বন্ধুরা আপনাদের সাথে আজ কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব । যে ব্যবসাটি বর্তমানে সারাবিশ্বে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে এবং দিন যাওয়ার সাথে সাথে আমাদের বাংলাদেশেও এটি অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ।
কুরিয়ার সার্ভিস এই কথাটি আমরা হয়তো অনেকবার শুনেছি এবং এই সার্ভিস দ্বারা উপকৃত হয়েছি। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আমরা আমাদের দূর-দূরান্ত থেকে পাঠানো জিনিসপত্রগুলো খুব সহজে পেয়ে যাই।
আমাদের প্রিয়জনদের কাছে অথবা যে সকল পরিবারগুলো দূর-দূরান্তে বসবাস করে তাদের কাছে বিভিন্ন জিনিসপত্র পাঠানোর জন্য আমরা কুরিয়ার সার্ভিসের সাহায্য নিয়ে থাকি। যার ফলে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে আমাদের আত্মীয় স্বজনদের নিকট যেকোনো জিনিসপত্র খুব সহজে ও অল্প টাকার বিনিময়ে পাঠাতে পারি।
এখন আপনিও চাইলে কুরিয়ার সার্ভিস লাভজনক ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন।
কিভাবে কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসা শুরু করবেন তা নিয়ে চিন্তিত?
আপনি কিছু সহজ নিয়ম কানুন মেনে চললে একটি সফল কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। যে সমস্ত নিয়ম কারণগুলো মেনে চলতে হবে সেগুলো নিম্নরূপ:
কুরিয়ার সার্ভিস কি ?
কুরিয়ার সার্ভিস ( Courier Service ) হলো এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নির্দিষ্ট টাকার বিনিময় যে মাধ্যম ব্যবহার করে জিনিসপত্র ও ডকুমেন্টস পাঠানো হয় তাকে কুরিয়ার সার্ভিস বলে।
কিভাবে কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসা করা যায়?
কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসাটি করার জন্য আপনার তেমন কোনো অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হবে না। আপনি চাইলেই খুব সহজেই এই ব্যবসাটি কিছু নিয়ম কানুন মেনে শুরু করতে পারবেন ।
এই ব্যবসাটি করার জন্য যেসব বিষয়গুলো সম্পর্কে জানা জরুরী সেগুলো হলো :
- সঠিক পরিকল্পনা ।
- প্রাথমিক খরচ হিসাব এবং মূলধন বাজেট নির্ণয় ।
- সঠিক স্থান নির্ধারণ করা ।
- অভিজ্ঞ এবং বিশ্বস্ত কর্মী নিয়োগ করা ।
- যথাসময়ে এবং নিরাপদে পার্সেল ডেলিভারী করা ।
- পণ্য ডেলিভারী করার জন্য পরিবাহন নির্ধারণ করা । ইত্যাদি
কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসা করতে কত টাকা মূলধন লাগবে?
কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসাটি করার জন্য নির্দিষ্ট কত টাকা মূলধন লাগতে পারে বলা মুশকিল। কেননা আপনি যদি বড় পরিসরে কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসাটি শুরু করতে চান তাহলে একটু বেশি মূলধন এর প্রয়োজন হবে।
এবং আপনি যদি ছোট পরিসরে ব্যবসাটি শুরু করতে চান তাহলে অল্প টাকা বিনিয়োগ করেও ব্যবসাটি শুরু করতে পারবেন।
কেননা কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসাটি শুরু করার পূর্বে আপনার যে সকল বিষয়গুলো অবশ্যই প্রয়োজন হবে সেগুলো হলো:
- একটি গোডাউন ভাড়া নিতে হবে ।
- একটি অফিস ভাড়া নিতে হবে ।
- একাধিক কর্মচারী নিয়োগ দিতে হবে ।
- পরিবহন জোগাড় করতে হবে ।
- আরও কিছু অন্যান্য খরচ ।
যেহেতু কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসাটি শুরু করার জন্য এই বিষয়গুলো প্রয়োজন হবে সেহেতু খরচের একটা ব্যাপার রয়েছে। তাই বলা যায় আপনি যদি ছোট পরিসরে কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসাটি শুরু করতে চান তাহলে কমপক্ষে ৩-৫ লক্ষ টাকা প্রয়োজন হবে।
আবার আপনি যদি বড় পরিসরে করতে চান তাহলে ১৫-২৫ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে শুরু করতে পারেন। সম্পূর্ণ আপনার উপর নির্ভর আপনার হাতে যত বেশি মূলধন থাকবে আপনি তত বেশি বিনিয়োগ করতে পারবেন।
আরো পড়ুন : কোনো ধরনের লস ছাড়া ব্যবসা করার উপায় ।
কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসার জন্য সঠিক স্থান নির্বাচন
আপনি যদি কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসাটি শুরু করতে চান তাহলে আপনাকে ব্যবসা শুরু করার পূর্বে একটি সঠিক স্থান নির্বাচন করতে হবে।
কারণ কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসায় যদি লাভবান হতে চান তাহলে এই ব্যবসার জন্য সঠিক স্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সঠিক স্থান বলতে বুঝানো হয়েছে যে স্থানে মানুষজনের বা গ্রাহকদের যাতায়াতের সুবিধা রয়েছে। এবং আপনার কুরিয়ার সার্ভিস অফিস খুঁজে পেতে গ্রাহকদের যাতে অসুবিধা না হয়।
মানুষের লোকসমাগম আছে এমন স্থানে একটি কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসা স্থাপন করা সঠিক স্থান হিসেবে বিবেচিত।
আপনি যে অঞ্চলে বা যে স্থানে আপনার কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসাটি শুরু করবেন সে স্থানটি যদি হাট-বাজার, বড় শপিং মল, বা মার্কেটের আশেপাশে হয় তাহলে অনেক ভালো হবে।
কারণ এসব স্থানে মানুষের ভীড় সবসময় থাকে। এবং গ্রাহকদের অনেক সুবিধা হবে আপনার অফিস খুঁজে পেতে । এতে করে আপনার কুরিয়ারের সার্ভিস নিতে সহজ হবে।
আরো পড়ুুন : ১৫টি ১লাখ টাকায় ব্যবসার আইডিয়া ।
কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসা করার জন্য কি কি লাইসেন্স নিতে হবে?
আমরা জানি যে কোন ব্যবসা শুরু করার পূর্বে সরকার কর্তৃক কিছু বৈধ লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হয়।
কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসা শুরু করার পূর্বেও কিছু লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হবে। এবং লাইসেন্সগুলো সংগ্রহ করার পর কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।
কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসা করার জন্য যে সকল লাইসেন্সগুলো প্রয়োজন তা নিম্নরূপ:
- অঙ্গীকারনামা ।
- সংঘ স্মারক ও বিধির কপি ।
- এসোসিয়েশন এর সদস্য সনদপত্র ।
- ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন ।
- আয়কর সনদপত্র ।
- যানবাহনের তালিকা ।
- প্রধান কার্যালয়ের দলিল বা ভাড়া চুক্তিনামা ।
এই সকল কাগজপত্রগুলো সংগ্রহ করতে পারলে আপনি কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসাটি শুরু করতে পারবেন।
বিশ্বাসযোগ্য কর্মচারী নিয়োগ দিতে হবে
কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসার মূল বিষয় হল এক গ্রাহক থেকে জিনিসপত্র সংগ্রহ করে তা ঠিকমতো অন্য গ্রাহকের বা সঠিক গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া।
এই কাজটি সম্পূর্ণ করার জন্য আপনার প্রয়োজন হবে একজন বিশ্বাসযোগ্য কর্মচারী । যারা এক গ্রাহক থেকে জিনিসপত্র সংগ্রহ করে তা ঠিকমতো অন্য গ্রাহকের নিকট পৌঁছে দিতে পারবে।
বিশ্বাসযোগ্য কর্মচারী রাখার মূল কারণ হলো:
- জিনিসপত্রের সুরক্ষা নিশ্চিত করা
- দ্রুত ডেলিভারি
- জিনিসপত্র চুরি হওয়া থেকে চিন্তা মুক্ত
- ব্যবসার সুনাম অর্জন করা
আপনার প্রতিষ্ঠানে বিশ্বাসযোগ্য কর্মচারী থাকলেই আপনি খুব সহজে উন্নতি করতে পারবেন। কিন্তু আপনার ব্যবসা প্রতিষ্টানে যদি অবিশ্বাসযোগ্য কর্মচারী থাকে তাহলে আপনার ব্যবসা কখনো উন্নতি করতে পারবে না বরং ব্যবসার অবনতি হবে।
অতএব সফলভাবে ব্যবসা করার জন্য বিশ্বাসযোগ্য কর্মচারী নিয়োগ দিতেই হবে।
গ্রাহকদের আকর্ষণ বাড়াতে হবে
যেকোন ব্যবসা তাদের ব্যবসার গতি বাড়ানোর জন্য বা কাস্টমারদের আকর্ষণ বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। যেমন পণ্যে ডিসকাউন্ট দেওয়া, বাই ওয়ান গেট ওয়ান ফ্রি অফার দেওয়া, অথবা বিভিন্ন ধরনের কুইজ শুরু করা ইত্যাদি করে থাকে।
তাই কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসার ক্ষেত্রেও আপনাকে গ্রাহকদের আকর্ষণ বাড়াতে হবে। যত বেশি গ্রাহক আপনার কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসা সম্পর্কে জানবে ততো বেশি ব্যবসার উন্নতি সাধন হবে।।
যেভাবে আপনি গ্রাহকদের আকর্ষণ বাড়াতে পারেন সেগুলো নিম্নরূপ:
- সব ধরনের পণ্য সামগ্রী ডেলিভারি দেওয়া
- অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে ডেলিভারি চার্জ কম নেওয়া
- গ্রাহকদের পণ্য-সামগ্রীর সুরক্ষা নিশ্চিত করা
- দ্রুত ডেলিভারি সম্পাদন করা
- গ্রাহকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলা ইত্যাদি
আপনি যত বেশি গ্রাহকদের আকর্ষণীয় করে তুলতে পারবেন তত বেশি আপনার ব্যবসার উন্নতি সাধন হবে। তাই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে গ্রাহকদের আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে ব্যবসায় সাফল্য অর্জনের জন্য।
আরো পড়ুন : ১২টি লাভজনক ক্ষুদ্র ব্যবসার আইডিয়া ।
পার্সেল ডেলিভারির জন্য সঠিক বাহন নির্বাচন করা
![কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসা করার নিয়ম - Courier Service Business Rules [ 2023 ] 2 পার্সেল ডেলিভারির জন্য সঠিক বাহন নির্বাচন করুন](https://goafta.com/wp-content/uploads/2022/11/পার্সেল-ডেলিভারির-জন্য-সঠিক-বাহন-নির্বাচন-করুন-300x182.jpg)
কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসা শুরু করার পূর্বে আপনার একটি বাহন বা গাড়ির ব্যবস্থা করতে হবে গ্রাহকদের পার্সেল ডেলিভারি দেওয়ার জন্য।
আমরা জানি কুরিয়ার এর মূল কাজ হলো এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে গ্রাহকদের পার্সেলগুলো সঠিক গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া। এবং দ্রুত গ্রাহকদের পার্সেলগুলো পৌছে দেওয়ার জন্য প্রয়োজন হবে একটি বাহন বা গাড়ি।
যেকোন গাড়ি হতে পারে যেমন: ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, মাইক্রোবাস, ইত্যাদি যেকোনো গাড়ির মাধ্যমে আপনি গ্রাহকদের পার্সেল গুলো ডেলিভারির জন্য ব্যবহার করতে পারেন।
বাহন নির্ধারণ করার আগে যা মনে রাখতে হবে তার নিম্নরূপ:
- স্পিড ভালো হতে হবে
- পার্সেল রাখার মত জায়গা রাখতে হবে
- বাহনের লাইসেন্স থাকতে হবে
- পার্সেল গুলো সুরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা রাখতে হবে
অতএব, কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসা শুরু করার জন্য বাহন নির্ধারণ করা খুব জরুরি কারণ বাহন এর উপর নির্ভর করে এই ব্যবসাটি।
বাংলাদেশের সেরা কুরিয়ার সার্ভিস কোম্পানিগুলো:
আমাদের বাংলাদেশের অনেক জনপ্রিয় বেশকিছু কুরিয়ার সার্ভিস রয়েছে। যেগুলোর মাধ্যমে আমরা এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে আমাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রগুলো খুব সহজে পাঠাতে পারি । বাংলাদেশের জনপ্রিয় কুরিয়ার সার্ভিসগুলোর তালিকা নিম্নরূপ:
- সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস
- এস এ পরিবহন
- ইউএসবি এক্সপ্রেস
- জননী এক্সপ্রেস
- ডিএইচএল বাংলাদেশ
- করতোয়া কুরিয়ার সার্ভিস
- ইউনাইটেড এক্সপ্রেস
- বক্স পার্সেল
- ইউনাইটেড পার্সেল সার্ভিস ইত্যাদি
কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসায় লাভ কেমন?
কুরিয়ার সার্ভিস অত্যন্ত লাভজনক একটি ব্যবসা । এই ব্যবসায় লাভের পরিমাণ অনেক বেশি যদি আপনি একসাথে অনেক গ্রাহকের পার্সেলগুলো আনা নেয়া করতে পারেন।
কারণ যত বেশি গ্রাহক আপনার কুরিয়ারের মাধ্যমে পণ্য আনা-নেওয়া করবে তত বেশি ইনকাম করতে পারবেন।
কুরিয়ার সার্ভিসে আপনি চাইলে ওজন মাফিক টাকা নির্ধারণ করতে পারেন অথবা কমিশন হারে টাকা সার্ভিস ফি নির্ধারণ করতে পারেন। গ্রাহক যত বেশি হবে ততবেশি টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
আরো পড়ুন : ১০টি সেরা ঘরোয়া ব্যবসার আইডিয়া ।
পরিশেষে – Finally
বন্ধুরা আজকে আমরা অত্যন্ত দারুণ একটি ব্যবসায়িক আইডিয়া নিয়ে আলোচনা করেছি । দারুন বলার কারণ হলো কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসাটি অত্যন্ত চাহিদাযোগ্য ও লাভজনক ব্যবসা হিসেবে রূপান্তরিত হয়েছে। তাই যে কেউ চাইলে এই ব্যবসাটি করে স্বাবলম্বী হতে পারবেন।
আশা করা যায় আমাদের আজকের আর্টিকেলটি যদি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ধারণা ও তথ্য পাবেন।
আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অবশ্যয় বন্ধু-বান্ধব ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে শেয়ার করবেন ধন্যবাদ।