অংশীদারি ব্যবসায়ের নিবন্ধন না করার ফলাফল

 

অংশীদারি ব্যবসায়ের নিবন্ধন না করার ফলাফল

নিম্মে আলোচনা করা হলো:

বাংলাদেশে বহাল ১৯৩২ সালের অংশীদারি আইনে এরূপ ব্যবসায়ের নিবন্ধনকে বাধ্যতামূলক করা হয়নি। র নিবন্ধনের ফলে একটি অংশীদারি ব্যবসায় আইনানুগভাবেই বেশ কিছু অতিরিক্ত সুবিধা ভোগ করে । 

নিবন্ধন না করার ফলাফলকে নিম্নোক্ত দু’ভাবে উপস্থাপন করা যায় :

 

(ক) প্রতিষ্ঠান বা অংশীদারগণ যে সকল অসুবিধার সম্মুখীন হয়

* চুক্তিজাত অধিকার আদায়ে বাধা : এরূপ ব্যবসায় নিবন্ধিত না হলে চুক্তিজাত অধিকার বহালের বিষয়ে অংশীদারি আইনের নিম্নোক্ত দু’টি ধারা অনুযায়ী বাধার সৃষ্টি হয় :

১. অপর অংশীদারদের বিরুদ্ধে মামলা : অংশীদারি ব্যবসায় নিবন্ধিত না হলে বা নিবন্ধন বইতে সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের নাম লেখা না থাকলে কোনো অংশীদার অপর কোনো অংশীদার বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চুক্তি হতে উদ্ভূত অধিকার আদায়ের জন্য মামলা করতে পারে না । [৬৯ (১) ধারা]।

ধরা যাক, মুনীর ও নীহার কর্তৃক একটা নিবন্ধিত অংশীদারি ব্যবসায় পরিচালনাকালে কাজল উক্ত ব্যবসায়ের অংশীদার হয় । কিন্তু নতুন চুক্তিপত্র ও কাজলের নাম নিবন্ধন করা হয়নি । পরে দেখা গেল, মুনীর ও নীহার কাজলকে তার ব্যবসায় পরিচালনায় অংশগ্রহণের ও হিসাব প্রাপ্তির অধিকার থকে বঞ্চিত করছে । এক্ষেত্রে নিবন্ধন বইতে কাজলের নাম না থাকায় সে উক্ত দু’জনের বিরূদ্ধে মামলা করতে পারবে না ।

২. তৃতীয় পক্ষের বিরুদ্ধে মামলা : অংশীদারি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন করা না হলে বা নিবন্ধন বইতে কোনো অংশীদারের নামোল্লেখ না থাকলে উক্ত অংশীদার প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিজাত অধিকার আদায়ের জন্য তৃতীয় পক্ষের বিরুদ্ধেও মোকদ্দমা করতে পারে না । [৬৯ (২) ধারা] ।

ধরা যাক, সুমন এণ্ড ব্রাদার্স একটা অনিবন্ধিত অংশীদারি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান । প্রতিষ্ঠানটি নির্দিষ্ট মূল্যে ছয় মাস পর্যন্ত সময়ের জন্য ফরমায়েশমাফিক পণ্য সরবরাহ পেতে মি. রবীনের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয় ।

 মি. রবীন তিন মাস পণ্য সরবরাহ করার পর পণ্য সরবরাহে অস্বীকৃতি জানায় । সুমন এণ্ড ব্রাদার্স অনিবন্ধিত অংশীদারি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান হওয়ায় মি. রবীনের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত প্রতিকার পাবে না ।

■ পাল্টা পাওনা দাবিতে বাধা : কোনো তৃতীয় পক্ষ প্রতিষ্ঠান বা অংশীদারের বিরুদ্ধে পাওনা আদায়ের জন্য মোকদ্দমা দায়ের করলে উক্ত অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান বাদীপক্ষের নিকট হতে নিজস্ব পাওনা অর্থের জন্য পাল্টf পাওনা দাবি করতে পারে না । [৬৯ (৩) ধারা]।

 

ধরা যাক, অঙ্কন ট্রেডার্স একটি অনিবন্ধিত অংশীদারি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান। মিসেস নাহার  উক্ত প্রতিষ্টানের নিকট মাল সরবরাহ বাবদ পঞ্চাশ হাজার টাকা পায়। অন্য একটা হিসাবে মিসেস নাহারের কাছ প্রতিষ্ঠানটির বিশ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে। 

যথাসময়ে অঙ্কন ট্রেডার্স পাওনা পরিশোধ না করায় মিসেস  নাহার উক্ত পঞ্চাশ হাজার টাকা পাওনা আদায়ের জন্য মামলা করে । প্রতিষ্ঠানটি তাদের পাওনা বিশ টাকা পাল্টা-পাওনা হিসেবে দাবি করে আদালতে ত্রিশ হাজার টাকা পরিশোধ করার অভিপ্রায় জানাই এক্ষেত্রে আদালত পাল্টা পাওনাকে আমলে না নিয়ে পঞ্চাশ হাজার টাকা পরিশোধেরই নির্দেশ দিবে। 

 

■ পাওনা আদায়ে বাধা : ১০০ টাকার অধিক কোনো পাওনা আদায়ের জন্য অংশীদারি প্রতিষ্ঠান পক্ষের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করতে পারে না । [৬৯ (৪) ধারা]।

 

ধরা যাক, বিশ্বাস এন্ড কোম্পানি একটা অনিবন্ধিত অংশীদারি প্রতিষ্ঠান।মি. স্বপনের কাছে তাদের ১  লক্ষ টাকা পাওনা অনেকদিন ধরে আদায় হচ্ছে না। এক্ষেত্রে ব্যবসায়টি নিবন্ধিত না হওয়ায় ব্যবসায় বা এর কোনো অংশীদার মি. স্বপনের বিরুদ্ধে মামলা করে ১০০ টাকার অতিরিক্ত অর্থ আদায় করতে পারবে না।

 

 (খ) নিবন্ধিত না হলেও অংশীদারদের যে সকল অধিকার বহাল থাকে:

 

■ বিলোপ সংক্রান্ত অধিকার : অংশীদারি ব্যবসায় নিবন্ধন করা না হলে সেক্ষেত্রে ব্যবসায় পরিচ যদিও কতিপয় সমস্যা দেখা দেয় তথাপিও এ ধরনের ব্যবসায় বিলোপ করার ক্ষেত্রে এবং বিলোপ এরপর  ব্যবসায়ের সম্পত্তিতে অংশীদারদের নিম্নোক্ত অধিকার থাকে :

 

১. অংশীদারগণ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের বিলোপসাধন ও বিলুপ্ত ব্যবসায়ের হিসাব সংক্রান্ত বিষয়ে যার দায়ের করতে পারে । [৬৯ (৩-ক) ধারা]। অর্থাৎ পূর্বের উদাহরণের কাজল প্রতিকার হিসেবে আদাল ব্যবসায় বিলোপের জন্য আবেদন করতে পারবে এবং বিলোপের পর হিসাব প্রাপ্তির জন্য মুমীন ও নীহারের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে ।

 

২. বিলুপ্ত ব্যবসায় হতে নিজ অংশ বা পাওনা দাবি করে মোকদ্দমা দায়ের করার অধিকার সকল অংশীদার থাকে । [৬৯ (৩ক) ধারা]।

 

৩. প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত না হলেও প্রতিষ্ঠান ভঙ্গের পর প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য অংশীদারগণ আদালতে মোকদ্দমা দায়ের করতে পারে। [৬৯ (৩-ক) ধারা]। অর্থাৎ পূর্বের উদাহরণের বিশ্বাস এ কোম্পানির অংশীদারগণ তাদের অংশীদারি বিলোপের পর মি. স্বপনের নিকট থেকে পাওনা আদায়ে জন্য মামলা করতে পারবে ।

 

■ দেউলিয়া অংশীদারের সম্পত্তি হতে পাওনা প্রাপ্তি : এরূপ প্রতিষ্ঠানের কোনো অংশীদার দেউলিয়া হয় অংশীদারগণ তার সম্পত্তি উদ্ধার ও তা হতে পাওনা উসুল করতে পারবে । [৬৯ (৩-খ) ধারা]।

 

■ ১০০ টাকার কম পাওনার জন্য মামলা : ১০০ টাকা পর্যন্ত দাবির জন্য তৃতীয় পক্ষের বিক্রয় আদালতে মোকদ্দমা দায়ের করা যায়। [৬৯(৪) ধারা]।

 

■ বিশ্বাসভঙ্গমূলক আচরণের জন্য মামলা : অংশীদারি আইনে অংশীদারদের মধ্যকার সম্পর্ককে পরম বিশ্বাসের সম্পর্ক নামে অভিহিত করা হয়। তাই কোনো অংশীদার এরূপ বিশ্বাসভঙ্গমূলক কোনো কাজ বা আচরণ করলে অন্যান্য অংশীদার তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারে।

যেমন, স্বাক্ষর জাল, ব্যবসায়ের নাম ভাঙ্গিয়ে নিজস্ব স্বার্থসিদ্ধি, সম্মিলিত সিদ্ধান্তের বাইরে কোনো কাজ করে অন্য অংশীদারদের দায় সৃষ্টি ।ক্ষেত্রে অংশীদারি ব্যবসায় নিবন্ধিত না হলেও উক্ত অংশীদারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা যায় ।

আরো পড়ুন :

➡️পেটেন্ট কি ? এবং পেটেন্টের ধারণা ।

➡️ট্রেড মার্ক কি /ট্রেডমার্ক কাকে বলে ?

➡️ট্রেডমার্ক নিবন্ধন পদ্ধতি / ট্রেডমার্ক করার নিয়ম

➡️কপিরাইট কি বা কপিরাইট কাকে বলে ? 

➡️বীমা কি – বীমা কাকে বলে এবং বীমা কত প্রকার ও কি কি ?

নিয়মিত এডুকেশন সম্পর্কিত তথ্য পেতে যুক্ত থাকুন আমাদের ফেইসবুক পেইজের সাথে ।

 

By Saifur Rahman Arif

আমি মোহাম্মাদ সাইফুর রহমান আরিফ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র । ব্যবস্থাপনার একজন ছাত্র হলেও বর্তমানে কিছুদিন যাবৎ আমি অনলাইনে লিখালিখি কাজের সাথে যুক্ত রয়েছি । এবং Goafta.com সাইটটির একজন আর্টিকেল রাইটার হিসাবে কাজ করছি ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *