একটা গ্রামের বাজারের কথা যদি ভাবা যায়, তবে দেখা যাবে সেখানে ছোট ছোট মুদির দোকান, চা-পুরির দোকান, কাপড়ের দোকান । কেউ শব্জি, কেউ মাছ বা গোশত বিক্রয় করছে । দর্জির দোকান, সেলুন ও কাপড়ের * দোকান । কেউ সার, কীটনাশক বা পোল্ট্রি বা ডেইরি ফিড বিক্রয় করছে । কারও দোকান স্থায়ী প্রকৃতির আবার কারও অস্থায়ী ।
এভাবে নানান দোকান আমরা যা দেখি-এর সবই একমালিকানা ব্যবসায় । শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে মহল্লা, কাঁচাবাজার, রাস্তার মোড় সর্বত্রই এ ধরনের ব্যবসায়ের ছড়াছড়ি। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতেও যখন ৮০% এর মতো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান একমালিকানা ব্যবসায় সেখানে আমাদের দেশে এ হার আরও অনেক বেশি। হিসাব রাখার জটিলতা নেই, মালিকানা ও লাভ বণ্টন নিয়ে বিরোধ নেই, ইচ্ছা হলো দোকান বন্ধ, শারি ব্যবসায় বন্ধ । মালিক অসুস্থ ব্যবসায় চলছে না- মরে গেলেতো কথাই নেই ।
স্বপন বন্ধুদের নিকট থেকে টাকা নিয়েছে ব্যবসায়ের জন্য । লাভ হলে কিছু বন্ধুদেরও দেয়। কিন্তু ব্যবসায়ের সব দায় যেহেতু তার; ব্যবসায়ের ক্ষতির দায় যেহেতু বন্ধুরা নেয় না- তাই ব্যবসায়টি স্বপনের একমালিকানা ব্যবসায় ।
একক ব্যক্তির মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত ব্যবসায়কে একমালিকানা ব্যবসায় বলে । ভিন্নভাবে বললে বলা যায়, যে ব্যবসায়ের মালিক একজন এবং মালিকই সর্বেসর্বা তাই একমালিকানা ব্যবসায় । এরূপ ব্যবসায় অত্যন্ত সরল প্রকৃতির । যে কেউ স্বল্প পুঁজি নিয়ে যেমনি সহজেই এ ব্যবসায় গঠন ও পরিচালনা করতে পারে তেমনি ইচ্ছা করলে সহজে এর অবসানও ঘটাতে পারে ।
এক্ষেত্রে মালিক নিজ দায়িত্বেই মূলধন সংস্থান করে, প্রয়োজনে কর্মচারি সাথে নিয়ে নিজেই ব্যবসায় চালায় এবং মুনাফা হলে তা একাই ভোগ করে । অবশ্য ক্ষতি হলে সব দায় তাকে একাই বহন করতে হয় । একক মালিকের সামর্থ্যের সীমাবদ্ধতার কারণে এরূপ ব্যবসায়কে খুব বড় করে গড়ে তোলা যায় না । সহজে এ ব্যবসায় ভেঙ্গে যেতে পারে বিধায় এর প্রতি জনআস্থাও কম থাকে । এরূপ ব্যবসায়ের মাধ্যমে ব্যবসায়ের গোড়াপত্তন ঘটায় একে সবচেয়ে প্রাচীন ধরনের ব্যবসায় সংগঠন বলা হয়ে
থাকে ।
একমালিকানা ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য-Features of a Sole Proprietorship Business
ব্যবসায় সংগঠন যে সকল বৈশিষ্ট্যের কারণে নিজস্ব স্বকীয়তা নিয়ে অদ্যাবধি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে টিকে আছে। তা নিম্নে তুলে ধরা হলো :
১. একক মালিকানা (Single ownership): এরূপ ব্যবসায়ের প্রথম ও প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো একক মালিকানা অর্থাৎ এ ব্যবসায়ের মালিক একজন মাত্র ব্যক্তি। তিনি নিজেই বা নিজ দায়িত্বে মূলধন সংস্থান করেন। ব্যবসায় গঠন ও পরিচালনা করেন। ধরা যাক, সুমন নিজের চার লক্ষ টাকা এবং দুই বন্ধু রবি ও সানি-প্রত্যেেকের নিকট থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ব্যবসা শরু করলো ।এটা স্বপনের একমালিকানা ব্যবসা ।স্বপন নিজ দায়িত্বে সকল মুলধন জোগাড় করাই এর সকল ঝুকি যেমন তিনি বহন করবেন টিক তেমনিই সকল মুনাফা তিনিই একা ভোগ করবেন।
২. সহজ সংগঠন (Easy formation): সহজ সংগঠন বলতে এমন প্রতিষ্ঠানকে বুঝায় যার গঠন ও পরিচাল অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে সহজ। একমালিকানা ব্যবসায়ের গঠন সবচেয়ে সহজতর
একক মালিক ইচ্ছে করলে সীমিত মূলধন নিয়ে সহজেই এ ব্যবসায় গঠন করতে পারে। আইনের কোনো ঝামেলা এক্ষেত্রে নেই । শুধু ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন এলাকার অধীন স্থায়ী ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে এথেকে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হয় । এর মালিক ব্যবসায়ের কাজে দ্রুত যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। সাধারণ প্রতিষ্ঠান ছোট হওয়ায় এর পরিচালনা ও হিসাব-নিকাশ সবই সহজ।
৩. সীমিত মূলধনও আয়তন (Limited capital and size): একক মালিকের সামর্থ্যের সীমাবদ্ধতার কার সীমিত মূলধন এ ধরনের ব্যবসায়ের মূলধন স্বভাবতই কম থাকে। ফলে সাধারণত তা ক্ষুদ্রায়তন প্রকৃতিতেই গড়ে ওঠ ক্ষেত্রবিশেষে মালিকের মূলধন প্রদানের সামর্থ্য বেশি থাকলেও পরিচালনাগত সামর্থ্যের সীমাবদ্ধতার কারণে ব্যবসায়ের পরিসর বাড়াতে মালিক দ্বিধান্বিত থাকে । ব্যবসায়ের পৃথক সত্তার অভাবে সবকাজে মালিকের প্রত্যন্ত অংশগ্রহণের আবশ্যকতাও এর আয়তন বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করে। মালিকের অসীম দায় ও অনিশ্চিত স্থায়িত্বে কারণেও অন্যরা ঋণ দিতে চায় না । ফলে সব মিলিয়ে এরূপ ব্যবসায়ের মূলধনের পরিমাণ সীমিত ও এর আকর ছোট হয় ।
৪. মালিকের অসীম দায় (Unlimited liability of proprietor) : মালিকের অসীম দায় বলতে ব্যবসায়ে বিনিয়োগকৃত নিজস্ব মূলধনের বাইরেও তার দায় সৃষ্টি হওয়াকে বুঝায়। যার কারণে মালিকের নিজস্ব বাতিল অন্য সকল সম্পত্তি প্রয়োজনে দায়বদ্ধ হয় এবং সেজন্য সে দেউলিয়াও ঘোষিত হতে পারে। কোম্পানি সংগঠনে শেয়ারহোল্ডারদের দায় তাদের ক্রয়কৃত শেয়ার মূল্য পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু একমালিকানা ব্যবসা নিয়োজিত মূলধন অপেক্ষাও মালিকের অনেক বেশি দায় সৃষ্টি হতে পারে । যে কারণে এরূপ ব্যবসায়ে বিনিয়োগে ও ঋণ দিতে অনেকেই নিরুৎসাহিত হয় ।
৫. একক কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ (Single authority and control): কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার মূলে থাকে কোনো বিষয়া মালিকানা। একমালিকানা ব্যবসায় এর মালিকের নিরঙ্কুশ মালিকানা, একচ্ছত্র কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার জন্ম দেন। ব্যবসায়ের যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে একক মালিক কারও সাথে পরামর্শ করতে বা কারও পরামর্শ শুনতে বাধ্য থাকে না। আইনগত তেমন বাধ্য-বাধকতা না থাকায় ব্যবসায় পরিচালনায় তার ইচ্ছা-অনিচ্ছায় মুখ্য হয় সাড়ায়। কারও কাছে জবাবদিহি করতে হয় না বিধায় এর মালিক কর্মক্ষেত্রে সর্বোচ্চ স্বাধীনতা ভোগ করে। তা
বলা হয়, একমালিকানা ব্যবসায়ে মালিকই সর্বেসর্বা।
আরো পড়ুন ,,,
➡️যৌথ মূলধনী কোম্পানির মূলধন ধারণা ।
➡️প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানী কাকে বলে ?
➡️যেীথ মূলধনী ব্যবসা কাকে বলে ?
নিয়মিত এডুকেশন সম্পর্কিত তথ্য পেতে যুক্ত থাকুন আমাদের ফেইসবুক পেইজের সাথে ।