কপিরাইট কি ? What is Copyright ?
লেখক বা শিল্পী কর্তৃক তার সৃষ্টকর্মের ওপর একটা নিদিষ্ট সময়ের জন্য স্থায়ী আইনগত অধিকারকে কপিরাইট ( copyright ) বলে ।
কপিরাইট ক্লেইম কি ? What is copyright claim ?
একটি কপিরাইট দাবি বা কপিরাইট ক্লেইম হলো একটি বিবৃতি যা দাবি করে যে কেউ কপিরাইট আইনের অধীনে একটি নির্দিষ্ট কাজের একচেটিয়া অধিকারের মালিক। এতে লেখা, সঙ্গীত, শিল্প, ফিল্ম, সফ্টওয়্যার ইত্যাদির মতো সৃজনশীল কাজ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। কপিরাইট ক্লেইমটি মালিকের অনুমতি ছাড়া কাজটি ব্যবহার করা থেকে বিরত রাখতে এবং সেই অধিকার লঙ্ঘনের জন্য ক্ষতির মতো আইনি প্রতিকারের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
কপিরাইট কেন গুরুত্বপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর । (Why is copyright important? Explain )
কপিরাইট একটি আইনগত ধারণা । যার উদ্দেশ্যে হলো নকল করা থেকে প্রকৃত লেখক, শিল্পী বা শিল্পকর্মের স্বত্বাধিকারীর স্বার্থ রক্ষা করা । এরূপ স্বার্থের বিপক্ষে সুরক্ষা ব্যবস্থা না থাকলে স্বত্বাধিকারী ক্ষতিগ্রস্ত হয় । এতে বুদ্ধিবৃত্তিক সৃষ্টিধর্মী কাজ নিরুৎসাহিত ও বাধাগ্রস্ত হয় । এ অবস্থা থেকে উত্তরণ এবং সৃষ্টিধর্মী কাজকে উৎসাহিত করতে কপিরাইট গুরুত্বপূর্ণ ।
কপিরাইট সংক্রান্ত ধারণা – Concept of Copyright
মি. জামান তার দীর্ঘদিনের পাঠদান অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে বিবিএ সম্মান শিক্ষার্থীদের জন্য একটা পাঠ্যবই রচনা করে নিজ খরচে তা প্রকাশ করলেন । বইটি বাজারে আসার ক’দিনের মধ্যেই তার বইয়ের অনেক অংশ হুবুহু নকল করে আগে থেকে বাজারে চালু থাকা বইয়ের একজন লেখক তার বইয়ের নতুন সংস্করণ প্রকাশ করলো ।
মি. জামানের লেখা হুবহু নকল করা হয়েছে-এটার প্রমাণ দেখাতে না পারায় তার সারা জীবনের সাধনা এখন অন্যের সৃষ্টিকর্ম হিসেবেই প্রতিষ্ঠা লাভ করলো। মি. রফিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, ফটোগ্রাফীর ওপর কোর্স করে দেশে এসে আবহমান বাংলার বিভিন্ন বিষয়কে তার ছবিতে তুলে এনেছেন। তিনি তার সৃষ্টিকর্মের গুরুত্বপূর্ণ ছবিগুলো কপিরাইট করছেন ।
একটা ব্যাংক তাদের ক্যালেন্ডার তৈরিতে তার কতকগুলো ছবি প্রকাশ করায় মি. রফিক ব্যাংকের বিরুদ্ধে আইনগত প্রতিকার দাবি করেন । ব্যাংক তাঁকে নায্যে ক্ষতিপূরণ দিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে বাধ্য হয় । উভয় ক্ষেত্রেই লেখক শিল্পীর প্রতিকার পাওয়া ও না পাওয়ার পার্থক্য হলো কপিরাইট নিবন্ধন করা ।
লেখক বা শিল্পী কর্তৃক তার সৃষ্টকর্মের ওপর একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য স্থায়ী আইনগত অধিকারকে কপিরাইট বলে । এটি একটি আইনগত ধারণা । যার উদ্দেশ্য হলো নকল করা থেকে প্রকৃত লেখক, শিল্পী বা সৃষ্টকর্মের স্বত্বাধিকারীর স্বার্থ সুরক্ষা করা; যা করা না হলে এর স্বত্বাধিকারী বা মালিকানা বা মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ।
কপিরাইটের ধারণা প্রথমত ছাপা বা মুদ্রণের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠা লাভ করলেও বর্তমানে যে কোনো বুদ্ধিবৃত্তিক সৃষ্টিকর্মের ক্ষেত্রেই এর প্রয়োগ হয়ে থাকে । বই, প্রবন্ধ, গল্প, কবিতা, নাটক, চলচ্চিত্র, নৃত্য, সংগীত কৌশল, অডিও রেকডিং, সাউন্ড রেকডিং, শিল্প সংক্রান্ত নকশা, চিত্রলেখ বিষয়ক নকশা, ফটোগ্রাফস্, স্থাপত্য শিল্পকর্ম, সফটওয়্যার ইত্যাদি বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ সুরক্ষা কপিরাইটের অন্তর্ভুক্ত ।
বই লেখকদের এবং প্রকাশকদের আইনগত অধিকার সংরক্ষণের জন্য বৃটেনের রাজা দ্বিতীয় চার্লস তাদের পার্লামেন্টে সর্বপ্রথম ১৬৬২ সালে The Press Act পাস করেন। এতে নিবন্ধিত বইয়ের তালিকা সংরক্ষণের বিধান ছিল । পরে ১৭১০ সালে লেখকসহ বিভিন্ন ব্যক্তিগত অধিকার সংরক্ষণের জন্য The British Statute of Anne 1710 পাস করা হয়।
এতে লেখকদের পাশাপাশি বই প্রকাশকদের একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অধিকার সংরক্ষণের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয় । অর্থাৎ লেখক বা শিল্পকর্মের মালিক তার অধিকার অন্যের নিকট হস্তান্তর করতে বা বিক্রয় করতে পারবে- এই বিধানও এতে সন্নিবেশিত ছিল । ১৭১০ সালে পাস করা এই আইনকেই বর্তমানকালের কপিরাইট আইনের ভিত্তি বিবেচনা করা হয়ে থাকে ।
এখন বাংলাদেশে ২০০০ সালের কপিরাইট আইন (২০০৫ সালের সংশোধনীসমেত) ও কপিরাইট বিধিমালা ২০০৬ অনুযায়ী এ সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয় । বর্তমান বিশ্বায়নের এ যুগে কপিরাইট অধিকার আন্তর্জাতিকভাবে সংরক্ষণও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হয়ে থাকে । বাংলাদেশ Universal Copyright Convention 1952 তে স্বাক্ষরকারী দেশ। ফলে এর বিধানাবলি মেনে চলতে বাংলাদেশ বাধ্য ।
আরো পড়ুন :
➡️পেটেন্ট কি ? এবং পেটেন্টের ধারণা ।
➡️ট্রেড মার্ক কি /ট্রেডমার্ক কাকে বলে ?
➡️ট্রেডমার্ক নিবন্ধন পদ্ধতি / ট্রেডমার্ক করার নিয়ম
➡️সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির গঠনতন্ত্র ।
নিয়মিত এডুকেশন সম্পর্কিত তথ্য পেতে যুক্ত থাকুন আমাদের ফেইসবুক পেইজের সাথে ।