধান অনুযায়ী নোটিস প্রাপ্তির ১ (এক) মাসের মধ্যে নিবন্ধক তার এক কপি ট্রেডমার্ক আবেদনকারীর নিকট প্রেরণ করবেন এবং আবেদনকারী নোটিস প্রাপ্তির ২ (দুই) মাসের মধ্যে তার আবেদনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে পাল্টা বিবৃতি নিবন্ধকের নিকট দাখিল করবেন। অন্যথায় আবেদনকারী তার আবেদন পরিত্যাগ করেছেন বলে ধরা হবে ।
গ) আবেদনকারী পাল্টা বিবৃতি দাখিল করলে নিবন্ধক তা প্রাপ্তির ১ (এক) মাসের মধ্যে তার একটি কপি বিরোধিতার নোটিস প্রদানকারীর নিকট নির্ধারিত পদ্ধতিতে জারি করবেন
ঘ) বিরোধিতাকারী এবং আবেদনকারী যে সকল সাক্ষ্য প্রমাণের উপর নির্ভরশীল তা নির্ধারিত সময় ও পদ্ধতিতে নিবন্ধকের নিকট দাখিল করবেন এবং উভয় পক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে নিবন্ধক তাদেরকে শুনানীর সুযোগ প্রদান করবেন।
ঙ) নিবন্ধক পক্ষগণের রক্তব্য এবং সাক্ষ্যপ্রমাণ বিবেচনা করে, শর্ত বা সীমাবদ্ধতা সাপেক্ষে বা ব্যতীত, নিবন্ধনের অনুমতি প্রদান সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন ।
৫. নিবন্ধনপত্র ইস্যু: কোনো বিরোধ উত্থাপিত না হলে না উত্থাপিত হলেও তা শুনানির মাধ্যমে আবেদনকারীর পক্ষে আসলে সেক্ষেত্রে নিবন্ধক নিবন্ধনপত্র ইস্যু করবেন।
আইনের ২০ ধারায় এ সম্পর্কে নিম্নোক্ত বিধান রয়েছে:
বিরোধ উত্থাপিত না হলে বা এরূপ নোটিস যথাসময়ে উপস্থাপিত না হলে অথবা উত্থাপিত বিরোধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আবেদনকারীর অনুকূলে গেলে নিবন্ধক ট্রেডমার্ক আবেদনের তারিখ থেকে তার কার্যকারিতা প্রদানপূর্বক নিবন্ধন বইতে তা লিপিবদ্ধ করবেন এবং নির্ধারিত ফরমে ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রির সীলমোহর সম্বলিত একটা নিবন্ধন সনদ আবেদনকারীকে প্রদান করবেন ।
ট্রেডমার্ক আইনের ২২ (১) ধারায় বলা হয়েছে যে, কোনো ট্রেডমার্ক নিবন্ধনের মেয়াদ হবে ৭ (সাত) বছর ।
তবে উক্ত মেয়াদ এ ধারার বিধান অনুসারে নবায়নযোগ্য হবে। ২৫(১) ধারায় বলা হয়েছে যে, কোনো ব্যক্তি কোনো পণ্য বা সেবার জন্য ট্রেডমার্কের স্বত্বাধিকারী হিসেবে নিবন্ধিত হলে, তিনি, এই আইনের অন্যান্য বিধান সাপেক্ষে, উক্ত পণ্য বা সেবার জন্য উক্ত ট্রেডমার্ক নিরঙ্কুশ ব্যবহার এবং তার স্বত্ব লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে এই আইনে বর্ণিত পদ্ধতিতে প্রতিকার লাভের অধিকারী হবেন ।
আরো পড়ুন :
➡️পেটেন্ট কি ? এবং পেটেন্টের ধারণা ।
➡️ট্রেড মার্ক কি /ট্রেডমার্ক কাকে বলে ?
➡️সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির গঠনতন্ত্র ।
নিয়মিত এডুকেশন সম্পর্কিত তথ্য পেতে যুক্ত থাকুন আমাদের ফেইসবুক পেইজের সাথে ।