অংশীদারি ব্যবসায় কি: চুক্তিবদ্ধ সম্পর্কের ভিত্তিতে একাধিক ব্যক্তি কর্তৃক গঠিত ও পরিচালিত ব্যবসায়কে অংশীদারি ব্যবসায় বলে।
একমালিকানা ব্যবসায়ের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে অধিক ব্যবসায় সুবিধা কাজে লাগানোর জন্য এরূপ ব্যবসায়ের উদ্ভব । যৌথ সামর্থ্যকে একত্রিত করে তুলনামূলকভাবে বৃহদায়তন ব্যবসায় গঠন ও পরিচালনা এর লক্ষ্য। আইন অনুযায়ী সাধারণ ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২০ জন ও ব্যাংকিং ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ জন সদস্য এতে থাকতে পারে । সাধারণভাবে এর অংশীদারদের দায় অসীম ।
অংশীদারি ব্যবসায়ের প্রকারভেদ -Classification of Partner
অংশীদারি ব্যবসায়ের সকল অংশীদার একইরূপ হবে এমন নয়। বিভিন্ন ধরনের অবস্থা ও সুযোগ-সুবিধার প্রত্যাশায় অনেকেই এরূপ ব্যবসায়ের অংশীদার হতে পারে । তাই বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ হতে অংশীদারদের বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায় ।
নিম্নে বিভিন্ন ধরনের অংশীদার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. সাধারণ বা সক্রিয় অংশীদার (General partner) : যে অংশীদার ব্যবসায়ে মূলধন বিনিয়োগ করে এবং সক্রিয়ভাবে ব্যবসায় পরিচালনায় অংশ নেয় তাকে সাধারণ বা সক্রিয় অংশীদার বলে । এরূপ অংশীদারের দায় সবসময়ই অসীম হয় এবং ব্যবসায়ের গঠন ও পরিচালনায় এরূপ অংশীদাররাই মুখ্য ভূমিকা পালন করে । এরূপ অংশীদারদের দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব অংশীদারি চুক্তিতে সাধারণত নির্দিষ্ট থাকে । অন্যথায় অংশীদারি আইনের বিধান অনুযায়ী তারা নির্দিষ্ট কর্তৃত্ব ভোগ করে ও দায়িত্ব পালনে বাধ্য থাকে।
২. নিষ্ক্রিয় বা ঘুমন্ত অংশীদার (Dormant or Sleeping partner)) : যে অংশীদার ব্যবসায়ে মূলধন বিনিয়োগ, করে, লাভ-ক্ষতিতে অংশগ্রহণ করে কিন্তু অধিকার থাকা সত্ত্বেও ব্যবসায় পরিচালনায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে না তাকে নিষ্ক্রিয় বা ঘুমন্ত অংশীদার বলে । এরূপ অংশীদারের দায়ও সক্রিয় অংশীদারের ন্যায় অসীম হয় ।
তবে এরূপ অংশীদার ব্যবসায় থেকে অবসর গ্রহণ করলে সক্রিয় অংশীদারের ন্যায় গণবিজ্ঞপ্তি (Public notice) দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না । কারণ তার অংশীদার হওয়ার বিষয়টি সাধারণ্যে জানা থাকে না । যে কারণে সে পরবর্তী সময়ে অবসর নিলে ব্যবসায়ের কোনো কাজের জন্য সে তৃতীয় পক্ষের নিকট দায়ী হয় না ।
৩. কর্মী অংশীদার (Working partner) : যে অংশীদার ব্যবসায়ে কোনো মূলধন বিনিয়োগ করে না শুধুমাত্র নিজস্ব শ্রম ও দক্ষতাকে সক্রিয়ভাবে নিয়োজিত রাখে তাকে কর্মী অংশীদার বলে । চুক্তি অনুযায়ী এরা অন্যান্য অংশীদারের ন্যায় ব্যবসায়ের লাভ-ক্ষতিতে অংশগ্রহণ করে এবং অসীম দায় বহনে বাধ্য থাকে ।
অবশ্য ব্যবসায় পরিচালনার জন্য এদেরকে নির্দিষ্ট হারে বেতন বা লাভের অংশ দেয়া হয় । সাধারণত ব্যবসায় পরিচালনায় যোগ্য কোনো ব্যক্তিকে এ ধরনের অংশীদার হিসেবে নেয়া হয়ে থাকে যাতে ব্যবসায় সুষ্ঠুভাবে চলতে ও অধিক মুনাফা অর্জন করতে সমর্থ হয় । এতে মূলধন বিনিয়োগকারী অংশীদাররা লাভবান হতে পারে ।
৪. নামমাত্র অংশীদার (Nominal partner) : যে অংশীদার চুক্তি অনুযায়ী লাভের অংশ অথবা নির্দিষ্ট বেতন বা অর্থের বিনিময়ে তার নামের সুনাম (Goodwill) অংশীদারি ব্যবসায়কে ব্যবহারের অনুমতি দেয় তাকে নামমাত্র অংশীদার বলে । এরূপ অংশীদার ব্যবসায়ে কোনো মূলধন বিনিয়োগ করে না এবং ব্যবসায় পরিচালনায়ও অংশ নেয় না কিন্তু সাধারণ্যে নিজেকে ব্যবসায়ের অংশীদার হিসেবে পরিচয় দেয় অথবা অন্যকে নিজের বিষয়ে এ ধরনের প্রচারের অনুমতি দিয়ে থাকে ।
তবে এরূপ অংশীদার অন্য অংশীদারের ন্যায় অসীম দায় বহন করে না। তৃতীয় পক্ষ যদি এরূপ অংশীদারকে অংশীদার মনে করে ব্যবসায়কে কোনো ঋণ দেয় এবং তা সে প্রমাণ করতে পারে তবে সে ঐ ঋণের জন্য সাধারণ অংশীদারের ন্যায় দায়ী হয়ে থাকে ।
৫. আপাতদৃষ্টিতে অংশীদার (Quasi partner) : যদি কোনো অংশীদার ব্যবসায় হতে অবসর গ্রহণের পরও ব্যবসায় হতে মূলধন উত্তোলন না করে বা তা ঋণ হিসেবে ব্যবসায়ে জমা রাখে সেক্ষেত্রে ঐ অংশীদারকে আপাতদৃষ্টিতে অংশীদার বলে । কার্যত এরূপ ব্যক্তি ব্যবসায়ের পাওনাদার; অংশীদার নয় ।
তবে কোনো সক্রিয় অংশীদার গণবিজ্ঞপ্তি না দিয়ে ব্যবসায়ে এভাবে থেকে গেলে এবং তৃতীয় পক্ষ তাকে অংশীদার মনে করে ব্যবসায়কে ঋণ দিলে বা লেনদেন করলে সেক্ষেত্রে উক্ত অবসর গ্রহণকারীকারী অংশীদার ঐ লেনদেনের জন তৃতীয় পক্ষের নিকট সাধারণ অংশীদারের ন্যায় দায়বদ্ধ হতে পারে ।
৬. সীমিত বা সীমাবদ্ধ অংশীদার (Limited partner) : চুক্তি অনুযায়ী বা আইনগত কারণে ব্যবসায়ের বহনে অনাগ্রহী হয়ে এবং কার্যত বিনিয়োগকারী হিসেবে সুবিধা অর্জনের নিমিত্তে অন্যান্য অংশীদারদের অনুমতিক্রমে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী নিজেকে সীমাবদ্ধ অংশীদার হিসেবে ঘোষণা করতে পারে।
এ ছাড়া অংশীদারদের সম্মতিক্রমে কোনো নাবালককে সুবিধা প্রদানের উদ্দেশ্যেও এরূপ অংশীদার হিসেবে গ্রহণ করা যায় । তাদের দায় প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত তাদের মূলধন পর্যন্ত সীমিত থাকে। আইন অনুযায়ী এরূপ অংশীদার ব্যবসায় পরিচালনায় অংশগ্রহণ করতে পারে না । কোনো অংশীদারি ব্যবসায়ে এক বা একাধিক সীমিত অংশীদার থাকলে তাকে সীমাবদ্ধ অংশীদারি ব্যবসায় (Limited partnership) বলে ।
৭. আচরণে অনুমিত অংশীদার (Partner by holding-out) : যদি কোনো ব্যক্তি ব্যবসায়ের অংশীদার না হয়েও কথা-বার্তা ও আচরণের দ্বারা নিজেকে অংশীদার হিসেবে পরিচয় দেয় তবে তাকে আচরণে অনুমিত অংশীদার বলে । অনেক সময় লক্ষণীয় যে, কোনো ব্যক্তি অংশীদারি ব্যবসায়ের এমন কাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকে যেখানে উক্ত কাজের স্বার্থে নিজকে অংশীদার হিসেবে পরিচয় দিলে সুবিধা হয় ।
সেক্ষেত্রে জেনে শুনে ব্যবসায় তার স্বার্থেই ব্যক্তির এ ধরনের পরিচয়কে মেনে নেয় এবং তা অস্বীকার করে না । এরূপ পরিস্থিতিতে ঐ ব্যক্তিকে আচরণে অনুমিত অংশীদার বলা যায় । কার্যত এরূপ ব্যক্তি ব্যবসায়ের কোনো অংশীদার নয় । তবে যদি কেউ তার এরূপ বলার বা লেখার কারণে তার অংশীদারিত্বের ওপর নির্ভর করে ব্যবসায়কে ঋণ দেয় বা চুক্তি করে তবে সেজন্য ঐ ব্যক্তির সাধারণ অংশীদারের ন্যায় দায় জন্মে ।
৮. প্রতিবন্ধ অংশীদার (Partner by estoppel) : যদি ব্যবসায় বা ব্যবসায়ের অংশীদারগণ কোনো ব্যক্তিকে ব্যবসায়ের অংশীদার হিসেবে পরিচয় দেয় এবং উক্ত ব্যক্তি তা জেনেও মৌনতা অবলম্বন করে তবে তাকে প্রতিবন্ধ অংশীদার বলে । নামমাত্র অংশীদারের সাথে এরূপ অংশীদারের পার্থক্য হলো নামমাত্র অংশীদার চুক্তির শর্তানুযায়ী নির্দিষ্ট স্বার্থের বিনিময়ে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে তার নাম ব্যবহারের অনুমতি দেয় কিন্তু এক্ষেত্রে তা দেয়া হয় না ।
এরূপ প্রচারণার ফলে তৃতীয় পক্ষ যদি উক্ত ব্যক্তির অংশীদার হওয়ার ওপর নির্ভর করে ব্যবসায়ের সাথে কোনো লেনদেন বা চুক্তি করে তবে সেজন্য এরূপ অংশীদার ঐ তৃতীয় পক্ষের নিকট সাধারণ অংশীদারের ন্যায় দায়বদ্ধ হয় ।
উল্লেখ্য, অংশীদারি ব্যবসায়ের অংশীদার হতে হলে কোনো ব্যক্তির অবশ্যই চুক্তি সম্পাদনের যোগ্যতা থাকা আবশ্যক । অবশ্য নাবালক অন্য অংশীদারদের সম্মতিক্রমে সীমিত অংশীদার হতে পারে । তবে পাগল, দেউলিয়া, সরকারি কর্মচারী, বিদেশী রাষ্ট্রদূত ও বিদেশী শত্রু আইন অনুযায়ী অংশীদার হতে পারে না । কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংঘও অংশীদার হওয়ার যোগ্যতা রাখে না ।
আরো পড়ুন :
➡️ বায়িং হাউজ ব্যবসার আইডিয়া ।
➡️১০টি সেরা কৃষি ব্যবসার আইডিয়া ।
নিয়মিত এডুকেশন সম্পর্কিত তথ্য পেতে যুক্ত থাকুন আমাদের ফেইসবুক পেইজের সাথে ।