অংশীদারি ব্যবসায়ের ধারনা ও অংশীদারি ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য

 

অংশীদারি ব্যবসায়ের ধারনা-Concept of Partnership Business

 

জনাব মারূফ ছোট্ট চালকল দিয়ে ব্যবসায় শুরু করেছিলেন। ব্যবসায়ে উন্নতি করেছেন। কিন্তু এখন পাশাপাশি অনেক উন্নতমানের নতুন চালকল বসে যাওয়ায় প্রতিযোগিতায় তার পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব হচ্ছে না।

 

স্বয়ংক্রিয় চালকল বসাতে অনেক টাকার প্রয়োজন । এছাড়া সেই মেশিনের জন্য ধানসংগ্রহ ও চাল বিক্রয়ে লোকবলেরও দরকার। তাই তিনি তার বন্ধুর উৎসাহী ছেলে সুমনকে চুক্তি করে ব্যবসায়ের অংশীদার বানিয়েছেন । এতে মূলধনের সংস্থান হয়েছে। সুমনের তৎপরতায় নতুন চাল কল ভালো চলছে ।প্রাচীনকাল থেকে অংশীদারি ব্যবসায়ের উৎপত্তি ঘটেছে কার্যত এভাবেই ।

 

চুক্তিবদ্ধ সম্পর্কের ভিত্তিতে একাধিক ব্যক্তি কর্তৃক গঠিত ও পরিচালিত ব্যবসায়কে অংশীদারি ব্যবসায় বলে । একমালিকানা ব্যবসায়ের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে অধিক ব্যবসায় সুবিধা কাজে লাগানোর জন্য এরূপ ব্যবসায়ের উদ্ভব । 

যৌথ সামর্থ্যকে একত্রিত করে তুলনামূলকভাবে বৃহদায়তন ব্যবসায় গঠন ও পরিচালনা এর লক্ষ্য। বাংলাদেশে বহাল ১৯৩২ সালের অংশীদারি আইনের ৪ ধারায় বলা হয়েছে যে, সকলের দ্বারা বা সকলের পক্ষে একজনের দ্বারা পরিচালিত ব্যবসায়ের মুনাফা নিজেদের মধ্যে বণ্টনের নিমিত্তে চুক্তিবদ্ধ ব্যক্তিবর্গ যে ব্যবসায় গঠন করে তাকে অংশীদারি ব্যবসায় বলে । 

আইন অনুযায়ী সাধারণ ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২০ জন ও ব্যাংকিং ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ জন সদস্য এতে থাকতে পারে ।

চুক্তিই অংশীদারি ব্যবসায়ের ভিত্তি । অর্থাৎ ব্যবসায় পরিচালনাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চুক্তিই এখানে গুরুত্বপূর্ণ। অংশীদারদের মধ্যে অন্য সম্পর্কও থাকতে পারে তবে ব্যবসায় পরিচালনায় তার গুরুত্ব কম । 

অংশীদারি আইনের ৫ ধারায় বলা হয়েছে যে, অংশীদারি সম্পর্ক চুক্তি হতে জন্মলাভ করে; সামাজিক বা উত্তরাধিকারীর বলে নয় হাবিব বক্স বনাম স্যামুয়েল ফিজ এন্ড কোম্পানি নামক মোকদ্দমায় দেখা যায়, পিতার উত্তরাধিকার সূত্রে একটা দোকান প্রাপ্ত হয়ে তিন ভাই তা মিলে-মিশে চালায় এবং লাভ হলে ভাগ করে নেয় । 

পরবর্তীতে এ ব্যবসায়টি অংশীদারি ব্যবসায় কি না প্রশ্ন উঠলে আদালত রায় দেয়, এটি অংশীদারি ব্যবসায় নয় । কারণ চুক্তিবদ্ধ সম্পর্ক এখানে মুখ্য নয় । বাংলাদেশে ১৯৩২ সালের অংশীদারি আইন অনুযায়ী এ ধরনের ব্যবসায় নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে ।

 

অংশীদারি ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য-Features of Partnership Business

 

বর্তমান প্রেক্ষাপটে অংশীদারি ব্যবসায় একটি প্রাচীন ধরনের ব্যবসায় সংগঠন । যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ধরনের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের এমন কিছু বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান যা একে অন্য ব্যবসায় হতে স্বতন্ত্র রূপ দান করেছে।

নিম্নে এ সকল বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা হলো :

 

১. একাধিক সদস্য (Plurality of members) : কমপক্ষে এ ধরনের ব্যবসায়ে দু’জন সদস্য (মালিক) থাকতে হয় । সাধারণ ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২০ (বিশ) জন এবং ব্যাংকিং ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ (দশ) জন সদস্য এতে থাকতে পারে ।

 

২. চুক্তিবদ্ধ সম্পর্ক (Contractual relation): চুক্তিই অংশীদারি ব্যবসায়ের ভিত্তি। চুক্তির আলোকে অংশীদারদের মধ্যে যে সম্পর্কের সৃষ্টি হয় তাকেই চুক্তিবদ্ধ সম্পর্ক বলে । এরূপ সম্পর্কের আলোকেই এ ব্যবসায় গঠিত ও পরিচালিত হয় । 

অংশীদারদের মধ্যে অন্য সম্পর্কও থাকতে পারে তবে ব্যবসায় পরিচালনায় সেই সম্পর্ক মুখ্য বিবেচিত হয় না । ব্যবসায়ের কাজে বা নিজেদের মধ্যকার সম্পর্ক রক্ষা বা দায়-অধিকার প্রতিষ্ঠার কাজে চুক্তিবদ্ধ সম্পর্কই মুখ্য বিবেচিত হয় । এরূপ চুক্তি মৌখিক, লিখিত বা লিখিত ও নিবন্ধিত যেকোনো ধরনের হতে পারে।

৩. মূলধন সরবরাহ (Supply of capital): এ ব্যবসায়ের অংশীদারগণ চুক্তিতে বর্ণিত নিয়মানুযায়ী মূলধন সরবরাহ করে । অবশ্য চুক্তিতে উল্লেখ থাকলে কেউ মূলধন বিনিয়োগ ছাড়াও অংশীদার হতে পারে । … প্রতিষ্ঠানের মালিকানা নির্ধারণের বেলায় অংশীদারদের সরবরাহকৃত মূলধন অনুযায়ী তা নির্ধারিত হয়ে

থাকে ।

৪. পরিচালনা (Administration) : এ ব্যবসায় সকল অংশীদার কর্তৃক বা সকলের পক্ষে একজনের দ্বারা পরিচালিত হতে পারে । [৪ (ধারা)]। অর্থাৎ ব্যবসায়ের সকল সাধারণ অংশীদার (যাদের দায় অসীম) এরূপ ব্যবসায়ের পরিচালনায় অংশ নিতে পারার অধিকারী । সীমিত দায়সম্পন্ন কোনো অংশীদার অবশ্য এরূপ ব্যবসায় পরিচালনায় অংশ নিতে পারে না ।

৫. লাভ-ক্ষতি বণ্টন (Sharing of profit & loss) : চুক্তি অনুযায়ী এক্ষেত্রে অংশীদারগণের মধ্যে লাভ- ক্ষতি বণ্টিত হয় । চুক্তিপত্রে এ সম্পর্কে কোনো উল্লেখ না থাকলে মূলধনের পরিমাণ আর যা ই থাকুক না কেন সেক্ষেত্রে সমান হারে অংশীদারদের মধ্যে লাভ-ক্ষতি বণ্টন করা হয়ে থাকে ।

 

৬. পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস (Mutual trust and confidence) : পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের মাধ্যমে এ ব্যবসায় যেমনি স্থাপিত হয় তেমনিভাবে ব্যবসায়ের সফলতার জন্যও এরূপ আস্থা বহাল থাকা আবশ্যক । আইনানুযায়ী এর অংশীদারদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও সম্বিশ্বাসের সম্পর্ক স্থাপিত হয় ।

 ৭. পারস্পরিক প্রতিনিধিত্ব (Mutual Agency) : আইনানুযায়ী এ ব্যবসায়ের অংশীদারদের মধ্যে পারস্পরিক প্রতিনিধিত্বের সম্পর্ক স্থাপিত হয়। অর্থাৎ এক্ষেত্রে প্রত্যেকেই একে অন্যের প্রতিনিধি ও মুখ্য ব্যক্তি হিসেবে গণ্য। ফলে ব্যবসায়ের পক্ষে প্রত্যেকের কৃতকার্যের জন্য অপর অংশীদার দায়বদ্ধ হয় । তবে ব্যবসায়ের প্রকৃতির সাথে সম্পর্কিত নয় এমন লেনদেনে প্রতিনিধিত্বের বিধান প্রযোজ্য নয় ।

৮. আইনগত সত্তার অনুপস্থিতি (Absense of legal entity) : এ ব্যবসায় নিবন্ধিত হোক বা না হোক এর কোনো আইনগত সত্তার সৃষ্টি হয় না। ফলে ব্যবসায় নিজস্ব নামে পরিচিত ও পরিচালিত হতে পারে না । এর সকল লেনদেন ও চুক্তি অংশীদারদের সাথে ব্যক্তিগতভাবে সম্পাদন করা হয়েছে বলে ধরা হয় ।

৯. স্থায়িত্বের অনিশ্চয়তা (Uncertainty of stability) : পৃথক আইনগত সত্তা না থাকায় এ ব্যবসায়ের স্থায়িত্বের বিষয়টি বিশেষভাবে অংশীদারদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভরশীল । এ ছাড়াও অংশীদারদের কারও মৃত্যু, ভুল বোঝাবুঝি ইত্যাদি নানান কারণে এরূপ ব্যবসায়ের সহজে বিলোপ ঘটে ।

 

আরো পড়ুন :

➡️পেটেন্ট কি ? এবং পেটেন্টের ধারণা ।

➡️ট্রেড মার্ক কি /ট্রেডমার্ক কাকে বলে ?

➡️সমবায় সমিতি কি ?

➡️সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির গঠনতন্ত্র ।

নিয়মিত এডুকেশন সম্পর্কিত তথ্য পেতে যুক্ত থাকুন আমাদের ফেইসবুক পেইজের সাথে ।

 

By Saifur Rahman Arif

আমি মোহাম্মাদ সাইফুর রহমান আরিফ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র । ব্যবস্থাপনার একজন ছাত্র হলেও বর্তমানে কিছুদিন যাবৎ আমি অনলাইনে লিখালিখি কাজের সাথে যুক্ত রয়েছি । এবং Goafta.com সাইটটির একজন আর্টিকেল রাইটার হিসাবে কাজ করছি ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *