কাগজ রচনা

সূচনা ঃ কাগজ আধুনিক সভ্যজগতে এক গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। আধুনিক সভ্যতার ক্রমবিকাশে এর অবদান সবচেয়ে বেশি। কাগজ আবিষ্কারের ফলে একদিকে যেমন জ্ঞান-বিজ্ঞানের দ্রুত প্রসার সম্ভব হয়েছে তেমনি মানুষ তার চিন্তা-ভাবনাকে স্থায়ীভাবে প্রকাশ করতে সমর্থ হয়েছে। 

কাগজ আবিষ্কারের আগে মানুষ তার চিন্তা-ভাবনাকে পশুর চামড়া, ভুর্জপত্র, গাছের ছাল, ইট, পাথর, ধাতবপাত্র প্রভৃতিতে লিপিবদ্ধ করত। মৌর্য সম্রাট অশোক তাঁর অনুশাসনগুলো পাথরের গায়ে খোদাই করেছিলেন। পৃথিবীর প্রাচীন সভ্যতাগুলোর ধ্বংসাবশেষ থেকে যে লেখা উদ্ধার করা হয়েছে তার প্রায় সবটাই মৃৎপাত্র এবং ধাতবপাত্রে খোদিত। 

প্রাচীন মিশরীয়রা প্যাপিরাস নামক এক প্রকার গাছের ছালে লিখত। ইংরেজি ‘পেপার’ শব্দটি এই প্যাপিরাস কথা থেকে এসেছে। 

আবিষ্কার ঃ চীনদেশে সর্বপ্রথম কাগজের আবিষ্কার হয়। ভারতবর্ষেও এক রকমের তুলোট কাগজের ব্যবহার হত। পরবর্তীকালে ভারতীয় বণিকেরা চীন দেশ থেকে কাগজ তৈরির পদ্ধতি শিক্ষা নেয়। ভারতবর্ষে তখন চীনা কাগজের প্রচলন হয়। আরো পরে ইউরোপ মহাদেশে কাগজ তৈরির পদ্ধতি প্রচলিত হয়। ১৭৯৮ সালে রবার্ট লুই নামে ফ্রান্সের এক ভদ্রলোক কাগজের কল আবিষ্কার করেন। তারপর থেকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কাগজ উৎপাদন শুরু হয়।

প্রস্তুত প্রণালী ঃ সাধারণত বাঁশ, খড়, ঘাস, পাটখড়ি, কাঠের গুড়ি, ছেঁড়া কাপড়, আখের ছোবড়া প্রভৃতি থেকে কাগজ তৈরি হয়। এসব উপাদান যন্ত্রের সাহায্যে চূর্ণবিচূর্ণ করা হয়। তারপর এর সাথে এক রকমের রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে ‘মন্ড’ তৈরি করা হয়। যান্ত্রিক উপায়ে এই মণ্ডকে চাপ দিয়ে তা থেকে পানি বের করে ফেলা হয়। পরবর্তীকালে বিভিন্ন যন্ত্রের মধ্য দিয়ে যাবার সময় শুকিয়ে তা কাগজে পরিণত হয়। পরে কাগজগুলোকে সুবিধা মত সাইজ বা আকার দেওয়া হয় এবং প্যাকেট করে বাজারজাত করা হয় ।

কাগজের প্রকারভেদ ঃ কাগজ নানা আকারের হয়ে থাকে। এর মধ্যে রয়্যাল, ডিমাই, ক্রাউন, ডাবল ক্রাউন, ফুলসক্যাপা প্রভৃতি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। প্রকারভেদে আবার কাগজ নানা রকমের হয়ে থাকে। লেখার কাগজ, ছাপার কাগজ, নিউজ প্রিণ্ট, চোষ কাগজ, প্যাকিংয়ের কাগজ, মলাটের কাগজ ইত্যাদি। গুণগত দিক থেকেও কাগজ নানা রকমের হয়ে থাকে। ভালো কাগজ দেখতে মসৃণ। কিন্তু অপেক্ষাকৃত খারাপ কাগজ দেখতে খসখসে।

রঙিন কাগজ তৈরির বেলায় মণ্ডের সাথে ইচ্ছামত রং মিশিয়ে দেওয়া হয়। লাল, নীল, সবুজ প্রভৃতি রংয়ের কাগজ আমরা এভাবে পেয়ে থাকি। যান্ত্রিক উপায়ে কাগজকে ইচ্ছামত পাতলা এবং পুরু করা হয়ে থাকে।

বাংলাদেশের কাগজ : বাংলাদেশে তিনটি বড় সরকারি কাগজের মিল রয়েছে। এই মিল থেকে প্রচুর পরিমাণ কাগজ উৎপাদিত হয়ে থাকে। সবচেয়ে বড় মিলটির নাম “দি কর্ণফুলী পেপার মিলস’। এটি পার্বত্য চট্টগ্রামের চন্দ্রঘোণা নামক স্থানে কর্ণফুলী নদীর তীরে অবস্থিত। 

এই মিল থেকে উন্নত মানের প্রচুর কাগজ উৎপন্ন হয়। পাবনা জেলার পাকশীতে ‘নর্থ বেঙ্গল পেপার মিলস্’- নামে আর একটি মিল অবস্থিত। এখানেও প্রচুর কাগজ উৎপন্ন হয়। তবে মানের দিক থেকে কর্ণফুলী পেপার মিলের কাগজই শ্রেষ্ঠ। তৃতীয় মিলটি খুলনায় অবস্থিত। এখানে নিউজপ্রিন্ট তৈরি হয়। 

এছাড়া বেসরকারি কয়েকটি কাগজের মিল রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- বসুন্ধরা পেপার মিল্স, টি.কে. পেপার মিল্স, শাহাজালাল পেপার মিলস, পূর্বাচল পেপার মিল্স, মোস্তফা পেপার মিল্স প্রর্ভতি। বাংলাদেশে এত বেশি কাগজ উৎপন্ন হয় যে, দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়েও বিদেশে প্রচুর কাগজ রপ্তানি করা হয়।

কাগজের ব্যবহার ঃ দৈনন্দিন জীবনে কাগজ একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। কাগজ ছাড়া আমরা একটা দিনও চলতে পারি না। কাগজের ব্যবহার নানাভাবে হয়ে থাকে। লেখার কাজে, বইপত্র ছাপার কাজে, অফিস আদালতে ও বিভিন্ন দাফতরিক কাজে কাগজ ব্যবহৃত হয়। সংবাদপত্র ছাপানোর কাজে নিউজপ্রিন্ট ব্যবহৃত হয়।

উপসংহার ঃ জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিকাশের ক্ষেত্রে কাগজ একটি প্রয়োজনীয় উপাদান। কাগজ ছাড়া বই-পত্রের প্রকাশ সম্ভব হত না, সংবাদপত্রও বের হত না। কাগজ না থাকলে সভ্যতার এমন দ্রুত অগ্রগতিও সম্ভব হত না। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় আমাদের দেশে প্রতি বছর কাগজের মূল্য বেড়েই চলেছে। তাতে কাগজ অনেকেরই ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। ফলে গরিব লোকের ছেলে-মেয়েরা ঠিকমত লেখাপড়া করতে পারছে না। সুতরাং কাগজের মূল্য যাতে স্থিতিশীল থাকে সেদিকে সরকারের লক্ষ্য রাখা উচিত ।

 

আরো পড়ুন :

➡️বাংলাদেশের ফল রচনা ।

➡️ একে ফজলুল হক রচনা ।

➡️বাংলাদেশের ফুল রচনা ।

➡️কপিরাইট কি বা কপিরাইট কাকে বলে ?

নিয়মিত এডুকেশন সম্পর্কিত তথ্য পেতে যুক্ত থাকুন আমাদের ফেইসবুক পেইজের সাথে ।

By MD Imran hossan

২০১৯ সাল থেকে যুক্ত আছি এই টেকনোলজির দুনিয়ার সাথে । যদিও আমার পড়াশোনা ব্যবসা ও বাণিজ্য নিয়ে । ওয়েবসাইট ডেভেলপ করে দেওয়ার পাশাপাশি বর্তমানে লিখালিখি ও ব্লগিং সেক্টর এর সাথে যুক্ত আছি । নিজের জ্ঞান কে অন্যদের সাথে ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠা করেছি Goafta.com ওয়েবসাইট । স্বপ্ন দেখছি একটি বিশ্বস্ত ব্যবসায়িক ব্লগ গড়ে তোলার । এবং নিজে যতটুকু জানি তা সবার কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার , তাতে যদি কারো শস্য পরিমাণও উপকার হয় তাতেই আমার প্রশান্তি |

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *