আজকের “ কি ব্যবসা করা যায় ” আর্টিকেলে বন্ধুরা আপনারা কিছু লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া পাবেন । বাংলাদেশ অত্যন্ত জনবহুল দেশ এবং র্পযাপ্ত কর্মসংস্থান না থাকার কারণে এই দেশে চাকরি করার তেমন সুযোগ নেই । তাই এই বেকারত্ব থেকে নিজেকে মুক্ত করতে হলে প্রয়োজন উদ্যেগ নেওয়া । বুকে সাহস নিয়ে নিজেকে উদ্যেক্তা হিসেবে গড়ে তোলা ছাড়া বাংলাদেশে দীর্ঘদিন টিকে থাকার উপায় নেই ।
আমাদের আজকের সম্পূর্ণ লিখাটি মনোযোগসহকারে পড়লে আশা করা যায় আপনি “ বর্তমানে কি ব্যবসা করা যায় “ তার একটি আইডিয়া পাবেন । তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে দেখে নেওয়া যাক ।
কি ব্যবসা করা যায় [ ১০টি সেরা ট্রেন্ডিং ব্যবসা ]
১/ কৃষি ব্যবসা
আমাদের বাংলাদেশ হল একটি কৃষি প্রধান দেশ এদেশের মাটি খুবই উর্বর । তাই বাংলাদেশে ব্যবসা করার কথা চিন্তা করলে উদ্যোক্তাদের কাছে সবার প্রথমে কৃষি ব্যবসার আইডিয়া মাথায় আসে । কারণ এদেশে কৃষি ব্যবসার আইডিয়াগুলোই সবচেয়ে কার্যকর হয় ।
কৃষি ব্যবসা হিসেবে আপনি ছাদবাগান , সার ও কীটনাশকের ব্যবসা, জাফরান চাষ, মৌসুমী সবজি চাষ, ফুল ও ফলের চাষ, কয়েল- কবুতর ও নানান পাখি পালন করা, গরু-ছাগল ও মহিষের কৃষি খামার, হাঁস মুরগি এবং মাছের সমন্বিত চাষ এছাড়াও বর্তমান সময়ের নতুন আবিষ্কার বায়োফ্লক পদ্ধতির মাধ্যমে মাছ চাষ করার কৃষির ব্যবসা করা যেতে পারে ।
অন্যান্য ব্যবসা গুলোর তুলনায় কৃষি ব্যবসা শুরু করতে কম পুজিঁর প্রয়োজন হয় এছাড়াও কৃষি ব্যবসাতে অন্যান্য ব্যবসার মতো আইনগত জটিলতা নেই । তাই আমাদের দেশে এখনো অনেক মানুষ যেহেতু কৃষির সাথে জড়িত তাই কৃষি ব্যবসার আইডিয়াই উপযুক্ত একটি ব্যবসা হবে বলে আমি মনে করি ।
২/ ব্লগিং ব্যবসা
বর্তমানে দেশ-বিদেশের সকল শিক্ষিত ও তরুণ যুবক যুবতীদের কাছে ব্লগিং ব্যবসা অত্যন্ত পরিচিত একটি ব্যবসা । একটি স্মার্টফোন অথবা কম্পিউটারে ইন্টারনেট কানেকশনের মাধ্যমে যে কেউ পৃথিবীর যে কোন স্থান থেকে ব্লগিং ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন ।
ব্লগিংয়ের মাধ্যমে ব্যবসা করার কয়েকটি উপায় রয়েছে যেমন : ভিডিও ব্লগিং করা এবং লেখালেখি করে ব্লগিং করা ।
আপনি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে আপনার তৈরিকৃত ভিডিও গুলো পাবলিশ করে ব্লগিং করতে পারেন । ভিডিও ব্লগিংয়ের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি প্ল্যাটফর্ম হল ইউটিউব ।
অন্যদিকে আপনি যদি লেখালেখি করতে পছন্দ করে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনি একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে লিখালিখি করে ব্লগিং করতে পারেন ।
পরবর্তীতে আপনার ব্লগকে বিভিন্নভাবে মনিটাইজ করে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন যেমন : গুগল এডসেন্স , ইজোয়িক , অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, প্রোডাক্ট বিক্রয়, স্পন্সর পোস্ট ইত্যাদি উপায়ে আপনি আপনার ব্লগ থেকে আয় করতে পারবেন ।
৩/ অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ব্যবসা
অনলাইন থেকে যেসব উপায়ে অর্থ উপার্জন করা যায় তার মধ্যে জনপ্রিয় একটি মাধ্যম হলো অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ব্যবসা । অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বলতে বুঝায় অন্য কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সেবা প্রমোট করে বিক্রি করাকে । এবং বিক্রিত পণ্য থেকে কমিশন অর্জন করাকেই মূলত অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হিসেবে চেনা হয়ে থাকে ।
বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং প্ল্যাটফর্ম হল amazon.com এর অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম । এছাড়াও বর্তমানে ছোট-বড় সকল প্রতিষ্ঠানই এখন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার জন্য সুযোগ করে দিচ্ছে ।
এফিলিয়েট মার্কেটিং ব্যবসা করার জন্য আপনার একটি ইন্টারনেট কানেকশন যুক্ত কম্পিউটার প্রয়োজন হবে । এছাড়াও আপনার একটি ব্লগ ওয়েবসাইট প্রয়োজন হবে যেখানে আপনি বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী নিয়ে লেখালেখি অথবা ভিডিও পাবলিশ করবেন ।
৪/ ডোমেইন এবং হোস্টিং ব্যবসা
বর্তমানে “কি ব্যবসা করা যায় ” এই নিয়ে যদি আপনি চিন্তা করে থাকেন তাহলে ডোমেইন ও হোস্টিং ব্যবসায় শুরু করতে পারেন । বর্তমানে ছোট বড় সকল প্রতিষ্ঠানেই এখন নিজেদের জন্য ওয়েবসাইট তৈরি করছে । অনলাইনের প্রসারতা বাড়ার সাথে সাথে সবাই ওয়েবসাইটের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারছেন । এবং আমরা জানি একটা ওয়েবসাইট মূলত একটি ডোমেইন ও হোস্টিংয়ের মাধ্যমে তৈরি করা হয়ে থাকে ।
একটি ডোমেইন এবং হোস্টিং ছাড়া কখনো ওয়েবসাইট তৈরি করা সম্ভব নয় । তাই এই ডোমেইন এবং হোস্টিংয়ের বর্তমানে প্রচুর চাহিদা রয়েছে । আপনি বিভিন্ন বড় বড় ডোমেইন ও হোস্টিং সেলার কোম্পানির সাথে রিসেলার হিসেবে ব্যবসা করতে পারেন ।
অর্থাৎ তাদের ডোমেইন এবং হোস্টিংগুলো পাইকারি মূল্যে ক্রয় করে খুচরা মূল্যে আপনি বিক্রি করবেন ।
৫/ স্টক মালের ব্যবসা
স্টক মালের ব্যবসা বলতে বুঝায় কোন পণ্য সামগ্রী গুদামে মজুদ করে রাখা এবং বাজারে তার মূল্য বৃদ্ধি পেলে তখন তা বিক্রি করে লাভ করা । এমন অনেক পণ্য সামগ্রী রয়েছে যা সারা বছর চাষ বা উৎপাদন করা সম্ভব হয় না তাই সেইসব পণ্যগুলোকে গুদামজাত করে রাখা প্রয়োজন হয় ।
যেমন : সরিষ, পাট , আলু, পেঁয়াজ, রসুন, চাউল , বাদাম,সিগারেট,আদা – মশল্লা ইত্যাদি পণ্য সামগ্রীগুলো দিয়ে আপনি স্টক ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন ।
তবে স্টক ব্যবসা করার ক্ষেত্রে অবৈধ পথ অনুসরণ করা থেকে বিরত থাকবেন । যেমন অযথা পণ্য মজুদ করে রেখে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা । এই ধরনের কর্মকাণ্ডের জন্য সরকার আপনার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে পারে ।
তাই স্টক ব্যবসা করার ক্ষেত্রে সততার সাথে এই ব্যবসা পরিচালনা করার চেষ্টা করতে হবে । স্টক ব্যবসা সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ুন ।
৬/ কাচাঁমালের ব্যবসা
অনেকেই ব্যবসা করতে চায় কিন্তু পর্যাপ্ত পুঁজির অভাবে আর তা শুরু করা হয় না আবার অনেকে কি ব্যবসা করা যায় তাই বুঝতে পারছেন নাহ। তারা কাঁচামালের ব্যবসার মাধ্যমে নিজের উদ্যোগটি শুরু করতে পারেন । পাইকারি মূল্যে কৃষকদের থেকে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি ও ফলমূল ক্রয় করে তা খুচরা মূল্যে বিক্রি করতে পারেন ।
আমাদের প্রতিদিনকার খাদ্য তালিকায় কোন না কোন একটি সবজি বা কাঁচামাল থাকেই । তাই এই ব্যবসা লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা খুব কমই কারণ এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে ।
কাঁচামালে ব্যবসা বলতে শুধুমাত্র শাকসবজি বা ফলমূল বিক্রির ব্যবসা বোঝায় না । কাঁচামাল বলতে অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের পদার্থ কেও বুঝায় যেমন : রড , সিমেন্ট , বালু ইত্যাদি নির্মাণসামগ্রী কাচাঁমাল । যদি আপনার কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুজিঁ এবং টিকাদারদের সাথে ভালো সম্পর্ক থাকে তাহলে আপনি এই ধরনের নির্মাণসামগ্রী পণ্যের কাঁচামাল সরবারহ করে ব্যবসা করতে পারেন ।
৭/ সাপ্লাই ব্যবসা
আজকের “ কি ব্যবসা করা যায় “ এই আর্টিকেলের মধ্যে অন্যতম আরো একটি ব্যবসার আইডিয়া হল সাপ্লাই ব্যবসা । আপনি বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী সাপ্লাই দিয়ে ব্যবসা করতে পারেন যেমন : গার্মেন্টসে সুতা , বোতাম , ট্যাগ , লেবেল , জিপারসহ বিভিন্ন ধরনের গার্মেন্টস জাতীয় প্রোডাক্ট সাপ্লাই করতে পারেন ।
এছাড়াও বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী প্রোজেক্টে বা প্রকল্পে ইট , বালু , রোড, সিমেন্ট সাপ্লাই করতে পারেন । সাপ্লাই ব্যবসা অত্যন্ত লাভজনক একটি ব্যবসার আইডিয়া । বলা হয়ে থাকে এই ব্যবসায় যার যোগাযোগ বা কমিউনিকেশন স্কিল ভালো তার সফলতা পাওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি ।
তাই আপনি যদি কমিউনিটিশন বা মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে দক্ষ হয়ে থাকেন তাহলে আপনি সাপ্লাই ব্যবসা করে অল্প দিনেই ভালো অর্থ উপার্জন করতে পারবেন । সাপ্লাই ব্যবসা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে আমাদের সাপ্লাই ব্যবসা আর্টিকেলটি পড়ুন ।
৮/ ডিলারশিপ ব্যবসা
আপনার হাতে পর্যাপ্ত পুজি রয়েছে কিন্তু আপনি কি ব্যবসা করা যায় এই নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন এমন যদি হয় তাহলে ডিলার ব্যবসার কথা চিন্তা করতে পারেন । মোটামুটি ৩ থেকে ৫ লক্ষটাকা পুঁজি থাকলেই আপনি ডিলারশিপ ব্যবসা শুরু করতে পারবেন ।
ডিলারশিপ ব্যবসা শুরু করার জন্য আপনার একটি ব্যাংক একাউন্ট , নিজস্ব এজেন্সি ফার্ম, ট্রেড লাইসেন্স এবং যে কোম্পানির নিকট থেকে ডিলারশিপ নিবেন তার সাথে রেজিস্ট্রেশন করে নিতে হবে ।
বর্তমানে ওয়ালটন , স্কয়ার, অলটাইম এবং বসুন্ধরা কোম্পানির ডিলার অনেক জনপ্রিয় । ডিলারশিপ ব্যবসা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে আমাদের ডিলেরশিপ ব্যবসার আইডিয়া আর্টিকেলটি পড়ুন ।
৯/ কসমেটিকস ব্যবসা
বর্তমানে ছোট- বড় সকলেই কসমেটিকস প্রোডাক্ট ব্যবহার করছে । অর্থ্যাৎ কসমেটিকস পণ্যের মার্কেট বিশাল । তাই আপনি কি ব্যবসা করা যায় এই চিন্তা চিন্তিত হয়ে থাকেন তাহলে নির্দিধায় কসমেটিকস পণ্যের ব্যবসায় শুরু করে দিতে পারেন ।
কসমেটিকস ব্যবসায় কিভাবে শূরু করবেন ? কোথায় থেকে প্রোডাক্ট কিনবেন ? কসমেটিকস ব্যবসায় শূরু করতে কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন হতে পারে সব জানতে আমাদের কসমেটিকস ব্যবসার আইডিয়া পোষ্টটি পড়ুুন ।
১০/ কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসা
র্পযাপ্ত পরিমাণ পুজিঁ রয়েছে কিন্তু বুঝে উঠতে পারছেন কি ব্যবসা করা যায় তাহলে আপনার জন্য কুরিয়ারর সার্ভিস ব্যবসা । শুরুতে যেহুতু আপনি কুরিয়ার সার্ভিস সম্পর্কে তেমন অবগত ও অভিজ্ঞ নয় তাই আপনি ছোট একটি এলাকার কুরিয়ার হিসাবে কাজ করতে পারেন । বড় বড় কুরিয়ার কোম্পানীর প্রোডাক্টগুলো সে এলাকায় বাসায় বাসায় পেীছে দিন ।
এবং এভাবে ধীরে ধীরে পরিচিত বাড়ার সাথে সাথে ব্যবসার পরিধি বাড়াতে থাকুন ।কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে কুরিয়ার সার্ভিস বিজনেস আইডিয়া ব্লগটি পড়ুন ।
পরিশেষে
বন্ধুরা আমাদের আজকের ” বর্তমানে কি ব্যবসা করা যায় “ আর্টিকেলটি আপনার কাছে কেমন লাগলো তা নিচে কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন নাহ । এছাড়াও আরো নানা ধরনের ব্যবসার আইডিয়া পেতে এই পেইজটি ভিজিট করুন ।
এবং নিয়মিত ব্যবসায় সম্পর্কি আইডিয়া পেতে আমাদের ফেইসবুক পেইজকে ফলো করে রাখুন ।