ইট ভাটার ব্যবসা বর্তমানে লাভজনক ব্যবসা গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি ব্যবসার আইডিয়া । ইটভাটাকে ইংরেজিতে brick-field ও বলা হয়ে থাকে । বর্তমানে ১,০০০ ইটের দাম প্রায় ৭ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা । ইট হল একটি নির্মাণ সামগ্রী পণ্য যা বিভিন্ন দালানকোঠা , রাস্তাঘাট , সেতু , কলকারখানা তৈরিতে ব্যবহার করা হয় ।
ইট ছাড়া এই সকল বড় বড় দালানকোটা এবং সেতু ও রাস্তাঘাট নির্মাণ করা প্রায় অসম্ভব । যার ফলে দিন দিন এর চাহিদা বেড়েই চলছে । তাই ইটভাটার ব্যবসা করাটা যে লসের কোন ব্যবসা হবে না তা চোখ বন্ধ করেই বলা যায় ।
যেখানে ইট তৈরি করা হয়ে থাকে সেই স্থানকে ইটভাটা বলা হয়ে থাকে । আমাদের আজকের আর্টিকেলে ইটভাটার ব্যবসা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব । যাদের হাতে মোটামুটি মানের মূলধন অথবা পুঁজি রয়েছে তারা লাভজনক এই ইটভাটার ব্যবসাটি শুরু করতে পারবেন ।
তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে ইট ভাটার ব্যবসা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক ।
ইট ভাটার ব্যবসা শুরু করার নিয়মসমূহ
প্রতিটি ব্যবসা শুরু করার পূর্বে সে ব্যবসা কিভাবে শুরু করা যায় এবং কি কি কাঁচামাল বা উপকরণ প্রয়োজন হতে পারে ? এছাড়াও ব্যবসার পণ্যগুলো কারা ক্রয় করবে ইত্যাদি সম্পর্কে ব্যবসা শুরুর পূর্বেই বিশ্লেষণ করে নিতে হয় । আর এইসব কিছু নির্ভর করে ব্যবসা শুরুর পূর্বে ব্যবসার পরিকল্পনার উপর ।
তাই ইটভাটার ব্যবসা শুরু করার পূর্বে সম্পূর্ণ স্পষ্ট একটি পরিকল্পনা তৈরি করুন । বলা হয়ে থাকে একটি সঠিক পরিকল্পনা একটি কাজের ৬০% কাজ সম্পন্ন করে থাকে ।
ইটভাটার অবস্থান
ইটভাটার ব্যবসার জন্য আপনাকে অবশ্যই জনবসতি থেকে দূরবর্তী কোনো স্থানে ব্যবসাটি শুরু করতে হবে । পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন স্থানে ইটভাটার ব্যবসা শুরু না করায় ভালো । অন্যথায় এলাকার মানুষজন ও পরিবেশ অধিদপ্তর ঝামেলা সৃষ্টি করবে ।
তাই ইটভাটার ব্যবসা শুরু করার জন্য সঠিক অবস্থান বা জায়গা নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।
ইট ভাটার ব্যবসা করতে পুঁজি কেমন প্রয়োজন ?
ইটভাটার ব্যবসা একটি মাঝারি মানের ব্যবসার আইডিয়া । এটি মাঝারি মানের একটি ব্যবসার আইডিয়া হলেও অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসা হিসাবে পরিচিত । এর কারণ হচ্ছে এই ব্যবসা অন্যান্য ব্যবসার মতো পণ্য পৌঁছে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই এবং প্রতিযোগিতাও কম থাকে ।
তাই নিরাপত্তার দিক থেকে এই ব্যবসাটি অনেকটা এগিয়ে । তবে ইটভাটার ব্যবসাটি শুরু করতে আপনার ন্যূনতম ৮০ লক্ষ থেকে ১কোটি ২০ লক্ষ টাকার মতো পুঁজি প্রয়োজন হবে ।
আপনার ইটভাটার ব্যবসার জন্য কি পরিমাণ মূলধন প্রয়োজন হবে তা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে আপনি কি আকারে ইটভাটার ব্যবসা শুরু করতে চান ।
আপনি যদি মোটামুটি আকারের আয়তনে ইট ভাটার ব্যবসা শুরু করতে চান তাহলে ৮০ থেকে ১কোটি ২০লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেই শুরু করতে পারবেন ।
যদি বড় পরিসরে ইট ভাটার ব্যবসা শুরু করতে চান তাহলে আরো বেশি মূলধন প্রয়োজন হবে ।
আরো পড়ুন,
ইটভাটা তৈরীর জন্য কি কি উপকরণ দরকার ?
ইটভাটা তৈরি করতে অনেক ধরনের উপকরণ প্রয়োজন হয়ে থাকে যেমন : মাটি , মাটির মন্ড তৈরীর জন্য মেশিন , ছাঁচ , কর্মী , ইট পোড়ানোর জন্য চুল্লি , চিমনি , এবং জ্বালানি প্রয়োজন হবে ।
একটি ইটভাটাকে সফলভাবে পরিচালনা করার জন্য এই উপকরণগুলো অবশ্যই প্রয়োজন হবে । এছাড়াও ইটগুলো বিক্রি করার জন্য পরিবহন প্রয়োজন হবে ।
ইটের প্রকারভেদ এবং দাম ২০২২
বর্তমানে নানান ধরনের ইট ইটভাটাগুলোতে পাওয়া যায় যেমন :
১নং ইট যার বর্তমান বাজার দাম প্রায় = ১০,২০০ টাকা ।
২নং ইট যার বর্তমান বাজার দাম প্রায় = ৯,৪০০ টাকা ।
৪নং ইট যার বর্তমান বাজার দাম প্রায় = ৮,২০০ টাকা ।
ঝামা ইট যার বর্তমান বাজার দাম প্রায় = ৭,৫০০ টাকা ।
পিকেট ইট যার বর্তমান বাজার দাম প্রায় = ৮,০০০ টাকা
আপনি যদি কংক্রিটের জন্য ইট কেনার কথা চিন্তা করে থাকেন তাহলে পিকেট ইট খোয়া কিনুন । আর যদি গাথুনির জন্য ইটের খোঁজ করে থাকেন তাহলে আস্ত ইট কিনুন ।
খোয়া ইট :
১নাম্বার ইটের খোয়া গাড়ি প্রতি প্রায় = ১২,০০০ টাকা ।
২নাম্বার ইটের খোয়া গাড়ি প্রতি প্রায় = ১১,০০০ টাকা ।
পিকেট ইটের খোয়া গাড়ি প্রতি প্রায় = ৯,০০০ টাকা ।
ইট নিয়ে সর্তকর্তা :
বাংলাদেশের অনেক ইটভাটা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন ( বিএসটিআই ) এর দেওয়া পরিমাপ অনুসরণ করে না । তাই ইট কেনার পূর্বে বিএসটিআই এর দেওয়া নিয়ম ইটভাটাগুলো অনুসরণ করছে কিনা চেক করুন ।
বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন ( বিএসটিআই ) এর মতে ইটের একটি নির্দিষ্ট পরিমাপ রয়েছে । সে পরিমাপ অনুসারে একটি ইটের দৈর্ঘ্য ২৪ সেন্টিমিটার অথবা ৯ দশমিক ৪৫ ইঞ্চি এবং প্রস্থ ১১ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার বা ৪ দশমিক ৫৩ইঞ্চি ও উচ্চতা ৭ সেন্টিমিটার বা ২ দশমিক ৭৬ ইঞ্চি হওয়ার কথা ।
যদি ইট কেনার সময় এই মাপের বেশ-কম দেখতে পান সেক্ষেত্রে ভোক্তা অধিদপ্তরকে জানাতে পারেন । ভোক্তা অধিকার অভিযোগ নাম্বার হলো : ১৬১২১ । এছাড়াও ইট কেনার পর কিভাবে হিসাব করবেন ইটভাটাগুলো আপনাকে আপনার ইট সঠিকভাবে দিয়েছে কিনা ?
তা যাচাই করতে এই হিসাবটি ফলো করুন । এর জন্য এই ভিডিওটি দেখুন । এই ভিডিওতে ইটের খামাল থেকে সহজেই ইট গোনার পদ্ধতি দেখানো হলো ।
ইটভাটা বা ইট তৈরির নিয়ম
শীতকালকে ইট তৈরীর মৌসুম হিসেবে ধরা হয় । কারণ বর্ষাকালে বৃষ্টির কারণে ভেজানো ইটগুলাকে শুকানো সম্ভব হয় না । যার ফলে শীতকালে ইটভাটাগুলোতে প্রচুর ইট তৈরি করা হয় এবং সারাবছর বিক্রি করার জন্য তা মজুদ করে রাখা হয় ।
ইট তৈরীর জন্য ইটভাটাগুলো বিভিন্ন খাল ও নদ – নদী থেকে মাটি সংগ্রহ করে থাকে । মাটিগুলো সংগ্রহ করে ইটভাটাগুলো তা স্তূপাকারে জমা করে রাখে । কিছুদিন এভাবে স্তূপাকার করে মাটিগুলো ইটভাটাতে ফেলে রাখা হয় ।
পরবর্তীতে কিছুদিন পর ইটভাটার শ্রমিকেরা মাটিগুলোকে আবার কেটে নরম করে থাকে । কারণ ইট তৈরি করার জন্য মাটিকে খুব নরম এবং মোলায়েম করতে হয় ।
এই মাটিগুলোকে নরম করার জন্য ইটভাটাগুলো এক ধরনের মেশিন ব্যবহার করে থাকে যা পাগমিল মেশিন নামেও পরিচিত ।
মাটিকে একটি মাপের আকারে সাধারণত আয়তনঘনক আকারের ছাঁচে ঢেলে ভেজানোর মাধ্যমে কাঁচা ইট তৈরি করা হয়ে থাকে । পরবর্তীতে ভেজানো ইটগুলোকে হালকা রোদে শুকানো হয় । এবং সর্বশেষে এই ইটগুলোকে আগুনে পুড়িয়ে পাকা ইটে পরিণত করা হয় ।
ইট ভাটার লাইসেন্স ২০২২
ইট ভাটার ব্যবসা করতে হলে অবশ্যই আপনাকে লাইসেন্স তৈরি করে ইটভাটার ব্যবসা শুরু করতে হবে । তবে পূর্বের মত ইটভাটার লাইসেন্স করতে সরকারি অফিসগুলোতে যেতে হবেনা । আপনি ঘরে বসেই অনলাইনের মাধ্যমে ইটভাটার লাইসেন্সের জন্য এপ্লাই করতে পারবেন । আপনাদের সুবিধার্থে ইটভাটার লাইসেন্স এর ফর্ম লিংকটি দেওয়া হল ।
তবে ইটভাটার লাইসেন্স পেতে হলে আপনার কিছু কাগজপত্র প্রয়োজন হবে যেমন : ট্রেড লাইসেন্স , নাগরিক সনদপত্র , আয়কর সার্টিফিকেট , ভ্যাট সার্টিফিকেট , ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট , লে-আউট পল্যান , মৌজা ম্যাপ , খাজনার রশিদ , এবং ইউনিয়ন পরিষদের অনাপত্তি ।
কাগজপত্রগুলো থাকলে আপনি ইটভাটার লাইসেন্সটি সহজেই পাবেন ।
আরো পড়ুন ,,
ইট ভাটার লাইসেন্স ফি কত ?
ইটভাটার লাইসেন্স ফি হলো ৫০০ টাকা । তবে আপনি যদি ইট ভাটার লাইসেন্সটি পেয়ে যান সেক্ষেত্রে প্রতি বছর আপনাকে লাইসেন্সটি নবায়ন করতে হবে এবং ইটভাটার লাইসেন্স নবায়ন ফি হলো ৫০০ টাকা ।
শুধু তাই নয় প্রতিবছর ইটভাটার লাইসেন্স নবায়ন করার ক্ষেত্রে আপনাকে পরিবেশ অধিদপ্তরের নিকট থেকে ছাড়পত্র নিতে হবে । পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র প্রেক্ষিতেই আপনি পরবর্তী বছরের জন্য ইট ভাটার ব্যবসা করার অনুমতি পাবেন ।
ইট ভাটার পরিবেশ ছাড়পত্র পাওয়ার নিয়ম
ইটভাটার পরিবেশ ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য আপনাকে সর্বপ্রথম জেলা প্রশাসন বরাবর আবেদন করতে হবে । জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করলে তার সংশ্লিষ্ট উপজেলা নিবার্হী অফিসারের নিকট পাঠানো হবে । উপজেলা নির্বাহী অফিসারের প্রতিবেদন যদি সন্তোষজনক হয় তাহলে পরিবেশ অধিদপ্তরে তা পাঠানো হবে ।
এরপর পরিবেশ অধিদপ্তরের টিম সরেজমিনে পরিদর্শন করে ছাড়পত্র প্রদান করলে জেলা প্রশাসনের কার্যালয় থেকে আপনাকে ইটভাটার পরিবেশ ছাড়পত্র লাইসেন্স প্রদান করা হবে ।
লাইসেন্স গ্রহণের জন্য আপনার কিছু কাগজপত্র প্রয়োজন হবে যা ইতিমধ্যে উপরে বলা হয়েছে । তাই আর্টিকেলটি যদি মনোযোগ সরকারের করে না থাকেন তাহলে উপরের অংশ চেক করে দেখুন ।
ইটভাটার ব্যবসায় লাভ কেমন ?
ইট ভাটার ব্যবসা করে আপনি প্রতিবছর ৫০ – ৬০ লক্ষ টাকা র্পযন্ত আয় করতে পারবেন । তবে আয় কেমন করতে পারবেন তা নির্ভর করছে আপনার ইটের কোয়ালিটি , মার্কেটিং , বিক্রি , সাপ্লাই , তৈরী ইত্যাদির উপর ।
তাই মোটামুটি মূলধন বিনিয়োগ করে যদি সঠিকভাবে ইটভাটার ব্যবসাটি পরিচালনা করা যায় তাহলে আপনি বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আপনার ইটভাটার বিনিয়োগকৃত মূলধনটি ফিরে পাবেন ।
পরিবেষে – Finally
আজকের ইট ভাটার ব্যবসা আর্টিকেলটি আপনাদের সাথে একটি ইট ভাটা ব্যবসা কিভাবে শুরু করবেন তা সম্পর্কে আইডিয়া দেওয়া চেষ্টা করা হয়েছে ।
এরপরও আপনাদের মনে ইট ভাটা সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন থাকলে নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন । আমি চেষ্টা করবো সাহায্য করার । আমরা আমাদের এই ব্লগের মাধ্যমে বাংলাদেশের তরুণদের মনে উদ্যেক্তার বীজ বপন করে দিতে চাই ।
আমাদের আর্টিকেল বা লিখা ভালো লাগলে ফলো করতে পারেন আমাদের ফেসবুকে ।